Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফ্লয়েড হত্যায় ফুঁসছেন খেলোয়াড়রা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২০, ১২:১১ এএম

সম্প্রতি মিনেপোলিসে পুলিশি হেফাজতে সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ বাস্কেটবল তারকা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে পড়েছে মার্কিনমুলুক। সাদা বর্ণের পুলিশের হাতে তিনি খুন হওয়ায় প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন কালো মানুষগুলো। টানা ছয় দিন ধরে সেখানে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। ক্রমেই তা সারাবিশ্বের সমর্থন পাচ্ছে।
গেল সপ্তাহের সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর মিনেপোলিসে সিগারেট কিনতে যান ফ্লয়েড। তার কাছে জালটাকা আছে সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভ‚ত এ খেলোয়াড়ের গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এর পর প্রতিবাদে ফেটে পড়েন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বিদ্যমান বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষী মনোসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষগুলো। এর জেরে শভিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার এবং সেকেন্ড-ডিগ্রি মানুষ হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু গায়ের রঙ কালো হওয়ায় দোষ না থাকা সত্তে¡ও ফ্লয়েডকে নিমর্মভাবে হত্যা করেছে সাদা ‘চামড়ার‘ পুলিশ সদস্য শভিন। এতে তথাকথিত সবচেয়ে সভ্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখনও বর্ণ ও জাতিবৈষম্য বিরাজমান তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
সেই ‘যুদ্ধে’ শামিল হচ্ছেন তারকা খেলোয়াড়রাও। এরই মধ্যে এ নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন টেনিস তারকা কোকো গফ। ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাবেক এনবিএ চ্যাম্পিয়ন স্টিভেন জ্যাকসন। ধিক্কার জানিয়েছেন দেশটির বাস্কেটবল তারকা লস অ্যাঞ্জেলসের ফরোয়ার্ড লেব্রন জেমস, মহাতারকা মাইকেল জর্ডানরা। এক টুইটে রোববার জেমস লেখেন- ‘আমেরিকা কেন আমাদের ভালোবাসে না!!!???’ বর্বর এই হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার চেয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তরুণ ইংলিশ ফরোয়ার্ড মার্কাস রাশফোর্ড তো বিশে^র উপর এক কালিমাই লেপে দিয়েছেন এই বলে, ‘বিশ্ব এখন আগের চেয়ে আরো বেশি বৈশম্যপূর্ণ’। যাদের সবাই কালো গোত্রের।
এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন দেশটির টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস। সদ্য নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি হৃদয়বিদারক ভিডিও পোস্ট করেছেন নারী এককে ২৩টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। তাতে দেখা যায়, জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছে এক আফ্রিকান-আমেরিকান শিশু (মেয়ে)। ডুকরে ডুকরে কেঁদে সে বলছে, কীভাবে তাদের সঙ্গে আলাদা (বাজে) আচরণ করেন শেতাঙ্গরা। যার ক্যাপশনে মার্কিন কৃষ্ণকলি লিখেছেন, ‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি কতটা বিমর্ষ ও ব্যথিত তা বলা এবং প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু আমার কথাগুলোর সন্ধান পেয়েছে সে। সার্বিক অর্থে আমাদের সবার অবস্থায় অনুভব করেছে ও এবং ব্যাখ্যা দিয়ে দুর্দশা তুলে ধরেছে। আমাদের অনেকে বোবা হয়ে গেছে... শব্দ হারিয়ে ফেলেছে... আমি কে তা জানি। এটি একটি দুঃসময়।’ তিনি বলেন, আমরা প্রার্থনা করতে জানি। সুতরাং নিহত, আহত ও অত্যাচারিতদের জন্য আমি সবাইকে ঈশ্বরের কৃপা চাইতে বলব। এ রকম নৃশংস ঘটনা এই প্রথম নয়; এটি কেবল নতুনভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। আমি প্রচুর কষ্ট পেয়েছি। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
ছাত্রজীবনে বন্ধুদের কাছে তুখোড় ফুটবলার ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদ হয়েছে পাডেরবর্ন-বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ম্যাচে। গতপরশু রাতেও ম্যাচটিতে ৬-১ গোলে জয় পায় বরুশিয়া। জয়ী দলের হয়ে হ্যাটট্রিক করা জেডন স্যানচো ও আরেক গোলদাতা আশরাফ হাকিমির জার্সির নিচের গেঞ্জিতে লেখা ছিল ‘জাস্টিস ফর জর্জ ফ্লয়েড’। এর আগের ম্যাচে ইউনিয়ন বার্লিনের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানের জয়ে গোলের পর এক হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে প্রতিবাদ করেন বরুশিয়া মনশেনগ্লডবাখের ফরাসি তরুণ ফরোয়োর্ড মার্কাস থুরাম। আগের দিন ভার্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারা ম্যাচে শালকের হয়ে ‘জাস্টিস ফর জর্জ’ লেখা বাহুবন্ধনী পরে খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্ডার ওয়েস্টন ম্যককেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লয়েড-হত্যা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ