Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষুব্ধ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন খসড়া বিধিমালায় বড় ধরণের অসামঞ্জস্য দেখা নিয়েছে। সেখানে ১৬তম ও ১৭তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হলেও ১৪তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বরং তাদের পদোন্নতির জন্য অভিজ্ঞতা ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ অফিস সহায়ক, প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যান থেকে পদোন্নতি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আমলে নেয়া হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ এবং ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ নামে পৃথক দু’টি বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এখনো চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। চ‚ড়ান্ত হলে কারো কোন সমস্যা থাকবে না।

জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে প্রণীত বিধিমালা বৈধতা হারিয়ে ফেলায় মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য পৃথক দু’টি বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ নামে পৃথক দু’টি বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। যা ভেটিং-এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়। ভেটিং-এ একই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রান্ত পৃথক দু’টি বিধিমালা প্রণয়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, দু’টি বিধিমালা একত্রিত করে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা গেলে স্বচ্ছ ও সহজবোধ্য বিধিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এছাড়া বেশকিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্যের কথা তুলে ধরে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রতিটি পদের বিপরীতে পদ সংখ্যা, বেতন স্কেল ও গ্রেড উল্লেখ থাকা আবশ্যক হলেও তা করা হয়নি। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতির কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় ওই দু’টি পদের উল্লেখ নেই। এছাড়া বিদ্যমান বিধিমালার নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতে ৬টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। ওই সকল মামলার কোন আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকলে তা আমলে নেয়া হয়েছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের ওই পর্যবেক্ষণ ছাড়াও প্রস্তাবিত বিধিমালায় আরো কিছু গড়মিল ও অসামঞ্জস্য রয়েছে। যাতে একটি বড় অংশের কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হবেন। যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিব এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বিধিমালায় তহশিলদার, সহকারী তহশিলদারদের পদবী বিধি বহিভর্‚তভাবে পরিবর্তন করে ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভ‚মি উপ-সহকারী কর্মকর্তা করা হয়েছে। তাদের বেতন গ্রেড যথাক্রমে ১৬তম ও ১৭তম হলেও তা ১১তম ও ১২তম গ্রেড দেখানো হয়েছে। তাদের কানুনগো পদে পদোন্নতির জন্য ৫ বছরের চাকরির যোগ্যতা সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ সার্ভেয়াররা ১৪তম গ্রেডে কর্মরত থাকার পরেও কানুনগো পদে পদোন্নতির জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা আমলে নেয়া হয়নি বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

নিয়োগ বিধিমালায় ফিডার পদধারীতে পদোন্নতির বিধান না রেখে ১০০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ সব মন্ত্রণালয় দফতর ও অধিদফতরে ফিডার পদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান আছে। ২০০১ সালে নিয়োগবিধিতে চতুর্থ শ্রেণির পদ অফিস সহায়ক (পূর্বের পদ এমএলএসএস), প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যান থেকে ইউনিয়ন ভ‚মি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে ২০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও নতুন বিধিমালা ১০০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অসংখ্য কর্মচারী পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিএসইবি)’র চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুষার ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সার্ভেয়াররা। অথচ তাদেরকে নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ভূমি মাঠ প্রশাসন সরকারি কর্মচারী পদোন্নতি বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়, উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন অফিসে বিভিন্ন পদে সাড়ে ১২ হাজার কর্মচারী কাজ করছে। তাদের জন্য ২০০১ সালে নিয়োগ বিধিতে ২০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হলেও নতুন বিধিতে ১০০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।



 

Show all comments
  • Nazmul Huda ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৯ এএম says : 0
    সরকারি দপ্তরগুলোর দায়সারা কাজের কারণে এই সমস্যার জন্ম হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:০১ এএম says : 0
    ১৪ গ্রেডের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি এখন তারা কি করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানা আদালতকে অবমাননার শামিল। িএকটা সমস্য সমাধানে কত সময় চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
    মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষোভকে ভূমি মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন করলে তো সামাধান হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    নিয়োগ বিধি দ্রুত সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুজ্জামান ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৭ এএম says : 0
    নিয়োগবিধি গুলো অবশ্যই যৌক্তিক হওয়া জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • আমান ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৮ এএম says : 0
    সরকারের ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সার্ভেয়াররা। অথচ তাদেরকে নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md ShamimParvez ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১১:২৮ এএম says : 0
    অফিস সহায়ক পদ থেকে ইউনিয়ন ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে ৩০% পদোন্নতি বহাল চাই ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আসাদুজ্জামান সুমন ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১১:৩১ এএম says : 0
    "ইনকিলাব" কে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিছু কথা না বললেই না, তাই বলছি... ভূমি প্রশাসন সম্পর্কে আরো একটু খোজ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ১৬ গ্রেডের সার্টফিকেট পেশকার, সার্টিফিকেট সহকারি, নাজির, সহ আরো কিছু পদকে বঞ্চিত করে ১৬ ও ১৭ গ্রেডের তসিলদার ও সহকারি তসিলদারদের পদবী ও বেতন গ্রেড পরিবর্তন করা হয়েছে। ভূমি অফিসের অন্যান্য সকল পদের সাথে সমন্বয় না করে কেন এটা করা হল জানিনা। সম্প্রতি ভূমি অফিস ই-নামজারি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে। এতে প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচা্রীরই সমান অবদান। তবে কিছু নির্মম বাস্তবতাও আছে। তসিলদার ও সহকারি তসিলদারদের নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ আছে। যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে ৮০% এর বেশি কম্পিউটার চালাতে পারেন না। "ই-নামজারির" মত এত বড় মহাযজ্ঞ বেশির ভাগ উপজেলায় বাস্তবায়ন হয়েছে উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত সার্টফিকেট পেশকার, সার্টিফিকেট সহকারি, নাজির দের কাধে ভর করে... কর্তাব্যক্তিরা শীতল কক্ষে বসে তার কোন খবর রাখেন না। উপরোন্ত বৈষম্যমূলক আচরন করে কর্মচারীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। একই বাসায় যদি দুই ভাইয়ের সাথে বাবা মা দুই ধরনের আচরন করে তাহলে ক্ষুব্ধ হওয়াটা তো স্বাভাবিক। এ বৈষম্য পূর্বে অন্য দপ্তরে সাথে ছিল, কিন্তু এখন নিজের দপ্তরের মধ্যেই প্রকট। এ অবস্থার অবসান হওয়াটা খুবই জরুরী......
    Total Reply(0) Reply
  • ABUL KALAM AZAD ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকলের জন্য একটি নিয়োগ বিধিমালা হলেই তো ভালো হয়। তা না করে কাদের সুবিধার্থে এক মন্ত্রণালয়ের জন্য দুইটি বিধিমালা। কাউকে কোলে নিচ্ছে কাউকে পিঠে নিচ্ছে। পূর্বে তো সকলের পদোন্নতির ব্যবস্থা ছিল এখন বাদ দেয়া হচ্ছে কেন? সবাইতো যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি পায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূমি মন্ত্রণালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ