Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবার জন্য উন্মুক্ত সোফিয়ার দরজা

মসজিদে রূপান্তর তুরস্কের অধিকার : এরদোগান গণহত্যার বিচারে বসনিয়ার পাশে থাকবে আঙ্কারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম

তুরস্কে বাইজেন্টাইন যুগের স্মৃতিস্তম্ভ হাইয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্তে কয়েকটি দেশ যে নিন্দা জানিয়েছে, শনিবার তা প্রত্যাখান করেছেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তিনি বলেছেন, এটি তার দেশের ‘সার্বভৌম অধিকার’ ও জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে। এদিন তিনি বসনিয়ার মুসলিমে গণহত্যায় নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দেন।

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হাইয়া সোফিয়া আগামী ২৪ জুলাই থেকে নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেয়া হবে বলে গত শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছেন এরদোগান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে সমালোচকরা বলছেন যে, এরদোগান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছেন। অতীতেও তিনি এই ঐতিহাসিক ভবনটিকে মসজিদে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন সময়ে মত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে সেখানে গিয়ে কুরআন থেকে একটি আয়াত তেলাওয়াত করেন। শনিবার ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এরদোগান বলেন, ‘যারা নিজ দেশে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন না...তারা তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার ব্যবহার করার ইচ্ছাকে আক্রমণ করেন।’ তিনি জানান, ২৪ জুলাই থেকে সেখানে নামাজ আদায় করা যাবে। তবে সবার প্রার্থনার উপযোগী করে তুলতে ছয় মাস সময় লাগবে। মসজিদে পরিণত হলেও এটি সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্য সব মসজিদের মতই হাইয়া সোফিয়ার দুয়ার স্থানীয় বা বিদেশি, মুসলিম বা অমুসলিম, সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে।’

পাশাপাশি, এদিন বসনিয়ার স্রেব্রেনিসা ও হার্জেগোভেনিয়ায় মুসলিম গণহত্যার ২৫তম বার্ষিকীর স্মরণ করে এরদোগান বলেন, ‘আমরা কখনও আমাদের শহিদদের ভুলব না। স্রেব্রেনিসার গণহত্যার কথা আমরা কখনও ভুলব না। হত্যাকান্ডে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবে তুরস্ক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপে এখন আরও বেশি ইসলামবিদ্বেষ তৈরি হয়েছে, যা ইউরোপের মুসলিমদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিতায় ফেলে দেয়।’

শুক্রবার তুরস্কের অনেক মুসলিম হাইয়া সোফিয়ার সামনে সমবেত হন। নতুন সিদ্ধান্ত জানার পর তারা স্থাপনার বাইরে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে, এই সিদ্ধান্তে ইউনেস্কো, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানিয়েছে। মসজিদে রূপান্তরের বিরোধীতা আগে থেকে করে আসছিল অর্থডক্স খ্রিস্টানরা। তুরস্কের সঙ্গে গ্রিসের সম্পর্কের আরেক দফা অবনতি ঘটারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ কারণে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস এরদোয়ানের সিদ্ধান্তটির কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করেন এটি তাদের সবার জন্যই ক্ষোভের। এই সিদ্ধান্তে শুধু গ্রিসের সঙ্গে নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনেস্কো এবং গোটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।

রাশিয়ার সংসদের উচ্চ কক্ষের উপ-প্রধান ভøাদিমির জাবারোভ তুরস্ক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এটিকে মসজিদে রূপান্তর মুসলিম বিশ্বের জন্য কোন কিছু বয়ে আনবে না, এর মাধ্যমে দেশগুলোর কোন ঐক্য তৈরি হবে না, বরং উলটো দিকে তাদের সংঘাতের পথে ঠেলে দিল। তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে হতাশামূলক বলছে যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, তুরস্কের সরকার হাইয়া সোফিয়াকে সব দর্শানার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছে। সেখানে কারো প্রবেশেই যাতে বাধা তৈরি না হয় সে বিষয়ে কি করা হবে যুক্তরাষ্ট্র সেই পরিকল্পনা জানার অপেক্ষায় আছে। এর আগে গত সপ্তাহে তুরস্ককে এমন সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহবান জানিয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষন হাইয়া সোফিয়া প্রথমে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ক্যাথেড্রাল হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। তবে ১৪৫৩ সালে ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মেহমুদ কনস্টান্টিনোপল জয় করার পরে একে মসজিদে রূপান্তর করেন। আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৩৫ সালে। এরপর থেকে তুরষ্কের অসম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল আয়া সোফিয়া। শুক্রবার এক ডিক্রিতে সই করার মাধ্যমে এরদোয়ান হাইয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেন। সূত্র : ডন।



 

Show all comments
  • salman ১৩ জুলাই, ২০২০, ৪:৫৪ এএম says : 0
    Alhamdulillah, Allah Apnar NEK Hayet Bariyee Din...ameen
    Total Reply(0) Reply
  • নিসারুল ইসলাম ১৩ জুলাই, ২০২০, ৯:৪০ এএম says : 0
    একটি বিষয় কেউই উল্লেখ করছেননা, সুলতান মেহমেত তৎকালীন কনস্টান্টিনোপল দখল করার পর এই গীর্জাটি ব্যক্তিগতভাবে কিনে নেন এবং এই কেনা-বেচার দলিল আজও তুর্কীতে সংরক্ষিত আছে । পরবর্তীতে সুলতান মেহমেত এটি মসজিদে রুপান্তরিত করে ওয়াকফ করে দেন । এটি আগে আমার জানা ছিলোনা বিধায় আমিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি । যেহেতু আমরা মশজিদ বিক্রি করিনা, তাই আমরা অধিকাংশই জানিনা যে, গীর্জা মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে এবং এর কেনাবেচাও চলে । ইনকিলাবের কাছে অনুরোধ এই বিষয়গুলো তুলে ধরুন, বহু মানুষ আছে যারা আমার মতো অজ্ঞানতাবশত: এর বিরোধিতা করছে । আর বিধর্মী ও তথাকথিচত বিজ্ঞানমনস্কদেরতো ইসলামের নাম শুনলেই এলার্জি দেখা দেয় ।
    Total Reply(1) Reply
    • Munir Ahmed Kotwal ১৩ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৮ পিএম says : 0
      Jazak'Allah for disclosing the facts.

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ