Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যা আরো বাড়ছে

অব্যাহত নদী ভাঙন : এবার দেশের ২৩ জেলা বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবার অন্তত ২৩ থেকে ২৪টি জেলা বন্যা কবলিত হবে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গতকাল বলা হয়েছে মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীসমূহের পানি কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। এতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এসময় উত্তরাঞ্চলের এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক আবহাওয়া মডেলের তথ্য অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, এবার দেশের ২৩ জেলা বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ১১ জুলাই হতে এসব জেলায় বন্যা দেখা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ-খবর রাখছেন, নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
এসময় মন্ত্রী জানান, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সিলেট বিভাগসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, চাঁদপুর, পাবনাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বন্যার্ত জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে বন্যার্ত জেলাগুলোর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হতে পারে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই দেশের ১২ জেলা বন্যা কবলিত। এসব জেলার সঙ্গে আরও যেসব জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব জেলার প্রশাসনকে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। বাঁধ ভেঙে যাতে বন্যার পানি ফসলি জমি ও লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

এদিকে গত দু’দিন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বন্যার পানি কমছে। তবে পানি কমলেও তীব্র নদীভাঙনের কারণে অনেকে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন। মেঘনার ভাঙনে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকির মুখে। যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জ সদরে বাঁধের ৭০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়া দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ছড়াতে শুরু করেছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানাধরনের পানিবাহিত রোগ।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। অপরদিকে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি ধীরে কমতে শুরু করলেও নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

চাঁদপুরে মেঘনার ভাঙনে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে কয়েকটি স্থানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের পুরানবাজার হরিসভা এলাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঝুঁকি এড়াতে জিওব্যাগ ভর্তি বালি ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের জন্যে প্রস্তাবিত ৪৩০ কোটি টাকার প্রকল্প গত মার্চ মাসে স্থগিত হয়ে গেছে। পাউবো প্রকৌশলী জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার করা হয়নি। একটি বাঁধ পাঁচ বা দশ বছর পর পর সংস্কার করতে হয়। কিন্তু তা করা হয়নি।

সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে যমুনা নদীর পানির প্রবল স্রোতে একটি বাঁধের ৭০ মিটার নদীতে ধসে গেছে। এ কারণে বাঁধ অভ্যন্তরের পাচঠাকুরী এলাকার প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীনের আশঙ্কায় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এনায়েতপুরের ঘাটাবাড়ি ও পাকুরতলায় যমুনার ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। পাউবো থেকে সেখানে অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভাঙন কোনভাবেই থামছে না। থেমে থেমে ভাঙনে মানুষজন ক্রমশ বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। বাঁধের ওপরে আশ্রিত গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে বন্যা কবলিত শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এছাড়া কালিহাতি ও নাগরপুর উপজেলায়ও বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। ধরলা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পিছন দিক এবং খেলার মাঠের কিছু অংশ নদী গর্ভে চলে গেছে। পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জামালপুর জেলায় নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৪০০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার সাতটি উপজেলার মোট ৪৯টি ইউনিয়নে প্রায় চার লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। পাবনা জেলায় পানি কমলেও ভাঙন তীব্র হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষি জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙনও তীব্র হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধেও আছড়ে পড়ছে পদ্মার ঢেউ।

 



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১০ জুলাই, ২০২০, ৫:৩৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারত দায়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১০ জুলাই, ২০২০, ৫:৩৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারত দায়ী। ভারতকে দাঁত ভেংগে দেওয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ