Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িয়ানা ও রায়েরহাটে জমে উঠেছে পেয়ারার হাট

প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও হিমাগার

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস মিজানুল ইসলাম, বানারীপাড়া (বরিশাল) থেকে
বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু আপেল খ্যাত মৌসুমী ফল বানারীপাড়া উপজেলায় জমে উঠেছে রায়েরহাটে পেয়ারার হাট। শুধু বানারীপাড়া উপজেলায় নয় সর্ব বৃহৎ পেয়ারার মোকাম স্বরুপকাঠির আট ঘর কুড়িয়ানার বাজার। বানারীপাড়ার ও স্বরুপকাঠীর উপজেলার নরেরকাঠি, আলতা, বঙ্কুরা, কাঁচাবালিয়া, গাভা, বাস্তুকাঠি, সৈয়দকাঠি, ইন্দ্রের হাওলাসহ পার্শ¦বর্তী আটঘর-কুড়িয়ানা, কুঠারকাঠি, ধলহার, আন্দাকুল, আদমকাঠি, আতা, মাদ্রা, পূর্ব জলাবাড়ী, জৌসার থেকেও পেয়ারার বাগানের মালিকরা নৌকায় পেয়ারা নিয়ে সকাল ৮টা মধ্যে কুড়িয়ানা ও রায়েরহাটে আসে এবং সকাল ১০টার মধ্যে হাট পেয়ারাশূন্য হয়ে পড়ে। এ হাটে বিক্রি হয় ওই সমস্ত জায়গা থেকে আসা টসটসে কাঁচা ও পাকা পেয়ারা। স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন্ জেলা ও উপজেলায় বিক্রি হয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পেয়ারা। বাজারজাতের জন্য বাক্সবন্দি করে এ পেয়ারা ট্রলার, লঞ্চ, ট্রাকে ঢাকা, কুমিল্লা, নোযাখালী, সিলেট, চাঁদপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাঘেরহাট, নাটোর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা এই পেয়ারা পাইকারি বিক্রি করে। কথিত আছে ৫টি আপেলে যে পরিমাণ ভিটামিন আছে তা একটিমাত্র পেয়ারায় সেই পুষ্টিগুণ আছে। আপেলের তুলনায় এই পুষ্টিকর ফল দামে অনেকটা সস্তা ও সহজলভ্য। এ হাটে এ বছর উৎপাদনের প্রথম দিকে প্রতি মণ ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে পেয়ারা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন পেয়ারা চাষি ও বিক্রেতারা। তারা আরো বলেন, ভালো পেয়ারা হলে প্রতিমণ ৮শ’ টাকায় বিক্রি করা যায়। কৃষক নির্মল হাওলাদার বলেন, তিনি তিন একর জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। এই তিন একর জমিতে পেয়ারা চাষ করতে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে যদি পেয়ারার দাম থাকে তাহলে তিনি সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করেন। তিনি আরো জানান, এক বিঘা জায়গায় পেয়ারার বাগান করতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পেয়ারা চাষি দিপঙ্কর রায় বলেন, গত ক’বছর ধরে পেয়ারায় কালোছিটা বা এনথ্রাক্স রোগে আকান্ত হয়েছিল। এ বছর এনথ্রাক্সে পেয়ারা আক্রান্ত হয়নি। অনেক কৃষকই পেয়ারার এনথ্রাক্স বালাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে ‘নোইন’ নামক বালাইনাশক ব্যাবহার করায় ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও  সরকারি কিংবা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান কোনো আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পেয়ারা চাষিরা পেয়ারা সংরক্ষণ করতে পারছে না। জেলী বা এ জাতীয় খাবার তৈরির প্রধান কাঁচামাল এ পেয়ারা। কিন্তু দ্রুত পচনশীল পেয়ারা দীর্ঘদিন সংক্ষণ করা যায় না। বছরের আষাঢ়-ভাদ্র মাস পেয়ারার মৌসুম। পেয়ারা চাষিরা বলেন, রাজশাহীর আম সংরক্ষণের মতো পেয়ারার সংরক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করতে পারলে পেয়ারাও হতে পারে একটি লাভজনক ফলের ব্যবসা। এ থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যদি উন্নতমানের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে তাহলে বানারীপাড়া কিংবা কুড়িয়ানায়ও পেয়ারাভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে পারে। ফলের মধ্যে একমাত্র বরিশাল অঞ্চলের বানারীপাড়া ও কুড়িয়ানার পেয়ারাই শুধু ফরমালিনমুক্ত। এই পেয়ারায় কোনো কেমিক্যাল বা ফরমালিন দেয়া হয় না। প্রতিদিনই পেয়ারা গাছ থেকে তুলে প্রতিদিনই বিক্রি করা হয়ে থাকে। এখানকার পেয়ারা চাষিদের একটাই দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সুন্দর ব্যবস্থাপনা করা। অনেক পেয়ারা চাষি বলেন, সরকার যদি এব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে পেয়ারাভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুড়িয়ানা ও রায়েরহাটে জমে উঠেছে পেয়ারার হাট
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ