Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক আশানুরুপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা : মৌসূমের শুরুতে বীজ সংকট, অনাবৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত দুই তিন দফা সেচ প্রদান করে এবং সর্বশেষ পাট কর্তনের শেষ দিকে তীব্র বিছা পোকা আক্রমণে চলতি মৌসুমে পাট চাষিদের লাভের অংক কমে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে পাট গাছ পুষ্ঠ হয়ে গেছে বিধায় পঁচাতে দেবার সময় হয়ে গেছে কিন্তু আষার মাস অনাবৃষ্টিতে শেষ হয়ে শ্রাবন মাস চললেও নেই তেমন বৃষ্টিপাত। ফলে চাষিদের কেউ কেউ তাদের উৎপাদিত পাট পানির অভাবে মাঠেই রেখে দিয়ে চাতকের ন্যায় আকাশের দিয়ে চেয়ে চেয়ে পাট পঁচানোর জন্য বৃষ্টি কামনা করছে।
দেখা যাচ্ছে যারা বিত্তবান কৃষক তারা যানবাহনের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ করে দুরদুরান্তে নিয়ে পাট জাগ দিবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে নদী নালা খাল-বিলে পানির শূন্যতাপূরণ করে বিল বাওরের নিচুস্থানে দূরবর্তী এলাকার পাট এনে তারপর সেচের মাধ্যমে পানি দিয়ে তা পঁচানোর চেষ্টা করছেন।
তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের অভিমত এবার পাট মৌসুমের শুরু থেকে নানা দূর্যোগ উপেক্ষা করেও চাষিরা পাটে বাম্পার ফলন অর্জন করতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের বেথুলীয়া ডাঙ্গীপড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে পাট আবাদকারি আদর্শ কৃষক মোঃ আমিনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবার এলাকার সেরা উর্বর ভূমি হিসাবে খ্যাত ডাঙ্গীপাড়া মাঠে প্রায় ৭ পাখি জমিতে পাট আবাদ করছেন।শুরুতে বীজ ও সেচ সঙ্কট এবং শেষদিকে বিছা পোকার তাÐবে অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম।
তিনি জানান, এই অনাকাঙ্খিত বিছা পোকার আক্রমণে পাট গাছ লম্বা কম হয়েছে, মোটাও হয়েছে কম। আর পাটের চেহারা অনেকটা খারাপ হয়ে গেছে।তিনি অভিযোগ করেন জেলার কৃষিক্ষেত্রে কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে তা সমাধানে স্থানীয় কৃষি অফিস ছুটে এসে সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও তার কৃষিকর্ম জীবনে কোন কৃষিবীদ এই মাঠে পা ফেলেনি বলে জানান।তিনি বলেন কৃষি অফিসের কর্তারা মাঠে না আসলে উন্নত চাষাবাদ হবে কিভাবে?
একই এলাকার মৃত আকাল শেখের ছেলে কৃষক মোঃ রজব আলী শেখ জানান, তিনি ৩ পাখি জমিতে উচ্চফলন শীল জাতের তোষা পাটের আবাদ করেছেন। পোকা মাকড়ের আক্রমণের পাশাপাশি দুর্যোগে মোকাবেলা করে পাট আজ পুষ্ঠ পরিপক্কতার রুপ ধারণ করেছে কিন্তু পানির অভাবে সময় মতো জাগ দিতে পারছিনা বলে পাট কাটবার সাহস নেই।
তিনি বলেন অধিকতর বিলম্ব পাট কাটার জন্য ক্ষেতে রেখে দেয়ায় পাটের রস কমে যাচ্ছে। সঠিক সময় ও স্বচ্ছ পানিতে পাট পঁচাতে না পারলে পাটের গুণগত মান কমে বাজার মূল্য কমে যাবে এবং এর ফলে অধিক টাকায় কেনা বীজ, ৩ দফা সেচ প্রদান, বিছা পোকা হঠানোর খরচসহ এতো পরিমাণ শ্রম বিনিয়োগ করে লোকশানে পড়তে হবে।
কথা হয় সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুরের মরহুম ইলিয়াস খন্দকারের ছেলে বৃদ্ধ পাট চাষি মোঃ আব্দুল আজিজ খন্দকারের সাথে।তিনি পরিবেশের নানা প্রতিকূলতার জন্য আগের মতো অধিক জমিতে পাট চাষ করেন না বলে জানান। শুধু কৃষক নামটা রক্ষা করতে শত সমস্যা উপেক্ষা করেও ৮ পাখিতে এবার পাট চাষ করে তিনি ফাঁপড়ে পড়েছেন। সব শেষে পাট জাগ দেয়ার পানির অভাবে। তবুও তিনি বসে নেই ক্ষেত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে অধিক অর্থের বিনিময়ে পাটগুলো কেটে এনে ইন্দ্রনারায়ণপুরের পানি শূন্য সুতা নদীতে আনছে আর নিচু স্থানে কিংবা মাটি খনন করে সেখানে পাটগাছ ফেলে সেঁচের মাধ্যমে পাট পঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
একই এলাকার অপর এক কৃষক আজিবর মন্ডোলের ছেলে মাহানূর মন্ডোল বলেন, অতিরিক্ত সমস্যার কারণে এবার প্রতি পাখি জমিতে পাট চাষে খরচ হয়ে গেছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন আরো রয়েছে পরিবহন খরচসহ পঁচানো আর পাট ছাড়িয়ে শুকিয়ে ঘরে তোলা বাবদ অনেক খরচ। তাই এবার যদি প্রতিমণ পাটের বাজারদর ২ হাজারের কম হয় তাহলে কৃষকেরা বাম্পার ফলন ফলিয়েও বাম্পার লোকসানের স্বীকার হবেন।
কথা হয় ইন্দ্রনারায়ণপুরে সুতা নদীতে ঘোড়ার গাড়ি বহন করে দুর দুরান্ত থেকে পাট বয়ে আনা একজন ঘোড়ার গাড়ি চালকেরর সাথে। তিনি জনালেন ৮/১০ মন ওজনের সমান প্রতি ট্রিপে আমি পাই দেড়’শ থেকে দুই আড়াই’শ টাকার মতো। আমি ভাবছি দুরবর্তী স্থান থেকে বয়ে এনে পাট পঁচাতে গিয়ে আবাদের খরচ তুলবে কিভাবে কৃষকেরা।
এদিকে বর্তমান অত্যাধুনিক কৌশলে, স্বল্প জনশক্তির মাধ্যমে, উন্নত রং চেহারা ও শক্ত মানের, শক্ত গড়নেরর পাট বাজারজাতের প্রয়াসে ঢোল ঢাক পিটিয়ে ্রকথিতগ্ধ রিবনরেটিং পদ্ধতিতে পাট ছাড়ানোর প্রচার প্রবাগন্ডার অযুহাতে প্রচুর টাকা খরচ করে সুন্দর এই পদ্ধতিটার সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষকের টিকিটিও ধরতে পারেনি কর্তারা।
তবে জেলা কৃষি অফিসে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির বিলবোর্ডে বড় হরফে লিখা রয়েছে কত টাকা ব্যায় সাপেক্ষে আর কত পিস পাট ছাড়ানোর এই অত্যাধুনিক মেশিন কত জনের মধ্য বিতরণ করা হলো। আবার কতজন কৃষককে বিষয়টির ওপর প্রশিক্ষন প্রদান করা হলো। কত টাকাই বা এই রিবনার মেশিন তৈরির খরচ আর ব্যবহারের কৌশল রপ্ত করাতে প্রশিক্ষকের খরচ, প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণকারি চাষিদের নামে নগদ সহ “ভুড়িভোঁজ” বাবদ খরচের পুরা হিসাব হয়তো অফিসের কাগজ কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।
তবে জেলার কোথাও কোন কৃষক পাট ছাড়ানোর এই যন্ত্র ব্যাবহারের প্রশিক্ষণ নিয়ে তা ব্যবহার করছে। কিংবা কোন প্রশিক্ষিত কৃষকের কাছ থেকে অন্য কৃষকেরা হাতে কলমে শিখে আধুনিক পদ্ধতিটা ব্যবহার করে পাট ছাড়াচ্ছেন এমনটি নেই।
বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে কোথাও কোন কৃষকের এ পদ্ধতি ব্যবহার তো দুরের কথা তারা অনেকেই যন্ত্রটির নাম পর্যন্ত শোনেননি। তবে অধিক সচেতন কয়েকজন কৃষক মনে করেন পাট ছাড়ানোর সুন্দর ও স্বল্প খরচের পদ্ধতিটি প্রয়োগের বাস্তব কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই কৃষকেরা যদি সঠিক প্রশিক্ষণ বা পদ্ধতি ভালমতো বুঝতে পারত তাহলে অন্যান্য দেশের মতো সুফলটা এখানকার কৃষকেরাও লুফে নিতো। সচেতন কৃষকেরা অভিমত ব্যাক্ত করে আরো বলেন, পাট ছাড়ানোর আধুনিক পদ্ধতিটা কৃষকেরা সাদরে গ্রহণ করলে পাট পঁচাতে বেগ পেতে হতোনা এবং পাটের রংটা প্রকৃত সোনালী হতো। তবে রিবনরেটিং পদ্ধতিতে পাট ছাড়াতে হলে কৃষকের ইচ্ছেমতো নয় পাট গাছগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাটতে হয় আর ক্ষেতে নির্দিষ্ট পরিমান সেঁচ দিয়ে একপর্যায়ে পাট কেটে ছাড়াতে হয় এতে সামান্য পরিমাণও পাট নষ্ট হবার সুযোগ নেই বলে সূত্রটি জানায়।
এদিকে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে উচ্চফলনশীল তোষা জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে। আর এই চাষাবাদে বাম্পার ফলনে সুনাম পেতে যাচ্ছে রাজবাড়ী জেলার কৃষকেরা। আর এই ফলনের বিপরীতে জেলায় এবার প্রায় ৫ লক্ষ বেল পাট কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবেন বলে সূত্রটি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তবে বিছা পোকার তাÐবের কারণে ফলনে ওপর কিছুটা খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু সূত্রটি মনে করেন বিছার আক্রমণ ফলনের শেষ দিকে হয়েছে বলে রক্ষা। কারণ প্রথম দিকে বিছার আক্রমণ হলে পাট চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতেন।
মৌসূমের শেষ দিকে বিছা পোকার তাÐবে সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হলেও পোকার আক্রমণে ক্ষেতের পঁচা পাট পাতা ক্ষেতে মিশে গিয়ে জমির জৈব শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এতে এখন কৃষকেরা ধান আবাদ করলে কম সারে অধিক ফলন পেয়ে তারা পাটের মতো ধানেও বাম্পার ফলনের কৃতিত্ব পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক আশানুরুপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ