Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অদক্ষ চালক ও জরাজীর্ণ ফেরিতে পারাপারে ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচলরত এয়ারপোর্ট যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। অদক্ষ চালক দিয়ে ফেরি চলাচলের কারণে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের। প্রায়ই সময়ই চলাচলরত ফেরির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। এসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারণের। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত এয়ারপোর্ট যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর এ ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক যোগে আসা বিভিন্ন জেলা-উপজেলার এয়ারপোর্ট যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করে থাকেন। বিশেষ করে কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলিবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এলাকার এয়ারপোর্ট যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করে। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলাচলের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ফেরি পথ ব্যবহার করছে অনেক যানবাহন। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রী সাধারণ শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানাবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারণেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দুটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওই দুটি ফেরি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ বছর ৪০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন সাহেদ এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফেরি দুটি পরিচালনা করছেন ইজারাদার শহিদুল্লাহ শহিদ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারের রাস্তাটি প্রসস্থ অনেক কম। এ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সব সময়ই এসব ভাঙা গর্তে পানি জমে থাকে। গর্তে পড়ে প্রায় সময়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে এয়ারপোর্ট যাত্রীবাহী যানবাহনসহ হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি দুটি দিয়ে এসব যানবাহন সময় মতো পারাপার করতে না পারায় বেশিরভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাং ব্রিজ দুটির বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। স্টিলের সিটগুলো খসে খসে পড়ছে। গ্যাং ব্রিজের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেলু মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে পারছেন না। এছাড়া বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার সঙ্গে লাগানো গ্যাং ব্রিজের অংশটুকু ডুবে গেছে। ডুবে অংশ ও ভাঙা স্থান দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোর। ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টিলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহনগুলো সিøপ করে। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও ফেরির বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি সব সময় নষ্ট বা বিকল অবস্থায় থাকে। ওই ফেরিতে ইঞ্জিন পাল্টানো হলেও কোন কাজে আসছে না। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো ওই পার না পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল স্রোতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পড়ে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়। অপর যেই ফেরিটি রয়েছে, সেটির তলার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বেশ কয়েক স্থান দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। অতিরিক্ত পানি ঢুকে ফেরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা হয়ে যায়। যাত্রীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এসব বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষ গড়িমশি করছে বলে অভিযোগ যানবাহন চালকদের। অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মজিদ, নুর হোসেন ও আব্দুল আলীম ফেরি দুটির ইঞ্চিন ধোয়া-মোছার দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ তাদেরকেই ফেরির চালক হিসেবে ব্যবহার করছে সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েকজন যানবাহন চালক বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হবো কেন? সাহেদ এন্টার প্রাইজের মালিক ইজারাদার শহিদুল্লাহ শহিদ বলেন, আমরা এসব সমস্যার ব্যপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সমস্যা সমাধান করে দিবেন। রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূঁইয়া রানু বলেন, ফেরির পরিস্থিতি খুব খারাপ, এ ফেরি দিয়ে শত শত মানুষ চলাচল করে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়ার দাবি জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ফেরির নানা সমস্যা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বিষয়ে জেলা পরিষদকে অবহিত করা হবে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদের ম্যাকানিকেল বিভাগের (ফেরি) নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাস বাবু বলেন, ইজাদার সমস্যাগুলো আমাদের জানিয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অদক্ষ চালক ও জরাজীর্ণ ফেরিতে পারাপারে ঘটছে দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ