Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আনোয়ারায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি

২ মাসে ৭ খুন, আত্মহত্যা ১, ধর্ষণ ২ ও অর্ধশত মারামারির ঘটনায় আহত শতাধিক

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ৫:৫১ পিএম

চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খুন খারাবির বেড়েই চলেছে। গত ২ মাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এধরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ঘটনা জায়গা জমির বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনায় ৭জন খুন, ১ জন আত্মহত্যা, ২ কিশোরী ধর্ষণ,এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার, ৩ জনকে গণ পিটুনিসহ শতাধিক লোক আহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সবার জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, আনোয়ারায় গত ২ মাসে খুন খারাবি, ধর্ষণ ও মারামারি ব্যাপক আকারে রূপধারণ করে। ইতি মধ্যে উপজেলার ২ জন চেয়ারম্যানের বাড়ি ও ইউনিয়ন পরিষদে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গত এপ্রিলে হত্যা-আত্মহত্যায় খুন হয় ৩ জন। তৎমধ্যে ৩১ মার্চ বসত ভিটা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ আবদুর রাজ্জাক (৬০)কে খুন করে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় ৯ জন আহত হয়। ৮ এপ্রিল পাওনা টাকার জন্য দোকানীর হাতে খুন হয় বরুমচড়ার প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ আবদুল আলীম (৫৫), একই মাসে ২৫ এপ্রিল নিখুজের ৩ দিন পর বাড়ীর পাশে গোবরের স্তুপ থেকে লাশ উদ্ধার করে চাতরী ইউনিয়নের উত্তর চাতরী এলাকার বৃদ্ধা ছখিনা বেগম (৬০)এর, অপরদিকে পারিবারিক কলহের জেরে ২১ এপ্রিল রহস্যজনক ভাবে আত্মহত্যা করে বারখাইনের হাজীগাঁও এলাকার গৃহবধু জয়নাব বেগম (২৫)। মে মাসে ঈদের আগে ও পরের দিনে স্কুল শিক্ষার্থীসহ খুন হয় ২ জন। ২৪ মে পরৈকোডা তালসরা গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতি পক্ষের হামলায় খুন হয় মো. ইয়াছিন (২৬)। এঘটনায় ইয়াছিনের মা মাছুমা খাতুনও গুরুত্বর আহত হয়। অপর দিকে ২৭ মে বসত ভিটা নিয়ে প্রতি পক্ষের হামলায় খুন হয় স্কুল শিক্ষার্থী মাসুদুল আলম সিকদার(১৬)। ঘটনার পর হত্যাকারিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী স্থানীয় বন্দর কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মানববন্দনও করে। গত ২ জুন হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা গ্রামে পারিবকারিক কলহে রহস্যজনক ভাবে খুন হয় গৃহবধু সেলিনা আকতার (২৩)। গত ১৯ মে রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামের জাফর মিস্ত্রিও সাথে পার্শবর্তি আহমদ নুররের পরিবারের বসত ভিটা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় জাফর মিস্ত্রির ছেলে মিজান (২৫) গুরুত্বও আহত হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার দুপুরে মারাযায়। এঘটনায় গতবৃহস্পতিবার জায়নাজা শেষে হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এছাড়া সাম্প্রতি গত ৭ জুন একই দিনে পৃথক দুই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বটতলী ইউনিয়নের আইরমঙ্গল এলাকায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণের পর নির্যাতিতা কিশোরি তার অভিভাবকদের ঘটনা প্রকাশ করলে তারা ধর্ষক জাকির হোসেন (২২) ও তার পিতা মাতাকে আসামী করে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে একটি মহল প্রশাসনের বিভিন্ন জাগায় তদবিরও করে বলে খবর পাওয়া যায়। একই দিনে বারখাইন ইউনিয়নের শিলাইগড়া এলাকা থেকে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গেলে ৬ দিন পর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার লালদিয়ার চর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে পরিবারের লোকজন পুলিশের সহায়তায় ধর্ষক বাঁশখালী উপজেলার প্রেমাশিয়া এলাকার আবু ছালেকের পুত্র মো. সেলিম (২২ )কে গ্রেপ্তার ও কিশোরিটিকে উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশত মারামারি ও গনপিটুনির ঘটনাও ঘটেছে। এসব মারামারিতে শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকায় মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর ঘটনায় ঈমামের উপর হামলা করলে ঈমামের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২ মে পরৈকোডা ইউনিয়নের ভিংরোলে প্রকাশ্যে ইয়াবা সেবনের সময় নাজিম উদ্দিন (২৭),শাহ নেওয়াজ প্রকাশ ইফতেকার (২৬) ওমো. রফিক (৩৬) নামে ৩ মাদকসেবীকে স্থানীয় জনগন গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। একই দিনে বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক এলাকায় আবদুল গণির বসত ঘরে প্রতিপক্ষ হামলা ও ভাঙচুর করলে ৮ জন আহত হয়। ১৫ মে বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি বিরোধের জের ধরে স্থানীয়দের হামলায় ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরসহ দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়। বিষয়টি সাম্প্রদায়ীক রুপও ধারণ করে। ১৬ মে বারশত ইউনিয়নের চালিতাতলী এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় স্থানীয় প্রবাসী মো. ইউশা আনোয়ারের বাড়ী ঘর ভাঙচুর করে। পরে তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানা রিমু (২৩) বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। ১৮ মে গুয়াপঞ্চক আমুর পাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতি পক্ষের হামলায় মৃত নুর মোহাম্মদের স্ত্রীসহ একই পরিবারের ৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া ঈদের ২ দিন পর বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনের বাড়ীতে হামলা ও ভাঙচুর করে কিচু উশৃঙ্খল লোকজন।
হত্যা, হামলা,ধর্ষণ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চুরির ঘটনাও ঘটে। গত ৭ জুন চাতরী ডুমুরিয়া গ্রামের কৃষক মো. বাবুলের ৩ টি মহিষ চুরি হয়, পরে বোয়ালখালী থানায় চোরসহ মহিষ গুলো ধরা পড়ে।

এদিকে প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও প্রকৃত আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যর্থ হয়। আর এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বেড়ে যায়।
এব্যাপারে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, ভূমি বিরোধের জের ধরে আনোয়ারা থানায় বেশ কয়েকটি মারামারির ঘটনা ঘটলেও আইন শৃঙ্খলার উন্নয়নে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ