Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এখনই বাংলাদেশের সময়

| প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

উপমহাদেশের ভ‚-রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে ভারতের বর্তমান শাসকদলের ভূমিকা খোদ ভারতের অভ্যন্তরেই বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে একদিকে ভারতের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে পড়ছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের সাথে চরম বৈরিতার জন্ম দিচ্ছে। সম্প্রতি ইন্দো-আমেরিকান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত এক ভাচুর্য়াল সেমিনারে ভারতীয় কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মত দিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কূটনীতিক সুরেন্দ্র কুমারের সঞ্চালনায় গত শনিবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সেমিনারের মূল বিষয় ছিল ভারতের সাম্প্রতিক বিদেশ নীতি। সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’র সিনিয়র ফেলো এশলে জে.টেলিস বলেছেন, ‘ভারত তার নিজের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়’। বিশ্বায়নের এই যুগে ভারতের এমন আচরণের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত বিরোধ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যখন সাংঘর্ষিক অবস্থায় উপনীত, তখন ভারতের নিকট প্রতিবেশিদের বিরূপ মনোভাব দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটানের মত প্রতিবেশিরাও এ সময়ে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বর্ষীয়ান ভারতীয় পার্লামেন্টারিয়ান, রাজনীতিবিদ শশি থারুর বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ভারতের প্রতিবেশিদের সাথে বৈরিতাপূর্ণ ও আগ্রাসী আচরণের মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। বিশেষত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে মুসলিম বিদ্বেষি ভূমিকা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে একদিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, অন্যদিকে দেশে সামাজিক-সাম্প্রদায়িক বিভক্তি উস্কে দিয়ে বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং দেশের গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের এহেন ভূমিকার কারণে বিশ্ব ভারতকে এখন সংকীর্ণ মানসিকতার অসহিষ্ণুৃ জাতি হিসেবে দেখছে বলে শশি থারুর মন্তব্য করেছেন। অশোকা ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রতাপ ভানু মেহতা বাংলাদেশ ও নেপালের সাথে বর্তমান বিজেপি সরকারের আচরণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ভারতকে একটি বড় সত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা হল, ভারতে যদি মানবাধিকার ও স্বাধীনতা অবরুদ্ধ হয় তাহলে উপমহাদেশের উন্নয়নের কোনো ভবিষ্যত থাকে না। মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ভারতের প্রপাগান্ডা নির্ভর বিদেশ নীতিকে যে কোনো দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করেন ভানু মেহতা। আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে। যেখানে বাংলাদেশ ভারতের প্রত্যাশিত সবকিছুই উদারভাবে মেলে দেয়ার পরও বাংলাদেশকে নানাভাবে কোনঠাসা করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনীর প্রসঙ্গে আলোচনায় বিজেপি নেতারা বাংলাদেশকে টার্গেট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই বৈরিতা নয়’ এমন পররাষ্ট্রনীতি ধারণ করেই বাংলাদেশ তার প্রতিবেশি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সাম্প্রতিক চীন-ভারত টানাপোড়েনেও বাংলাদেশ ভারত বিরোধী অবস্থানে যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের প্রশ্নে ভারতীয় শাসক ও নীতি নির্ধারকদের অনীহা ও অনুদারতা এখন অনেকটা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। নেপাল, ভূটানের মত প্রতিবেশিরা ভারতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরও গঙ্গা-তিস্তার পানি বন্টনসহ বাংলাদেশের সাথে পুরনো দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো নিয়ে ভারতের ইতিবাচক সাঁড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশিদারিত্বের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সুবিধার পথ উদারভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ভারত চাইলেই বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারবে না।

বাংলাদেশকে নিজের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে এখন ভারতের কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গত সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। বিশেষত: হাজার হাজার কোটি টাকায় নির্মিত আমাদের বন্দর, নৌপথ, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা থেকে ন্যায্য রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। নেপাল ও ভূটানের সাথে বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভারতের পক্ষ থেকে প্রবিন্ধকতা দূর না করা হলে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার প্রশ্নেও নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা এখনো যথেষ্ট গতিশীল এবং সম্ভাবনাময়। উপমহাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে চীনসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দায় নিজস্ব অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে যেখানেই পারস্পরিক ভারসাম্যমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সুবিধা পাওয়া যাবে, সেখানেই হাত বাড়াতে হবে। কূপমন্ডুকতায় আবদ্ধ থাকার সময় এখন নয়। ভারত তার ভুল পলিসির কারণে নিজের ফাঁদে নিজে আটকে পড়েছে। অর্থনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়া এক মালদ্বীপ ছাড়া তার সাথে আর কেউ নেই। অন্যদিকে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সবকিছুই দিয়েছে, তাই এখনই সময় আমাদের স্বার্থে তার কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। নেপালের সাথে রেল ট্রানজিটের যে কথা বলা হচ্ছে, তা দ্রæত বাস্তবায়ন করে বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করতে হবে। ভুটানের সাথেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, সময় ও সুযোগ সব সময় আসে না। এখন আমাদের সময়। তাই এই সময়কে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বার্থে অন্যান্য প্রতিবেশির সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যাবসা-বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন