Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিশর, সুদান, ইথিওপিয়ার সংঘাত বাঁধ নিয়ে: যুদ্ধের আশঙ্কা!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২০, ১১:৩৩ এএম

একটি বাঁধের কারণে সংঘাত শুরু হতে পারে তিন দেশের মধ্যে। আগে বার বার আলোচনার টেবিলে বসেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এবারও মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়ার মধ্যে আলোচনায় কোনও ফল হয়নি। তারপরই ইথিওপিয়া নীল নদের শাখানদীর ওপর বাঁধের কাজ আবার শুরু করে দিয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা। অনেকে যুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন।

বাঁধের নাম গ্র্যান্ড রেনেসাঁ। জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য নীল নদের শাখা নদী ব্লু নাইলের ওপর এই বাঁধ তৈরি করছে ইথিওপিয়া। আপত্তি জানিয়েছে মিশর ও সুদান। কিন্তু তিন দেশের মধ্যে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর সেই আপত্তিতে কান না দিয়ে বাঁধের কাজ আবার শুরু করে দিয়েছে তারা। আর তাই নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।

ইথিওপিয়া বলছে, তাদের ১১ কোটি লোকের দারিদ্র্য ঠেকাতে এই বাঁধ অত্যন্ত জরুরি। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে ইথিওপিয়া হবে আফ্রিকার সব চেয়ে বড় বিদ্যুৎ রপ্তানিকারী দেশ। ইথিওপিয়ার মন্ত্রী সেলেশে বেকেলে জানিয়েছেন, বাঁধেরনির্মাণকাজ এবং জল আটকানোর কাজ পশাপাশি চলবে। জলস্তর এখন ৫২৫ মিটার থেকে ৫৬০ মিটার হয়েছে।

মিশর ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা চেয়েছে। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্লু নাইল হলো নীল নদের শাখানদী। এখান থেকেই মিশরের ৯০ শতাংশ জল আসে। জাতি সংঘকেও মিশর জানিয়েছে, ইথিওপিয়া এই বাঁধ বানালে তাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে।

সুদান বলেছে, ইথিওপিয়া বাঁধের কাজ শুরু করার পর ব্লু নাইলে জল দৈনিক ৯ কোটি কিউবিক মিটার কমে গেছে। তাদের দাবি, ইথিওপিয়া একতরফাভাবে এই কাজ করতে পারে না। বিশেষ করে যখন তিন দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। আর জলস্তর দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইথিওপিয়া বাঁধের গেট বন্ধ করে দিয়েছে।

মিশরও বলছে, তারা পুরোপুরি নীল নদের জলের ওপর নির্ভরশীল এবং জল যেহেতু কমছে, তাই ১০ কোটি লোকের জীবনের ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে। গত মাসেই মিশরের বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, জতি সংঘ হস্তক্ষেপ না করলে সংঘাত অনিবার্য। বাঁধ হলে মিশর ও সুদান মিলিয়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বিপন্নহয়ে যাবে। তাই এই বাঁধ তারা মানবে না।

গবেষক আহমেদ সোলেমান বলেছেন, মিশরে ইতিমধ্যেই জলের অভাব দেখা দিয়েছে। যতটা প্রয়োজন, তার তুলনায় জল কম পাওয়া যাচ্ছে। যত দিন যাবে তত সমস্যা বাড়বে।

মিশরের দাবি, ১৯৫৯ সালের জলচুক্তি মেনে চলতে হবে। সেই চুক্তিতে নীল নদের জলের সব চেয়ে বেশি অংশ মিশরকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইথিওপিয়া সেই চুক্তির শরিক ছিল না। ইথিওপিয়া দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে চেয়েছে। কিন্তু মিশর ১৯৫৯ এর চুক্তি থেকে সরে আসতে রাজি নয়। ইথিওপিয়ার লোক এই বাঁধ বানাবার পক্ষে। তাঁদের দাবি, এটা তাদের অধিকার। কারণ, তাঁরা নিজের দেশে বাঁধ তৈরি করছেন।

এই অবস্থায় মিশর চাইছে, জলবন্টন নিয়ে আইনত ব্যবস্থা হোক। ব্লু নাইলের নাব্যতা বজায় রাখার ব্যবস্থা হোক। বাঁধ তৈরি শেষ হওয়া এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ শুরু করার আগেই জলবন্টন চুক্তি করতে হবে।

এমনিতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুদানের লাভ। তারা কম দামে বিদ্যুৎ পাবে। কিন্তু তাদের চিন্তা জল পাওয়া নিয়ে। মঙ্গলবার তিন দেশের মধ্যে আলোচনা শেষ হয়েছে এবং সেখানে কোনো মতৈক্য হয়নি। ফলে বিরোধ কীভাবে মিটবে তার কোনো সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে না।
এএফপি, রয়টার্স



 

Show all comments
  • md motalib hossain ১৬ জুলাই, ২০২০, ৪:১৬ পিএম says : 1
    অবশ্যই এই বিষয়ে তিন দেশের মধ্যে সমঝোতা হওয়া জরুরী। কেননা এতে সবাই উপকৃত হবে।আর যদি সমঝোতা না হয় তাতে যুদ্ধ সংকট বাড়বে,তাতে জলের পাশাপাশি যুদ্ধ সংকটে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটাও বেড়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফ্রিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ