Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অপরাজিতার মালিক রিমান্ডে

মাস্ক কেলেঙ্কারি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) মইনুল ইসলামের আদালতে তাকে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তাকারী মূল হোতারা আড়ালেই থাকছে।

রিমান্ড শুনানির সময় শারমিন জাহান বিচারককে বলেছেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি যদি নকল মাস্ক দিয়ে থাকি তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সেটা ফেরত দেবেন। কিন্তু সেটা না করে আমার নামে মামলা দিলেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে শাহবাগ থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করেন। এরপর শুনানি শুরু হয়। শুনানির মাঝে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শারমিন জাহান বিচারকের কাছে কিছু বলার অনুমতি চান। এরপর বিচারক তাকে অনুমতি দিলে শারমিন জাহান বলেন, আমি প্রথম দুই বার মাস্ক দিলাম। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাস্কের মান নিয়ে কিছুই বললেন না। কিন্তু আবার যখন তৃতীয় বার মাস্ক দিলাম তখন বলা হলো যে নকল মাস্ক। যদি নকল মাস্ক আমি দিয়ে থাকি তাহলে সেটা আমাকে রিটার্ন দেবে। কিন্তু সেটা না করে আমার নামে মামলা দেয়া হল। মূলত আমাকে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শারমিন জাহান জেনে শুনে করোনার সম্মুখ যোদ্ধাদের মাস্ক সরবরাহে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রের কোটেশন অনুযায়ী ফেস মাস্ক সরবরাহ করেননি।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার রাতে তাকে শাহবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে অধিক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার মূল হোতাসহ সহযোগীদের গ্রেফতার এবং তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালার স্বার্থে তিনদিনের রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে চিরতরে পলাতক ও মামলার অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাফফর আহমেদ। মামলার আসামি শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগের কমিটিতে একই উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত তিনি।
জানা গেছে, গত ৪ জুলাই থেকে বিএসএমএমইউয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের দেয়া এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তৃতীয় ব্যাচেই বাধে বিপত্তি। অভিযোগ ওঠে তাদের দেয়া হয় নকল এন-৯৫ মাস্ক। নকল মাস্কে লেখা ভুল, লট নম্বর নেই। আসল এন-৯৫ মাস্কের সঙ্গে নকল মাস্কও সরবরাহ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে প্রায় ৮০-৯৫ লাখ টাকার মাস্ক নিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই মাস্কের কারণে করোনা সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ঘটনায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় বিএসএমএমইউ। এ বিষয় তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এদিকে কোনও রকম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়াই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তাকারী বিএসএমএমইউ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন ও সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিজ ক্ষমতাবলেই তারা মাস্কসহ করোনার সময়ে সকল কেনাকাটা সম্পন্ন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাস্ক কেলেঙ্কারি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ