Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ৮:৫৪ পিএম

গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে। যেখানে এর আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে তাই নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ। বাংলাদেশের অবকাঠমোখাতে বৃহৎ প্রকল্পগুরোতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করেন তিনি।

বুধবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের সাথে বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ সব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এবং যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। আয়োজিত ওয়েবিনার ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

শামস মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়। যেখানে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ২০০টি বৃটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের অবকাঠমোখাতে বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষনে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কোডিভ পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য বলবদ রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে, ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুদেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের আহŸান জানান।

মূল প্রবন্ধে ড. সেলিম রায়হান উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০ শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১৮৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড, কিন্তু বাংলাদেশ এসেছে মাত্র শুণ্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরো বাড়াতে তিনি বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রæততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন, খুবই জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, সুদৃঢ় অতীতকাল হতেই বৃটেন বিশ^বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রেখে আসছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বৃটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দু’দেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যে যোগাযোগ আরো সুদৃঢ়করন, কোভিড উত্তর বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘মার্কেট স্ট্রাটেজি’ প্রণয়ন এবং বৃটিশ-বাংলাদেশীদের আরো বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন।

যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ই-কমার্স বাজার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। হাইকমিশনার বলেন, বৃটেনে হালাল পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশাল বাজার রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজেই এ সুযোগ নিয়ে আরো বেশি হারে পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করতে পারে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের ঔষধ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতসমূহে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষনে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি বৃটেনে ‘বাংলা বন্ড’ চালু হয়েছে, যা দুদেশের উদ্যোক্তাদের আতœবিশ^াস ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। তিনি দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশস্থ বৃটিশ হাইকমিশন হতে সর্বাত্নক সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।

নির্ধারিত আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং রহিম আফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেস-এর নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম অংশগ্রহণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ