Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরবর্তী সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ড. আব্দুল হাই তালুকদার : আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে। তিনি সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও নীতি নির্ধারক। তিনি যখন বিএনপির নিঃশেষ হবার কথা বলেন তখন বিয়ষটি আমাদের ভাবিত করে। সরকার কি আরও অধিক দমন পীড়ন ও নির্যাতন করে বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেবার কথা ভাবছে? বিএনপি নামক রাজনৈতিক সংগঠনটি বহু ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করেই টিকে আছে ও খুব শক্তভাবে টিকে আছে। ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রভৃতি বিএনপির মূলমন্ত্র। প্রেসিডেন্ট জিয়া এদেশের গণমানুষের নৃতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক উভয় পরিচয় সমুন্নত রেখেই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানারকম কূট কৌশল ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে টিকে আছে। এ দলের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃতি দেখে স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সময় নানামুখী অপতৎপরতা চালায়। বিএনপির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ও ভীত হয়ে শুরু হয় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশ প্রেম, সততা ও কর্মদক্ষতায় মানুষ আকৃষ্ট হয়। তার দল ও ব্যক্তি জিয়া গণমানুষের হৃদয়ের কুঠুরিতে স্থান লাভ করে। এতে বিএনপি নামক রাজনৈতিক সংগঠনটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। তিনি বাকশালের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। মানুষ হৃত গৌরব মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। দেশ উন্নয়ন অগ্রগতির পথে অগ্রসর হতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বাড়িয়ে তিনি বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশের সাথে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে ও অর্থনৈতিক কর্মকা- বেগবান হয়। জিয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও মানবিক কর্মকা-ে ভীত হয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে এই মহান নেতাকে হত্যা করে। তার যানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণ ও তাদের হৃদয়বিদায়ী আহাজারি তার প্রতি গভীর ভালোবাসার নিদর্শন।
প্র্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল বিএনপি এবার শেষ হবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ও প্রেসিডেন্ট জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরী বেগম খালেদা জিয়া শক্ত হাতে দলের হাল ধরায় বিএনপির অগ্রগতি থেমে থাকেনি। নয় বছর এরশাদ শাহীর শাসন বিএনপিকে নিঃশেষ করতে পারেনি। সামরিক শাসক এরশাদ একটি দলের সাথে আপোষ করে দীর্ঘ নয় বছর তার শাসন অব্যাহত রাখে। কিন্তু এরশাদের পাতানো নির্বাচনে বেগম জিয়ার অংশগ্রহণ না করে রাজপথে অবস্থান নেন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলেও বেগম জিয়া নির্বাচন বয়কট করে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম অব্যহত রাখেন। জনতার চাপে আওয়ামী লীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এরশাদ বেকায়দায় পড়ে ১৯৮৮ সালে রব সাহেবের দলকে নিয়ে আরেকটি নির্বাচন করেন। প্রবল জনতার অসন্তোষ, ঘৃণা ও অসহযোগিতা এরশাদের শাসনের ভীতকে নড়বড়ে করে দেয়। বেগমজিয়ার দৃঢ় মনোবল ও আপোসহীন নেতৃত্ব ও ছাত্র জনতার প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এরশাদ শাহীর পতনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে ও গণতন্ত্র মুক্তি পায়। দীর্ঘ নয় বছরে বেগম জিয়ার দলের বড় বড় নেতাকর্মীরা দল ত্যাগ করেন। নেতা ও কর্মী শূন্য অবস্থায় বেগম জিয়া অকূল পাথারে সাঁতার কাটতে থাকেন। তবে তিনি কখোনই হতাশ হননি। এদেশের মানুষের উপর ছিল তার অগাধ বিশ্বাস। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গর্বভরে বলেছিলেন বেগম জিয়ার দল ১০টি আসনও পাবে না। সকল রকম দেশী- বিদেশী আঁচ অনুমান ও পূর্বাভাস মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বিএনপি বিজয় লাভ করে।
বিএনপিকে ভাঙা ও বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে নানারকম নিন্দা কুৎসা ও দুর্নাম রটিয়ে ইমেজ সংকটে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তারেক রহমানকে ভিলেন বানাতে দুর্নীতির নানারকম আজগুবি ও কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে এই সম্প্রচার শুরু হয়। তারেক রহমানের ধৈর্য ও সহ্যশক্তি ছিল পাহাড়সম। তিনি কখনো কারও বিরুদ্ধে কোন মানহানি মামলা করেননি। এটি হয়েছিল তার জন্য কাল। ১/১১ এর অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার সেনাসমর্থিত হয়ে বিএনপি ও তারেক রহমানের পেছনে লাগে। তারা তারেক, কোকো, বেগম জিয়া ও বিএনপির অনেক বড় বড় নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করে। তারেক ও কোকোর উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। অত্যাচার নির্যাতনে তারেক রহমানের প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক বন্দি হন। এরপর কোকোও বেগম জিয়াকে বন্দি করা হয়। তারেক ও কোকো দৈহিক নির্যাতনে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক মুক্তি পান। এরপর কোকো ও ১১ সেপ্টেম্বর বেগম জিয়া মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে তারেক ও কোকো চিকিৎসার জন্য লন্ডন ও সিঙ্গাপুর যান। সেনা সমর্থিত অবৈধ মঈন ফখরুদ্দিনের সরকার তারেক ও কোকোকে এত নির্যাতন করে যে, তারেকের পিঠদাঁড়ার হাড় ভেঙে যায় ও কোকো স্থায়ী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই নির্যাতনের রেশ বয়ে বেড়াতে বেড়াতে কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মৃত্যু মুখে পতিত হন। আল্লাহর অশেষ কৃপায় বিএনপির ভবিষ্যত কা-ারী তারেক রহমান কোনরকমে বেঁচে আছেন। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা দিয়ে তার দেশে ফেরার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে কোন মামলায় আদালতে প্রমাণ করা যায়নি। অরাজনৈতিক ব্যক্তি আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধেও অনেক মামলা দিয়ে তার দেশে ফেরার পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। বিদেশ বিভুঁইএ আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে থাকা অবস্থায় কোকো মারা যায়। বেগম জিয়া ছেলে সন্তান ও নাতি-নাতনীদের ছেড়ে একা নিঃসঙ্গ অবস্থায় দেশে থেকে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের বিরুদ্ধে করা ১/১১ পরবর্তী সরকারে করা সাড়ে সাত হাজার মামলা সরকারি দল নির্বাহী আদেশে উঠিয়ে নেয় কিন্তু বেগম জিয়া, তার দুই ছেলে ও বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি মামলাও তুলে নেয়া হয়নি। বরং নতুন করে হাজার হাজার মামলা দিয়ে বিএনপি নেত্রী, তার ছেলেদের ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নাস্তানাবুদ করা হচ্ছে। বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেবার শত চেষ্টা ও কৌশল অব্যাহত রয়েছে। তাদের উপর চলছে অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন। রিমান্ডের নামে নেতাকর্মীদের উপর চলছে অত্যাচারের স্টিমরোলার। মামলা, হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে অবলীলায়।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বিএনপিকে দুর্বল ও নিঃশেষ করতে সরকার নানারকম অতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্দোলনের ফসল ফখরুদ্দীন, মঈনউদ্দিন সরকার ওয়ান-ইলেভেনে বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ গত সাত বছর ধরে বিএনপিকে দুর্বল করতে যাবতীয় কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। তবে সুখের বিষয় আপোসহীন নেত্রীর ইস্পাত কঠিন মনোবল ও সঠিক দিকনির্দেশনায় শত অত্যাচার, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র ও কূট কৌশলের মধ্যেও বিএনপি টিকে আছে। দুর্নীতির মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েও সরকারি দল বিএনপি ও তার নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। কোন বক্ততা বিবৃতি দিতে শুরু করলেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যে, বেগম জিয়া ও বিএনপির দুর্নীতি বক্তৃতায় আসবেই। অর্থাৎ বিএনপি প্রধান টার্গেট ও বেগম জিয়া যেন চক্ষুশুল। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের গল্প বক্তৃতা-বিবৃতিতে অবধারিতভাবে উঠে আসবে। কিন্তু সরকারি দল কখনোই বলবে না যে, তাদের শাসনে দুর্নীতি এত ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল যে, শেষ বছরে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। আওয়ামী লীগের আমলে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের বিশাল ফোঁড়ার ক্ষত শুকাতে বিএনপির পাঁচ বছর লেগে যায়। আমরা জানি একটি বড় ক্ষত সহজে শুকায় না। এটি শুকাতে অনেক সময় লাগে ও দাগ থেকেই যায়। আওয়ামী লীগ আমলে সৃষ্ট দুর্নীতির বড় ক্ষত বেগম জিয়া তার শাসনামলে শক্ত হাতে সারানোর চেষ্টা করেন ও সফল হন। বেগম জিয়ার দেখানো পথে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে উন্নতি করে ২০১৪ সালে ১৪তম স্থান লাভ করে। বর্তমানে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ও সর্বগ্রাহী রূপ লাভ করায় ২০১৫ সালে একধাপ নেমে ১৩তম স্থান লাভ করে। দেশের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্থনীতি উন্নয়নের পথে ধাবমান হলেও অনুন্নয়নশীল গণতন্ত্র দেশের টেকসই উন্নয়নের পথে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। মেগা প্রকল্পগুলোর ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধি দেশের মানুষের উপর বাড়তি ট্যাক্সের বোঝা চাপাচ্ছে। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির সাথে অস্বাভাবিক হারে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যায় ১০টি মেগা প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির দাবিকে জোরালো করেছে। মি. সিনহা অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখা ও তাতে সই দেয়া অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলেছেন। এতে সরকারি দল দারুণ ক্ষুব্ধ যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য বিবৃতিতে। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সংসদে পর্যন্ত বক্তৃতায় ঝড় উঠেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে নানারকম আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ ও বিদ্রুপ করে টকশোগুলোতে মন্তব্য করছেন যা রীতিমত আদালত অবমাননার সামিল। বিচারপতি সিনহা অত্যন্ত বিজ্ঞ মানুষ। আইনের ব্যাখ্যা দেবার কর্তৃপক্ষ সুপ্রিমকোর্ট। তিনি তার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
সরকার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে পাকাপোক্ত করতে চলেছে। মানুষের অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ বলেছে, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশে ভিন্নমত প্রকাশ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ ব্লগার ও বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। আদালত অবমাননায় মামলা ও বিভিন্নরকম অস্পষ্ট মামলায় নাগরিকদের আক্রমণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্রমেই কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছে। নিরাপত্তা বাহিনী রাজনীতিকদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলা দায়ের করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও সরকার তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ মানবাধিকার সংস্থার উপরোক্ত প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন বলা যায়। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা রাব্বিকে এসআই মাসুদ পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। ঢাকা সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মী পরিদর্শক বিকাশ দাসকে একইভাবে নির্যাতন করা হয়। তাদের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে। পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে, যা রীতিমত উদ্বেগজনক। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয় না। হাইকোর্ট আদেশ দিলেও সরকার সে আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নেয়। এ সুযোগ পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অকাতরে হাজার হাজার বানোয়াট ও কল্পিত মামলা দিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্য চালাচ্ছে। এভাবে মামলা-হামলা অত্যাচার, নির্যাতন করে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দিয়ে তাদেরকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিতাড়ন করে ফাঁকা মাঠে গোল করার স্বপ্নে বিভোর সরকার।
বিএনপি মহাসচিবসহ অসংখ্য বড় বড় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঝুলছে হাজার হাজার মামলা। কথা বললেই মামলা-হামলার শিকার হয়ে নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়া হচ্ছেন। জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্টে দিনাতপাত করছেন অনেকে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবার পর আরো এক বা একাধিক মামলায় জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে মামলা-হামলা অব্যাহত রেখে বিএনপিকে দুর্বল করে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চলছে। বেগম জিয়ার উপর অব্যাহতভাবে মামলা দিয়েও সরকার খান্ত হয়নি। সম্প্রতি যুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে একটি মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহী মামলা দায়ের করা করা হয়েছে। মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বেগম জিয়াকে কোনভাবে রাজনীতি থেকে সরাতে পারলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবেÑএরূপ একটি কল্পনাপ্রসূত ধারণা থেকেই হয়তো মামলা করা হয়েছে যা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ, বিদ্রুপ ও মামলা-হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে এরূপ মন্তব্য করায় বেগম জিয়া কোন অপরাধ করেছেন বলে আমরা মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নির্ণয়ে কয়েকটি কমিটি হয়েছে। শেখ সাহেব নিজেও একটি কমিটি করেছিলেন। বিভিন্ন জরিপ ও দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা যায়। অথচ স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে যেসব বীরসন্তানরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সংখ্যা নির্ণয় রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বেগম জিয়া সেই দায়িত্বটির কথা স্মরণ করে দিয়ে শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা দানের আহ্বান জানিয়েছেন। আগে হয়নি বলে কখনোই হবে না এরূপ দাবি অগ্রহণযোগ্য, যেমন অগ্রহণযোগ্য বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা মামলা। গত সাত বছর ধরে হাজার হাজার মামলা-হামলা, গুম-খুন, অপহরণ, অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেফতার-নিপীড়ন, জেলজুলুম মোকাবেলা করে বিএনপি ও বেগম জিয়ার অগুনতি নেতাকর্মী পিছপা হননি। হার না মানা লড়াকু সৈনিকরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়ে যাচ্ছেন ও সংগ্রাম থেকে সরে যাননি। অত্যাচার-নির্যাতন ও অপকৌশলে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত বিএনপি নামক সংগঠনটি নিঃশেষ করা সম্ভব হবে না। যদিও সময়ের পরিক্রমায় উত্থান-পতন থাকে। ইতিহাস তার জীবন্ত সাক্ষী।
য় লেখক : প্রফেসর, দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ৃি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরবর্তী সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ