Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এসডিজির লক্ষ্য পূরণ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জে শুরুতে ধাক্কা

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী সারা বিশ্ব এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিজ দেশের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সাজানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক এই উন্নয়নের লক্ষ্যে। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া এই এসডিজিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এর আগে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এমডিজি) বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করলেও এবারে রয়েছে তলানীতে।
২০০টি দেশের জন্য ১৫ বছরের জন্য তৈরি করা ওই পরিকল্পনার ১ বছরের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮ তম। ১৭ লক্ষ্য ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত সম্মিলিত প্রচেষ্টা, জনগণের অংশগ্রহণ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে বলা হলেও এর কোনটিই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর উপর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া দাপ্তরিকভাবে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ছিল সেগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এতে করে এসডিজির ১৭ লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ে পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত মাসে এসডিজির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট দেশের অগ্রগতি তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮। এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়া সব দেশই বাংলাদেশের উপরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থা নাজুক। ১১০তম অবস্থান নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ভারত। এর পরই রয়েছে পাকিস্তান। যার অবস্থান হচ্ছে ১১৫। পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে মিয়ানমার। তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে সুইডেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষার সমস্যায় জর্জরিত। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর মধ্যে অসমতা চরম পর্যায়ে বিরাজ করছে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো সামাজিক সেবা নিশ্চিত, জনসংখ্যা অনুযায়ী অবকাঠামো সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে ভালো করলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে। এর আগে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশসহ ১৭টি ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এসডিজির কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিশ্ব নেতারা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে বিশ্ব অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জাতিসংঘের গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশগুলো প্রস্তুতিও নিয়েছে। বেশির ভাগ দেশই ইতিমধ্যে তাদের জাতীয় উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ সমন্বয় করে নিয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক সম্পদের প্রাপ্যতা ও তথ্য-উপাত্তের সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিও বর্তমানে দুর্বল প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের মধ্যে রয়েছে। আর পৃথিবী শান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে এসডিজি গ্রহণ করা হয়। এর ১৭টি অভীষ্ট এবং এগুলোর অন্তর্গত ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস আসলে একবছর পূর্তি হবে এসডিজির। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
এসডিজি বাস্তবায়নে গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্য মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আহ্বায়ক করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৮ জুন এ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমানে কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৬। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম। কমিটি ইতিমধ্যেই এসডিজি লক্ষ্যসমূহ কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কোনগুলি বাস্তবায়ন করবে এবং কোন মন্ত্রণালয় লিড এজেন্সি হিসেবে কাজ করবে এর একটি খসড়া ম্যাপিং তৈরি করেছে। বিভিন্ন সময় ম্যাপিং-এর ওপর আলোচনা, মতামত গ্রহণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ম্যাপিংয়ে লিপ, কো-লিড এবং অ্যাসোসিয়েট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নির্ধারণ করে খসড়া তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। এরপরই তৈরি হবে এসডিজি বাস্তবায়নের এ্যাকশন প্ল্যান।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসডিজি ঘোষণারও আগে বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাথে এসডিজি এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে আনুষ্ঠানিক যাত্রায় আরো সময় লাগবে। কারণ হিসেবে জানা গেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ম্যাপিং করা এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতেই চলে যাবে এ সময়।
এসডিজি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, এমডিজি অর্জনে আমরা যেমন সফল হয়েছি তেমনি এসডিজি অর্জনেও সফল হতে চাই। এজন্য শুরু থেকেই এটি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দুই মাস পর পর এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা জাতিসংঘের জন্য নয়, নিজেদের জন্যই এসডিজি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছি।
এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট হচ্ছে, দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, গুণগত শিক্ষা, নারী-পুরুষের সমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানী, যথাযোগ্য কর্ম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, অসমতা হ্রাসকরণ, টেকসই নগর ও সমাজ, দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন, জলবায়ূ পদক্ষেপ, জলজ জীব, স্থল জীব, শান্তি ও ন্যায়বিচার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এসডিজির লক্ষ্য পূরণ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জে শুরুতে ধাক্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ