Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যশোর এসপির প্রেস ব্রিফিং, হতাহত বন্দি কিশোরদের উপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন

যশোর থেকে বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৫:৪৯ পিএম

যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বন্দি কিশোরদের হতাহতের ঘটনায় শনিবার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি ঘটনার সূত্রপাত থেকে আদ্যপান্ত উদঘাটন করেছেন যা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। কিশোর বন্দি হৃদয়কে হেড গার্ড নূর ইসলাম ঈদের আগে ১০বন্দির চুল কেটে দিতে বলে। হৃদয় তার হাত ব্যাথা উল্লেখ করে চুল কাটতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হেড গার্ড তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহর কাছে অভিযোগ করে যে, ‘ওরা ট্যাবলেট খেয়ে নেশাগ্রস্ত আছে এবং হৃদয় ও পাভেলের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়’। এ অভিযোগ জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে পাভেলসহ কয়েকজন হেড গার্ডকে মারপিট করে। এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম এর তীক্ষèদৃষ্টিতে নিখুঁত উদ্ধারকৃত তথ্য হচ্ছে, ১৩ আগস্ট কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে একটি সভা হয়। সভায় ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সভায় হেড গার্ড নূর ইসলামের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়। শনাক্ত করে বন্দি কিশোরদের রুম থেকে বের করে আনা হয়। কেন্দ্রের গ্রেফতারকৃত পাঁচ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তাদের আজ্ঞাবহ কয়েকজন কর্মচারি ও বন্দি অভিযুক্তদের মুখে গামছা ঢুকিয়ে লোহার রড দিয়ে মারপিট করতে থাকে। দফায় দফায় চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মারপিট বন্ধ করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় ৬ঘন্টা একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়। চিবিৎসা দেয়া হয় একজন কম্পাউন্ডার দিয়ে। আহত বন্দি কিশোরদের মধ্যে একজন মারা গেলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে খবর পেয়ে দ্রুত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গিয়ে তারা প্রত্যক্ষ করেন একটি ঘরে গাদাগাদি করে আহতদের ফেলে রাখা হয়েছে। দুপুরের খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে আরো দুইজন মারা যায়। একে একে হতাহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রের হত্যাকান্ডের ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন, কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি কারিগরী প্রশিক্ষক ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান।

উল্লেখ্য, সংশোধনী কেন্দ্রে যারা নিহত হয়েছে তারা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু প্রামানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলেল রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)। এদিকে, আহতদের যশোর ২৫০ বেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 



 

Show all comments
  • Kamrul ১৫ আগস্ট, ২০২০, ৬:৪২ পিএম says : 0
    যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের পাঁচ জন ষ্টাফ এর নাম দেখে মনে হয় তারা মুসলিম। কিন্তু কাজ তো করেছে চতুষপদ জানোয়ারের চেয়েও খারাপ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ