Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে মধ্যবিত্তরা হচ্ছে নতুন গরিব : নতুন চাকরি পাওয়া লটারী জেতার মত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২০, ৯:৪৬ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে চারদিকে শূণ্যতা বিরাজ করছে। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে খাদ্যের জন্য পরিবারে পরিবারে সংকট প্রকট হচ্ছে।
এই সময়ে ভারতে চাকরি হারিয়েছেন কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত৷ তবু তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার৷

লকডাউনের ফলে কর্মহীন হয়ে মুম্বইয়ের রাস্তায় সবজি বিক্রি করছেন বলিউডের অভিনেতা জাভেদ হায়দার৷ করোনার ফলে ক্রিকেট মাঠে বল গড়াচ্ছে না৷ লিগ বাতিল৷ জেলায় খেলা হচ্ছে না৷ পারিশ্রমিক দিতে পারছে না ক্লাব৷ তাই ইস্টবেঙ্গলের উঠতি ক্রিকেটার মিনাজুর রহমান চাষ করতে শুরু করেছেন৷
মধ্যপ্রদেশে তিরিশ বছর ধরে কাজ করার পর একটি অন্যতম প্রধান ভারতীয় সংস্থার দুই উচ্চপদস্থ অফিসার ধীরেন্দ্র মিশ্র ও বিজয় সাভারকরকে বলা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজে ইস্তফা না দিলে ছাঁটাই করা হবে৷ তারা ভারতের শ্রম দফতর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন৷ কোনো ফল হয়নি৷

এরা সকলেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ৷ করোনালকডাউনের ফলে হঠাৎ চাকরি বা রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ করোনাকালে নতুন চাকরি পাওয়াটা লটারি জেতার মতোই মহার্ঘ৷ সেটাই বা ক'জনের ভাগ্যে জোটে! আর তাদের পাশে সরকারও দাঁড়ায়নি৷ যেসব চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত তাদের কর্মসংস্থানটা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন, তাদের বেতন কমেছে বেশ খানিকটা৷ ফ্ল্যাট বা গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলের লোনের টাকা পরিশোধ করে কীভাবে সংসার চালানো যায় সেটাই তাদের প্রথম ও প্রধান চিন্তা৷ জাভেদ, মিনাজুর, ধীরেন্দ্র বা বিজয় হলেন এই বিপুল মধ্যবিত্ত শ্রেণির কয়েকজন প্রতিনিধি, যারা হঠাৎ কর্মসংস্থান হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এবং তাদের পাশে ভারতীয় সরকার নেই৷

যারা সরকারি কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, তাদের কিছু হয়নি৷ কিন্তু যারা বেসরকারি খাতে চাকরি করেন, বিপাকে পড়েছেন তারা৷ হয় বেতন কমেছে, না হয় চাকরি গিয়েছে৷

সরকার শুধু গরিব এবং বিত্তবান কারখানার মালিকদের নিয়ে চিন্তিত৷ লকডাউনের পর গরিবদের জন্য ভারতে প্রচুর ঘোষণা হয়েছে৷ হওয়া উচিতও৷ হাতে কাজ নেই, কবে কাজ আসবে, তার নিশ্চয়তা নেই, এই অবস্থায় সরকার পাশে না দাঁড়ালে তো তাদের না খেয়ে মরতে হবে৷ ফলে নরেন্দ্র মোদী যখন লকডাউনের পর ২৯ কোটিরও বেশি জনধন অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দেন, তখন সকলে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তারপর গরিবদের জন্য বিনা পয়সায় চাল-গম এখন নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হবে৷ সেই রেশন মাঝপথে চুরি না হয়ে যদি গরিবদের কাছে পৌঁছায়, তাহলে দেশের ৮০ কোটি লোক ভাত বা রুটি খেয়ে অন্তত বাঁচতে পারবেন৷ কৃষকরা আগে থেকেই বছরে ছয় হাজার টাকা করে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন৷

বিত্তবানরাও সরকারের সুবিধা পেয়েছেন৷ যাদের কারখানা আছে, তারা কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন৷ তার জন্য জামিনের দরকার নেই৷ অন্তত ঘুরে দাঁড়ানোর একটা বিকল্প তো তাদের সামনে খোলা থাকল৷ কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, যিনি চাকরি হারিয়েছেন, তার জন্য কী রইল? একরাশ হতাশা, দিনগত পাপক্ষয়ের জন্য বাড়তি সংগ্রাম এবং মধ্যবিত্ত থেকে পিছলে গিয়ে গরিব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা৷

জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী একটা টুইট করে বলেছিলেন,''সরকার যদি এখনই অর্থনীতিতে টাকা ঢালতে শুরু না করে, তা হলে গরিবরা নিশ্চিহ্ন হবে, মধ্যবিত্তরা হবে নতুন গরিব, আর ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা দেশকে কিনে নেবে৷'' রাহুলের কথায় সরকার অবশ্য কান দেয় না৷ তাকে হামেশাই 'রাহুলবাবা' বা 'পাপ্পু' বলে বিদ্রুপ করা হয়৷ কিন্তু তার একটা কথার সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা একমত৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা অংশ কাজ হারিয়ে গরিব হয়ে যেতে পারেন৷ ডয়চে ভেলে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ