আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটরা ‘চুরি’ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (২৪ আগস্ট) নর্থ ক্যারোলিনায় রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনের প্রথম দিনে আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পর বক্তব্যে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
সোমবার কনভেনশনের বক্তব্য দিয়ে নজর কেড়েছেন প্রেসিডেন্টের পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত নিকি হ্যালি। ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র করোনা মহামারি মোকাবেলায় তার পিতার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট করোনা সঙ্কটে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ যদিও, অনেক আমেরিকানই বিশ্বাস করেন যে, মহামারীটি নিয়ন্ত্রণে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত নিকি হ্যালিও ট্রাম্পের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন। ভাইস-প্রেসিডন্ট পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জবাবে ভারতীয় বংশোদ্ভ‚তদের মন জিততেই নিকি হ্যালিকে রিপাবলিকানরা ব্যবহার করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কনভেনশনে ট্রাম্প, নভেম্বরের নির্বাচনে ‘চুরি’র করে জেতার চেষ্টা করছে বলে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তার বক্তব্যের সপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘মেইল-ইন ব্যালট ভোটার জালিয়াতির কারণ হতে পারে।’ তার দাবি, ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকানদের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য ‘কোভিড-১৯’কে ব্যবহার করছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এই নির্বাচন আমাদের কাছ থেকে তারা শুধু তখনই নিতে পারবে, যখন নির্বাচনে কারচুপি হবে। আমরা জিততে যাচ্ছি। ’
গত সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলনকে ‘অন্ধকার ও হতাশাচ্ছন্ন’ হিসেবে চিত্রিত করা রিপাবলিকানরা তাদের সম্মেলনে ‘উদ্দীপনা ও ইতিবাচক বার্তা’ থাকবে বলে আশ্বস্ত করলেও প্রথম রাতের মূল বক্তাদের কথায় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কী কী ক্ষতি হবে সেই বিষয় প্রাধান্য পায়। ট্রাম্পের প্রচার উপদেষ্টা কিম্বারলি গুইলফয়েলতারা বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা আপনার স্বাধীনতা, আপনার মুক্তি চুরি করতে চায়। তারা চায় আপনি যা দেখছেন, যা চিন্তা করছেন, যা বিশ্বাস করছেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে, যেন তারা আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ সোমবার রাতে দেয়া বক্তৃতায় অনেকেই বাইডেন ও তার রানিং মেট মার্কিন সিনেটর কমলা হ্যারিসকে উগ্র বামপন্থিদের ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। পুরো সম্মেলনেই এই প্রসঙ্গটি বারবার ঘুরে ফিরে আসবে বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
বাইডেন পুলিশের তহবিলে কাটছাঁট করবেন এবং তেল-গ্যান উত্তোলনে ‘ফ্র্যাকিং’ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করবেন বলে রিপাবলিকান সম্মেলনের প্রথম রাতে কথা বলা একাধিক বক্তা অভিযোগ করেছেন। এ দিনের সম্মেলনে সাউথ ক্যারোলাইনার কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি তাদের বক্তৃতায় বাইডেন ও তার দল ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যালঘু ভোটারদের স্বার্থ রক্ষায় রিপাবলিকানদের চেয়ে ভালো, এমন ধ্যানধারণা উড়িয়ে দেন। হ্যালি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটদের বেশিরভাগের কাছেই এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বর্ণবাদী বলাটা ফ্যাশনেবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটা মিথ্যা, যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বর্ণবাদী দেশ নয়।’
সম্মেলনে প্রচারিত এক ভিডিওতে মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গুণগানও গাওয়া হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের পাশাপাশি অন্যান্য ভোটারদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এদিন রিপাবলিকান সম্মেলনের বক্তা তালিকায় ছিলেন আমেরিকান ফুটবলের এক সময়কার কৃষ্ণাঙ্গ তারকা হারশেল ওয়াকার ও বাল্টিমোরের কংগ্রেসনাল নির্বাচনের কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী কিম ক্ল্যাচিকও। ট্রাম্পের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোর ভোটারদের খুশি রাখতে রিপাবলিকান সম্মেলনের প্রথম রাতে গুরুত্ব পেয়েছেন মার্ক ও প্যাট্রিসিয়া ম্যাকক্লোস্কিও; তিনি বাড়ির পাশ দিয়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বিক্ষোভ যাওয়ার সময় এ যুগল আন্দোলনকারীদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে জরিপে হিলারি ক্লিনটন থেকে পিছিয়ে থাকা অবস্থায়ও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে। করোনা ভাইরাসের কারণে যেসব ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারবেন না, তাদের জন্য রয়েছে মেইল-ইন ভোটের ব্যবস্থা অর্থাৎ ভোটের কাগজ পূরণ করে ডাকবিভাগের মাধ্যমে তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই মেইল-ইন ভোটিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী তা ব্যবহার করে। তবে এবার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারদেরও এ সুবিধা দেয়া হবে। তবে ট্রাম্প শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স।