Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনা চিকিৎসায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২০, ১২:১২ এএম

সাধারণ ছুটি শেষ হয়েছে। অফিস খুলেছে। কলকারখানা, দোকানপাট খুলেছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ চালু হয়েছে। লকডাউন এভাবে তুলে দেয়ায় বা শিথিল করায় রাজধানীসহ সারাদেশ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বসেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমনকি কোথাও কোথাও যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে। দু’মাসেরও বেশি সময় দেশ কার্যত অচলাবস্থায় ছিল। করোনাভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার ফলে সাধারণ ছুটিসহ সব কিছু বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়, নির্দেশনা দেয়া হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। করোনা সংক্রমণ রোধে এসব ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত হলেও আমাদের দেশে এসব নির্দেশ ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। করোনা পরীক্ষারও দ্রুত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা তো আরো পরের কথা। এ প্রেক্ষাপটে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখনো পাচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত রোববার, অফিস খোলার প্রথম দিনে, ২ হাজার ৫৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এটি একদিনে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪০ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ। যখন প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তখন সবকিছু একসঙ্গে খুলে দেয়া ও চালু করা উচিৎ ও সঙ্গত হয়েছে কিনা, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
সর্বত্র কর্মপ্রবাহের বিস্তার, মানুষের সমাগম, ভীড় ও যাতায়াত, সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা লংঘন এবং স্বাস্থ্যবিধি বেতোয়াক্কা করার বাস্তবতা করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়িয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশংকা। প্রতিদিন পর্যাপ্ত সংখ্যায় পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার আয়োজন ও সুযোগ এখনো অপ্রতুল। এমতাবস্থায়, চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য কিছু বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত চিকিৎসার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাতে করোনা রোগীদের ১৫ শতাংশের চিকিৎসা দেয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। করোনায় আক্রান্তদের ৮৫ শতাংশই ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতাল ভীতি ও চিকিৎসা না পাওয়ার বাস্তবতাই এই ঘরে চিকিৎসা নেয়ার কারণ। ঘরেই যদি চিকিৎসাসেবা শতভাগ পাওয়া সম্ভবপর হতো, তাহলে বলা বাহুল্য, হাসপাতালের কোনো প্রয়োজনই হতো না। হাসপাতালের কাজ ঘরে হয় না। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তরফে মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ থাকা রোগীদের বাড়িতে বিচ্ছিন্ন থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে; কিন্তু উপসর্গ চরমে ওঠা রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার বিকল্প নেই। হাসপাতালে যদি সেরকম ব্যবস্থা না থাকে কিংবা হাসপাতাল যদি যথাযথ আচরণ ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন না করে তবে রোগীর বিপদের অবধি থাকে না। এরকম অনেক ঘটনা ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সবকিছু খুলে দেয়া ও চালু করার প্রেক্ষিতে চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় অনেক রোগীই চিকিৎসার সুযোগ পাবে না এবং তাদের কারো কারো দু।খজনক পরিণতি ঘটবে।
আমরা লক্ষ করছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এক প্রকার যথেচ্ছাচার চলছে। ওষুধ প্রয়োগ বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে যেমন পারছে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে এবং অনেকেই তা অনুসরণ করছে। এসব ওষুধ ব্যবহারে কারো হয়তো উপকার হচ্ছে; আখেরে ভালো হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কারো জন্য হচ্ছে হিতে বিপরীত। যেহেতু করোনাভাইরাস রোগের কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি, তাই ইতোপূর্বেকার ভাইরাসজনিত রোগের ওষুধ এতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোনো কোনো ওষুধের ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপত্র খুবই জরুরি। কোন্ কোন্ ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে, তার একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা থাকা দরকার। ইচ্ছে মতো ওষুধ প্রয়োগ করার এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ হওয়া উচিৎ। প্লাজমা থেরাপী নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখছি আমরা। প্লাজমা থেরাপি ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত। করোনাভাইরাস রোগ নিরাময়ে কোনো কোনো দেশে প্লাজমা থেরাপির ব্যবহার হতে দেখা গেছে। আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। এর ফলাফল মিশ্র। ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর প্লাজমা থেরাপি দেয়া হলে তাতে সুফল পাওয়া গেছে। পক্ষান্তরে খুলনায় প্লাজমা থেরাপি দেয়া একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্লাজমা থেরাপি দেয়ার ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ সহায়তা নেয়া উচিৎ। মোটকথা, ওষুধ ও থেরাপির ক্ষেত্রে একটি কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সমন্বিত ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা করোনা প্রতিরোধ ও নিরাময়ে অধিকতর সাফল্য এনে দিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন