Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদায় সংবিধানে রাখা ৩৭০ অনুচ্ছেদ ‘জাতীয় ও জনস্বার্থের’ দোহাই দিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার বাতিল করলেও এখন সেই অনুচ্ছেদসহ ওই অঞ্চলের ‘ছিনিয়ে নেয়া’ মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন সেখানকার পন্ডিতরা (কাশ্মীরি পন্ডিত)। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বার্ষিকী আগামী ৫ আগস্ট। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে কাশ্মীরি পন্ডিতদের সংগঠন ‘পুনর্মিলন, মুক্তি এবং পুনর্বাসন’। তারা বলছে, এ অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা এবং সংবিধানের ৩৭০ পুনর্বহাল করে আবার সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হোক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা চলে যাওয়ার সময় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গেলে তখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের একাংশের শাসকেরা বিশেষ শর্তে ভারতে যোগ দেন। এই অবস্থায় রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে নানা সংঘাতের পর চুক্তি অনুসারে কাশ্মীরের পশ্চিম-উত্তরাংশ পাকিস্তানের হাতে চলে যায়, যেটা বর্তমানে আজাদ-কাশ্মীর বলে পরিচিত সেখানে। ওই অঞ্চলটি স্ব-শাসিত পাকিস্তানে। আর ভারতের শাসিত কাশ্মীরের সেই ‘বিশেষ শর্ত’ রক্ষায় সংবিধানে এত বছর ধরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ থাকলেও গত ৫ আগস্ট তা বাতিল করে দেয় বিজেপি সরকার। ওই অনুচ্ছেদটির আওতায় কাশ্মীর আলাদা সংবিধান ও পতাকার স্বাধীনতা ভোগ করতো। এমনকি সেখানে সরকারি চাকরি, জমি কেনা এবং ব্যবসা করার সুযোগটিও ছিল কেবল কাশ্মীরিদের জন্যই। কিন্তু ওই অনুচ্ছেদ বাতিলের কারণে সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে কাশ্মীরিরা। অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাস হয় ভারতের সংসদে। বিলে রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের ঘোষণা হয়। বর্তমানে সেই অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ, দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু মোদি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলে মনে করছে কাশ্মীরি পন্ডিতদের সংগঠনটি। উদ্বাস্তু কাশ্মীরি পন্ডিতদের ওই সংগঠনটির চেয়ারম্যান সতীশ মহলাদার বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল চাই। ভারতের সংবিধান প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক ধর্ম, প্রত্যেক সম্প্রদায় এবং প্রত্যেক সামাজিক সংগঠনকে সমানাধিকার দেয়। এর আগে কোনো দিন কোনো প্রদেশের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রে হয় না। সেনা নামিয়ে একটি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কোনো সরকার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে পারে না। কাশ্মীরের এই মর্যাদা বাতিলে পাকিস্তান ব্যাপক নাখোশ হয়। তারা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে অভিযোগও করে। পাকিস্তানের দাবি, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই কাশ্মীরের বিষয়ে নয়াদিল্লি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তাদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কাশ্মীর ভাঙায় ভারতের সমালোচনা করে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ। নয়াদিল্লি মনে করে, ৯০-এর দশকে কাশ্মীরে সংঘাতের কারণে প্রায় ছয়-সাত লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ওই হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ‘কাশ্মীরি পন্ডিত’ বলা হয়। বলা হয়ে থাকে, হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের ওই মর্যাদা বাতিল করে এবং কাশ্মীরি পন্ডিতদের আপন ভিটায় ফেরার আহবান জানায়। সেই পন্ডিতদেরই সংগঠনের তরফ থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবিকে বেশ তাৎপর্যপ‚র্ণ বলে দেখা হচ্ছে। ইন্ডিয়া টুডে, দ্য ট্রিবিউন, সেন্টেনাইল আসাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ