Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহামারির মডেল প্রস্তুতকারীরা অবধারিত ভবিষ্যদ্বক্তা নন

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে-৪

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

তবুও যখন সোয়াইন ফ্লু হ’ল, ব্রিটিশ নেতারা আবার অধ্যাপক ফার্গুসন এবং ইম্পেরিয়াল কলেজে তিনি যে বিশাল মডেলিং বিভাগটি তৈরি করেছিলেন সেদিকে ফিরে গেলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যুক্তিসঙ্গতভাবে সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে সোয়াইন ফ্লু প্রায় ৭০ হাজার লোককে হত্যা করতে পারে। নির্বাচিত নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। লন্ডনের তৎকালীন মেয়র বরিস জনসন নগরীর প্রায় অর্ধেক পুলিশ অফিসার এবং পাতাল রেল চালকদের কাজের অনুপস্থিতির জন্য কট্টর সভাগুলির সভাপতিত্ব করেছিলেন। জনসন হালকাভাবে সতর্ক করেছিলেন, ‘এটি কতটা খারাপ হবে তা বলা অসম্ভব।’

তবে মডেল প্রস্তুতকারীদের তথাকথিত যুক্তিসঙ্গত খারাপ পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ঘটেনি। ব্রিটেনে সোয়াইন ফ্লুতে মৌসুমী ফ্লুর চেয়ে কম ৫শ’ জনের মতো মারা গিয়েছিল। সেসময় বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে মুমূর্ষ যতেœর প্রশিক্ষণ শেষ করা ড. ক্যাথরিন সেলসনকে অতিরিক্ত রোগীদের স্থানান্তরিত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি স্মরণ করেন, ‘সেখানে বসে আমরা কিছুই করছিলাম না।’ সোয়াইন ফ্লু পর্বটি জনসনের জন্য জনস্বাস্থ্যের নামে বিধিনিষেধ আরোপ না করার প্রবণতাকে শক্তিশালী করেছিল। তবে, পর্যালোচনাটির বিষয়ে এক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘মডেল প্রস্তুতকারীরা অবধারিত ভবিষ্যদ্বক্তা নন।’ কিছু বিশেষজ্ঞ এখন বলছেন, ইউরোপ সোয়াইন ফ্লু থেকে ভুল পাঠ নিয়েছে। বেলজিয়ামের একজন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টিভেন ভ্যান গুক্ট প্রতিক্রিয়াতে বলেছেন, ‘এটি এক ধরনের আত্মতৃপ্তি তৈরি করেছিল। ওহ, আবার মহামারি? আমাদের সন্তোষজনক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এটিকে মোকাবেলা করতে পারি।’ এটি কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দাও ঘটিয়েছিল। ফরাসি নীতি নির্ধারকরা কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন কেনার ব্যয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং অযথা ১৭শ’ কোটিরও বেশি প্রতিরক্ষামূলক মাস্ক মজুত করার জন্য সরকারকে দোষ দিয়েছিলেন। ব্যয় হ্রাস করার জন্য ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং অন্যান্য সরকারগুলো তাদের বেশিরভাগ মজুদকে ‘ঠিক সময়ে’ সরবরাহের চুক্তিতে স্থানান্তরিত করে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধরে নিয়েছিলেন যে, সঙ্কটে পড়েও তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যা প্রয়োজন, তা কিনতে পারেন, সাধারণত চীন থেকে, যারা বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মাস্ক প্রস্তুত করে। এর ফলে ২০২০ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সের মাস্কের সরবরাহ ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে এসে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১৫ কোটিতে। ফরাসি সিনেটর ফ্রান্সিস দেলাত্রে যিনি চীনের উপর নির্ভরশীলতা সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বলেন, ‘সরকারের চিকিৎসা সরবরাহ গুদামজাত করা ধারণাটি পুরনো বলে মনে হয়েছিল। আমাদের ভাগ্য একটি বিদেশী স্বৈরতন্ত্রের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল।’ দেলাত্রে আরো বলেন, ‘ফ্রান্সের নিজেকে সেরা মনে করার মানসিক জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে যখন স্বাস্থ্য খাতের বিষয়টি আসে।’

সোয়াইন ফ্লু’র দু’বছর পর ব্রিটেন জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যয়গুলির তিন চতুর্থাংশ স্থানীয় সরকারগুলিতে বন্টন করে দেয়, যেখানে সেগুলির খোঁজ রাখা কঠিন ছিল এবং আরো সহজে অন্য খাতে সরানো হয়েছিল। সেমসয় চার শতাধিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ একটি খোলা চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, বিকেন্দ্রীকরণ ‘দেশের জনস্বাস্থ্যের ক্ষমতা ব্যাহত, খন্ডন ও দুর্বল করে দেবে’ এবং পরের বছরগুলিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য মাথাপিছু ব্যয় ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছিল। একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক যা একসময় ৫২টি গবেষণাগারকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, সেগুলিকে কমিয়ে প্রাথমিকভাবে আঞ্চলিক হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ গবেষণার প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য অবশেষে দুটি জাতীয় এবং কয়েকটি প্রধান আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের মজুত সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য হন যেগুলি হাসপাতালে কিছু নির্দিষ্ট কার্যক্রমের সময় ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। তবে সেগুলি সাধারণ ব্যবহারের জন্য, এমার্জেন্সি রুম, ডাক্তারদের কার্যালয় বা নার্সিং হোমের জন্য ছিল না। বিজ্ঞানীরা জানতেন যে, সার্স বা মার্স-এর মতো করোনাভাইরাসেও আরও সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে। এতদসত্তে¡ও, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কী কী মজুদ করতে হবে, সেবিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে পরামর্শদাতা ড. বেন কিলিংলে বলেন, ‘আপনি আগে কখনও দেখেননি এমন কিছুর জন্য মজুদ তৈরি করা বেশ কঠিন। এটি নির্ভর করে আপনি আপনার বীমাতে কতটা ব্যয় করতে চান তার ওপর।’ (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ