Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাসপাতালে একাকী ঈদ

রোগী ও ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের পরিবারের জন্য চাপা কষ্ট ও দুশ্চিন্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২০, ১১:০২ এএম | আপডেট : ১১:০৩ এএম, ২৬ মে, ২০২০

প্রতি বছরই ঈদ আসে। স্বাভাবিকভাবেই চলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। ঈদের দিন বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতালেই রোগীদের জন্য ঈদের আমেজ সৃষ্টি করা হয়। হাসপাতালগুলোতে সাধারণত সবার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়; রোগী, স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মিলেমিশে দিনটি কাটান। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী অন্য সব কিছুর মতো এবারের ঈদের দিনের হাসপাতালের দৃশ্যপটেও এনেছে পরিবর্তন। করোনার চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালগুলোতে রোগীরা রয়েছেন আলাদা; ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীরাও সুরক্ষা বিধি মেনে তাদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। বাতিল করা হয়েছে তাদের সব ধরণের ছুটি। আর তাই এবারের ঈদ ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আক্রান্তদের চিকিৎসায় দেশের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও পরিবার থেকে দূরে রয়েছেন; সবার জন্যই বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও সবাই একাকী। ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন যাত্রাবাড়ী এলাকার মিলন খান। সোমবার ঈদের দিন মোবাইলে কথা হয় তার সঙ্গে তিনি বলেন, ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে থাকলে তো খারাপ লাগবেই, দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। অন্য রোগ নিয়ে হাসপাতালে থাকলেও পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা যায়, কিন্তু এই রোগ তো সবার কাছ থেকেই দূরে সরিয়ে দিল।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ল্যাবে দুই মাস ধরে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইব্রাহিম। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর তাকে এখানে বদলি করা হয়। তিনি বলেন, স্ত্রী, দুই সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে এসেছেন তিনি। ঢাকায় আসার পরই তার সন্তানের জন্ম হয়েছে। মাঝখানে ছুটিতে একবার বাড়ি গিয়ে সন্তানকে দেখে এসেছেন তিনি।

ঈদ কেমন কাটল জানতে চাইলে আবেগী হয়ে ইব্রাহিম বলেন, ছোট বাচ্চা, স্ত্রী সন্তান রেখে ডিউটি করতে কেমন লাগে বোঝেনই তো! বাড়িতে মা অসুস্থ, বাবা বয়স্ক মানুষ। আমি ছাড়া তো তাদের কেউ নাই। এই সময় আমি বাড়ির বাইরে পড়ে আছি, খারাপ তো লাগে খুব। চাপা কষ্ট আছে তারপরও করোনা পেশেন্টের জন্য কাজ করছি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি-এটাও আনন্দের, গর্বের বিষয়।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, ঈদের দিন ১০৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগী, চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুপুরে এবং রাতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য ঈদে তো চিকিৎসকদের রোস্টার অনুযায়ী কাজ করতে হয়। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই। সবারই রোস্টার বাতিল করা হয়েছে। ডিউটি করছি সবাই। ঈদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগী সবার জন্য কিছু উপহারের ব্যবস্থা করেছি।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোহমা¥দ আতিয়ার রহমান বলেন, ঈদের দিন সাধারণত হাসপাতাল ফাঁকা থাকে, একেবারে খারাপ অবস্থা না হলে মানুষ হাসপাতালে আসে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী সব দিনকে এক করে দিয়েছে। অন্যান্য দিনের সঙ্গে এবারের ঈদের দিনের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। চিকিৎসক ও রোগীদের কিছু ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

করোনার চিকিৎসায় নিবেদিত মুগদা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী নিলুফার বেগম। পরিবারের সঙ্গে সাভারে বসবাস করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে আছেন।

তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাকেই তো সব সামলাতে হয়। কিন্তু এবার আমিই বাড়ির বাইরে। এমন অবস্থা কারও সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ নেই। আমি হাসপাতালে কিন্তু মন পড়ে আছে বাড়িতে- এটা খুব কষ্টের বিষয়। এমন ঈদের দিন আসবে কখনো ভাবতেই পারিনি।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়ে পরিবারের আরও দু’জনসহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ মে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে চেষ্টা করি কীভাবে মানুষকে তথ্য দেওয়া যায়। সারাদিন কর্মব্যস্ত দিন কাটাই। কিন্তু এই ঈদের দিন আমি শয্যাশয়ী। অবস্থা খারাপ ছিল, তবে এখন একটু ভালো লাগছে। হাসপাতালে তাকা অন্যদের এবং পরিবারের বাকিদের জন্যও খুব টেনশন হচ্ছে।

সেমাবার পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫ হাজার ৫৮৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মারা গেছেন ৫০১ জন।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের হিসাবে, রোববার পর্যন্ত ৮৩০ জন চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭শ’র বেশি বলে জানিয়েছেন বিডিএফ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ