Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

স্ত্রী-সন্তানরা লাশটি দেখলোও না: ভাইদেরও ফোন বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২০, ১২:২১ পিএম

আমরা সবাইকে প্রস্তুত করে রাজপাশায় পৌছাই রাত ১১ঃ৩০ এ। তখন পর্যন্ত লাশের গোসল হয়নি। কেউ কাছেও আসেনি। লাশটি ঘরের বাইরে আনার মতোও কেউ ছিলো না। হতভাগ্যের ঘরে তখন তার স্ত্রী, এক কন্যা, আরেক পুত্র ছিলো। অন্য আরেক ছেলে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে। সে বাড়িতে পৌছলেই মৃতব্যক্তির স্ত্রী এবং সন্তানেরা আমাদের জানান তার কোভিডের কোন লক্ষণ ছিলো না। কিন্তু লাশটি গোসলের জন্য বাইরে নিয়ে আসার জন্য হাতটি পর্যন্ত বাড়ালোনা কেউ। লাশ বাইরে আনলো ওই মেডিকেল টিমের তুহিন, আসাসসহ কয়েকজন, যাদের আমরা পিপিই পড়িয়ে দেই।


গোসলের সময় আড়াল দেয়ার জন্য একটি বিছানার চাদর থেকে শুরু করে মাটিতে নামানোর জন্য একটি গামছা পর্যন্ত ব্যাবস্থা করতে অনেকবার চেচামেচি করা লেগেছে আমাদের।

রাত ১ টার দিকে গোসল শেষ করে এসিল্যান্ড তৌহিদের ইমামতিতে আমি, ইউএইচএফপিও জহিরুল ভাই, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টুলু সাহেবসহ মেডিকেল টিমের সদস্যসহ কয়েকজন আমরা জানাজা সম্পন্ন করি। লাশ গোসল করানো, দাফন করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। আপন ভাইদেরও ফোন বন্ধ।

কাদামাটির উঠান, জঙ্গল ঠেলে রাত দেড়টার দিকে মৃত সোহরাব হাওলাদার সাহেবকে নিয়ে যাই তার ঘরের কাছে। সেখানে গিয়ে তার একভাইকে পাই। যদিও কবরে কিন্তু সেই গোরখোদক মনিরসহ আর দুইজন নামলো যারা আত্মীয় না। রাত দুটোয় বাড়ি ফিরলাম, মনে হলো শরীর অসম্ভব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়বো। এখন পৌনে সাতটা বাজে ঘুম আসছে না।

লাশ থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বলে ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে। একদম স্যাম্পল নেয়া বা পোস্টমর্টেম এর সময় কেউ এক্সপোজ হতে পারে। লাশের চেয়ে একজন জীবিত কোভিড প্যাশেন্ট সংক্রমণ ছড়াবে বেশি, যিনি রাস্তা ঘাট বাজারে থাকতে পারেন। লাশের প্রতি এই ভয়টা যদি রাস্তায় থাকতো হয়তো সংক্রমণ আরো কিছু কম হতো। কোন হতভাগ্যের যেন এরকম না হয়।

ধন্যবাদ ইউএইচএফপিও ডাঃ জহিরুল ভাই, ছোট ভাই এসিল্যান্ড তৌহিদ, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু সাহেব। ওই রাতে এরকম ভাবে একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব না নিলে লাশটি আজও পরে থাকতো। এখনো পরেই থাকতো ওই ঘরেই। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ, মেডিকেল টিমের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ।

যে ব্যক্তিটি মারা গেলেন তিনি কিন্তু কনফার্মড কোভিড পেশেন্ট না। সন্দেহেই এই অবস্থা। আমাদের হয়তো এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আরও। তবে আশা করি এরকমটি আর না ঘটুক। সবাই ভালো থাকুক। আবার ভোর হোক। নির্ঘুম রাতের ভোর না, পরিতৃপ্ত ঘুমের স্নিগ্ধ ভোর হোক।" "এতো অস্বস্তি ঘুমে আর খুব কম সময়েই হয়েছে। রাত দুটোয় বাসায় ফিরেছি এখন ৬ টা বাজে শুধু এপাশ ওপাশই করলাম। কেন? আমার তো এরকম হয় না। ঘুমে তো কম্প্রোমাইজ নেই। আবেগের তো জায়গা নেই।''

করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ দাফন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইউএনও নাজমুল আলম নবীন। আজ সকালে ফেসবুকে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি এখানে তুলে ধরা হলো।



 

Show all comments
  • সান্তানুর রহমান খোকন ১০ জুন, ২০২০, ২:৩৫ পিএম says : 0
    করোনা মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কেয়ামতের মাঠের পরিবেশ কেমন হতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • জীবন কৃষ্ণ দাস ১০ জুন, ২০২০, ৯:৪১ পিএম says : 0
    আমার মতে ওনারা যেহেতু লাশের সামনেই আসলনা তাহলে তার সব সম্পতি এতিমখানায় দান করে দেওয়া হোক। ওদের এই সম্পত্তির ওপর হক নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • আল্লাহ এমন করুন মৃত্যু আর কেউকে দিও না।আমাদের মাফ করে দাও,
    Total Reply(0) Reply
  • Shahabuddin ১১ জুন, ২০২০, ৬:৪২ পিএম says : 0
    I think so for children no resources it is better not to leave,but the child must be given the right education,Thanks
    Total Reply(0) Reply
  • RASEL MIAH ১৩ জুন, ২০২০, ৮:৩৭ এএম says : 0
    Corona virus sobay k janan dilo ja ai prtibite kew koro noi
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ