Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লোহাগড়া পৌর নির্বাচন আ.লীগ ও বিদ্রোহী হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের আভাস

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুস ছালাম খান, লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে

আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভা নির্বাচন শেষ মুহূর্তে বেশ জমে উঠেছে। নৌকা ও ধানের শীষ ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীসহ মোট চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মার্কা নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। স্থানীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের যৌথ প্রচারণায় নৌকা মার্কার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে নেতাদের দাবি। সর্বশেষ গত বুধবার দিবাগত রাতে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল, অস্ত্রসহ এক যুবক আটক এবং আশরাফুল আলমের সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ নৌকার জন্য শাপেবর হয়েছে। কারণ এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা একাধিক মামলায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জগ মার্কার সমর্থকরা গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত লোহাগড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ¦ন্দ্বিতা হবে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নেওয়াজ আহমেদ ঠাকুর নজরুলের। প্রথম দিকে এমনটি ধারণা করা হলেও অবস্থা দৃষ্টে এখন মনে হচ্ছে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা আশরাফুল আলমের। নৌকা মার্কার প্রার্থী লিপি খানম নির্বাচনে নবাগত এবং মহিলা প্রার্থী হওয়ায় প্রথম দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং সংশয় ছিল। কিন্তু লিপি খানমকে শেখ হাসিনা নিজে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে প্রচার থাকায় সে সংশয় কেটে গেছে। এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিক জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ স্ব স্ব দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থী লিপি খানমের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। গত ৩১ জুলাই লিপি খানমের নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আওয়ামী লীগের নড়াইল জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, উপজেলা সভাপতি শিকদার আবদুল হান্নান রুনুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে জাসদের নড়াইল জেলা সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম খান তার দলের পক্ষ থেকে লিপি খানমকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন ঘোষণা করেন। একই সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সম্পাদক প্রভাষক খান আমিরুল ইসলাম তার দলের পক্ষ থেকে সমর্থনের জন্য তিনি দলীয় সভা আহ্বানের কথা জানান। পরের দিন দলীয় সভা শেষে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সমর্থন জানিয়ে লিপি খানমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েন। ওই দিন থেকে লিপি খানমের নির্বাচনী প্রচারণায় গতি পায়। এদিকে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে বিগত দিনের উন্নয়ন এবং নবগঙ্গা নদীর এপার ওপার ইস্যু। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে পৌরসভা গঠনের পর থেকে এবার নিয়ে তৃতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত লোহাগড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পর পর দুবারই আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যায় মেয়র পদটি। এ সময় মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নেওয়াজ আহমেদ ঠাকুর। পর পর দুবার তিনি মেয়র থাকলেও এই দীর্ঘ সময়ে লোহাগড়া পৌর এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। এমনকি এই দীর্ঘ ১৩ বছরে পৌর ভবনটিও নির্মাণ করা হয়নি। একটি ভাড়া বাড়িতেই চলে পৌরসভার কাজ। লোহাগড়া বাজারসহ পৌর এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাজারের উত্তর পাশের প্রধান রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে কাদা পানিতে তলিয়ে থাকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণের চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। তবে এ ব্যাপারে পৌর মেয়রের দাবি তিনি বিএনপির লোক বলে আওয়ামী লীগ আমলে কোনো সরকারি বরাদ্দ পাননি, যে কারণে উন্নয়নমূলক কাজও করতে পারেননি। এ ব্যাপারে পৌর শহরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শরীফ মাহাবুবুল করিম বলেন, উন্নয়ন ইস্যুতে নজরুল সাহেব পিছে পড়ে গেছেন। তাই এবারের নির্বাচনে নৌকার সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগ সভাপতি মোঃ আশরাফুল আলমের জগ মার্কার সাথে। উল্লেখ্য, বিগত দুই নির্বাচনেই আশরাফুল আলম দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত মেয়রের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় অনেকেরই ধারণা ছিল দলীয় মনোনয়ন আশরাফুল আলম পাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসেন ইডেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেত্রী লিপি খানম। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ¯েœহভাজন হওয়ায় নেত্রী নিজেই তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। লোহাগড়া পৌরসভাটি স্থানীয় নবগঙ্গা নদী দ্বারা বিভক্ত হওয়ায় ভোটারদের কাছে এ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যু। সে হিসেবে তিনজন প্রার্থীর বাড়িই নবগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাড়ে। নদীর উত্তর পাড়ের বিশাল এলাকার একমাত্র প্রার্থী লিপি খানম। অর্থাৎ এপার-ওপার ইস্যুতেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে লিপি খানম। এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনেক আগে থেকে আরেক প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য মোঃ শরিফুল ইসলাম এলাকায় শতাধিক গভীর নলকূপ দান করে পৌরবাসীর নজরে আসেন। উল্লেখ্য, লোহাগড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২০,৬৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০,৫৯২ জন এবং মহিলা ভোটার ১০,০৪৪ জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা মেয়র পদে ৪ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১। আগামী ৭ আগস্ট ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লোহাগড়া পৌর নির্বাচন আ.লীগ ও বিদ্রোহী হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের আভাস
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ