Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালীর ডাকাতি ও বেসিকের লুটের ক্ষত সারতে সময় লাগছে অর্থমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ডাকাতি ও বেসিক ব্যাংকের উচ্চ পদস্থদের অর্থ লুটের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে ব্যাংকগুলোর সময় লাগছে। একই সঙ্গে দেশে ৫৬টি ব্যাংক থাকলেও ব্যাংকিং সেবা এখনো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেনি।
আর্থিকভাবে দেশকে স্বাবলম্বী করতে হলে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঝামেলা তৈরি করেছে। সোনালী ব্যাংকের অর্থ ডাকাতি এবং বেসিক ব্যাংকের উচ্চপদস্থদের অর্থ লুটে ব্যাংক দুটির অবস্থা খারাপ। এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠতে সময় লাগছে। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। সভাপতিত্ব করেন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদ-উজ-জামান।
দেশের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে মুহিত বলেন, অনেকে বলে দেশে ব্যাংক বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি মনে করি না। দেশে ৯ হাজার ব্যাংক শাখা। ১৬ কোটি মানুষ। ১৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। মুহিত বলেন, আর্থিক সূচকে জনতা ব্যাংক অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর থেকে ভালো করছে। ভালো মুনাফা করছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম বলেন, ব্যাংকিং খাতে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আর্থিক সূচকে অনেক সময় ভালো দেখালেও সেটিও সঠিক না। প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে। তাই আরো সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো সেটি করে না। কমাতে হবে ঋণের সুদ হার।
জনতা ব্যাংকের ২০ হাজার কোটি টাকা মামলা জটিলতায় পড়ে আছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এই টাকা উদ্ধারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। শুধুু আইনজীবী নিয়োগ করেই দায় সাড়লে হবে না।
জনতা ব্যাংক চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদ উজ-জামান জানান, ২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি গত বছর এক হাজার ১৫১ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এক বছরে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৮৩ কোটি টাকা। শেখ ওয়াহিদ উজ-জামান বলেন, জনতা ব্যাংক এর আগের বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। ২০১৫ সালের শুরুতে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছরে জনতা ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৮৩ কোটি টাকা। ১৩টি সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ব্যাংকের এই সাফল্য এসেছে।
ব্যাংকের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন এই মুখ্যসচিব বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এবং সে লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরাও ২০১৫ সালের জন্য ১৩টি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আর এ জন্য প্রতিটি সূচক অর্জনের লক্ষ্যে পৃথকভাবে ব্যাংকের নির্বাহীদের দায়িত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেয়া হয়। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে জনতা ব্যাংকের অগ্রযাত্রার এ সাফল্য এসেছে। অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আবদুস সালাম ব্যাংকের আর্থিক সূচক তুলে ধরে বলেন, ঋণ আদায়ে মাঠপর্যায়ে তদারকির মাত্রা বৃদ্ধি, বোর্ড অব ডিরেক্টরসের বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনা অনুসরণ এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কারণে এ সাফল্য এসেছে।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল নাগাদ ব্যাংকটির অনলাইন শাখার সংখ্যা ছিল ১৭৪টি। ২০১৫ সালে আরো ৩২৯টি শাখায় অনলাইন সুবিধা চালুর মাধ্যমে বর্তমানে ব্যাংকের ৯০৮টি শাখার মধ্যে ৫০৩টি শাখায় অনলাইন সুবিধা চালু করা সম্ভব হয়েছে। আবদুস সালাম জানান, চলতি বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংকটির সবগুলো শাখায় অনলাইন সুবিধা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। আর এ সুবিধা চালু হলে ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বল্প সুদের আমানত এবং উন্নত গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিসহ লোকসানি শাখার সংখ্যা আরো কমে যাবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১২টি সূচকেই শতভাগের বেশি অর্জন করে জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে করপরবর্তী মুনাফায় ১১৩%, অবলোপিত ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ১১৫%, মামলা নিষ্পত্তির হারে ১৪৭% এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০৫% সফলতা অর্জন করে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হার ৮.৫০%-এর কম। অথচ গত বছর এ হার ছিল ১১.৬৯%। ২০১৫ সালে ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৬০টি হতে ৩৪টিতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বছর শেষে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় জনতা ব্যাংক। এখন ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার প্রায় ১০.৫০%।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জনতা ব্যাংকের সাফল্য অর্জনকে সাধুবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোনালীর ডাকাতি ও বেসিকের লুটের ক্ষত সারতে সময় লাগছে অর্থমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ