Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকায় বাড়ছে বন্যা

উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পানি কমছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:২৩ এএম

# ঘর-বাড়ি ছাড়ছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ


রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় বাড়ছে বন্যার পানি। রাজধানীর নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। প‚র্বাঞ্চলের বালু নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। নারায়নগঞ্জে শীতলক্ষার পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। পদ্মার পানি মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল ছাড়াও মাওয়া ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। চাঁদপুরে মেঘনার পানিও এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রচন্ড স্্েরাতে পদ্মায় তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যা প‚র্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে। এটি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মা নদীর পানিও কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-প‚র্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকবে। এতে ঢাকা ও এর আশপাশের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত রাজধানীর বন্যা পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিন আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল দীর্ঘমেয়াদী প‚র্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে চলতি আগস্ট মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপের সম্ভাবনা আছে। যার একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর ফলে মাস শেষে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হতে পারে।
রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে প‚র্বাঞ্চলের অনেক এলাকায় মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব কিছুই পানির নিচে। ফলে নৌকা দিয়েই যোগাযোগ করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাসা বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে মাচা বেঁধে কিংবা নৌকায় রান্না করতে হচ্ছে। অনেকেই বাড়ি-ঘরও ছেড়ে অনত্র আশ্রয় নিচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্যা কবলিত। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দাদের কাছে কোনও খাদ্য বা ত্রাণ সহায়তাও এখনো পৌঁছেনি।
দেশের উত্তর ও উত্তর-প‚র্বাঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি জমা হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। যে কারণে ঢাকা ও তার আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বঙ্গোপসাগরের বর্তমানে লঘু চাপ থাকায় এবং পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ার থাকায় এ পানি নামতে পারছে না। এর ফলে দিন দিন নগরীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা খুব সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না।
বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাগরের লঘু চাপ বিরাজ করছে। এছাড়া পূর্ণিমার প্রভাবে সাগরে জোয়ার রয়েছে। এতে করে বন্যার যে পানি এসে ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে জমা হচ্ছে তা সাগরে নামতে পারবে না। এর মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত কিছুটা বৃদ্ধি পায় তাহলে ঢাকার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
ঢাকা প‚র্বাঞ্চলে অবস্থিত বালু নদীকে ঘিরেই কয়েকটি এলাকা রয়েছে। যে এলাকাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ ওয়ার্ড। বন্যা প‚র্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বর্তমানে বালু নদীতে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নদীতে পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ১৩ মিটার। এই নদীর পানির সমতল ৫ দশমিক ৮৭ মিটার। আর ৫ দশমিক ৭৫ মিটারের ওপরে গেলে বিপদসীমা ধরা হয়ে থাকে।
দক্ষিণ সিটির এসব নতুন ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। মানুষের বাসাবাড়ি, রস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ সব কিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। বাসাবাড়ির সবজি বাগান ডুবে যাওয়ায় উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় শহরের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন থেকেও এসব এলাকার বাসিন্দারা কোনও সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০ নম্বর ওয়ার্ড ডেমরা। এরই এলাকার দেইল্লা, পাইটি, কায়েতপাড়া, ঠুলঠুলিয়া, খলাপাড়া, তাম্বুরাবাদ, নলছাটা, ধীৎপুর, মেন্দিপুর, শূন্যা টেংরা ও আমুলিয়া এলাকার নিম্নাঞ্চল বালু নদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে পুনি ঢুকে পড়েছে।
খিলগাঁও থানাধীন ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে ইদারকান্দি, ফকির খালী, বালুর পাড়, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, জোড়ভিটা, ত্রিমোহনী উত্তরপাড়া, নাসিরাবাদ উত্তর পাড়া, নাসিরাবাদ টেকপাড়া, ইমামবাগের কিছু অংশ, উত্তরগাঁও, শেখের জায়গা ও নাগদারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় দুই থেকে আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়িতে পানি উঠে পড়েছে। তাদের নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ফকির খালী এলাকার বাসিন্দা মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ঈদের পর থেকে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। মানুষের কোনও কর্মও নেই। নৌকা দিয়েই বাসাবাড়িতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে। এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।
ডিএসসিসির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণগাঁও, ভাইগদিয়া ও মানিকদিয়া খালের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব। ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ কেউ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
ডিএসসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের মাÐা, কদমতলী, ঝিলপাড়া ও উত্তর মাÐা এলাকায়ও এই অবস্থা। এই এলাকাগুলোতে বালু নদীর পানি অভ্যন্তরিন খালগুলো দিয়ে প্রবেশ করে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে খাল তীরবর্তী বেশির ভাগ বাড়িতেই পানি ঢুকে পড়েছে।
এছাড়া রাজধানীর সবুজবাগ, বাড্ডা, বেরাইদ, ডুমনি, সাঁতারকুল, দক্ষিণখানসহ বালু নদের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোও প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বালু নদ তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শাখা নদের সংযোগ ও ছোট-বড় সংযোগ খালেও বানের পানি ঢুকেছে।
দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বাড়িঘরে ফিরছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। ঘরে এখন বেড়া, মাথার ওপর চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব ভেসে গেছে। এছাড়া আয়-রোজগার বন্ধ। সব মিলিয়ে বন্যার্তরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ