Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত : সারা দুনিয়ায় শান্তি দাও আমাদের ওপর রহম করো

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০১ এএম, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬

দেলোয়ার হোসেন/মো: হেদায়েতউল্লাহ : মসজিদভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে শেষ হলো এবারের ৫১ তম বিশ্ব ইজতেমা। আখেরী মোনাজাতের আগে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ তাঁর সমাপনী বয়ানে সাহাবা কেরামের তরিকায় মসজিদ কেন্দ্রিক দাওয়াতী কার্যক্রম জোরদার করার আহবান জানিয়ে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন। তিনি বলেন, হুজুর পাক (সা.) এর জামানায় মসজিদ আবাদের যে পরিবেশ ছিল সেই পরিবেশ চালু হলে সমাজ থেকে বাতেলের আসর (প্রভাব) খতম হয়ে যাবে। সেই সময় কোন মুসলমান নামাজ ছেড়ে দেবে তা কল্পনাও করা হতো না। বরং কাফের-মুশরিকদের দাওয়াত দেয়া হতো এই শর্তে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’ এই কথা বিশ্বাস করার পর তাকে নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে, যাকাত দিতে হবে এবং মহান আল্লাহর অন্যান্য হুকুম পালন করতে হবে। কিন্তু লজ্জাজনক হলেও সত্য যে আজ মুসলমানদেরকে ? নামাজের দাওয়াত দিতে হচ্ছে।
মাওলানা সা’দ সাহেব মসজিদ কেন্দ্রিক দাওয়াতী কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক দীর্ঘ সমাপনী বয়ান শেষে দরুদ শরিফ পড়ে সকাল ১১টা ৩মিনিটে আখেরী মোনাজাত শুরু করেন। তাঁর কান্নাজড়িত এই আখেরী মোনাজাত চলাকালে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়। নীরব নিস্তব্ধতা নেমে আসে গোটা এলাকায়। মাঝে মধ্যে এই নীরবতা ভেঙ্গে ‘আমিন; আল্লাহুম্মা আমিন; ছুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত প্রকম্পিত হয়ে উঠে ইজতেমা ময়দান। বেলা ১১টা ৩১ মিনিটে শেষ হয় তাঁর আখেরী মোনাজাত। দরুদ শরিফের পর তিনি কালামে পাকের দোয়ার আয়াতগুলো দিয়ে মোনাজাত শুরু করেন। দীর্ঘ ২৮ মিনিটের মোনাজাতের প্রথম প্রায় ১২ মিনিট তিনি কালামে পাকের বেশ কিছু দোয়ার আয়াত উচ্চারণ করেন পাশাপাশি আরবিতে পরওয়ারদিগারের কাছে ফরিয়াদ জানান। এর পর মোনাজাতের বাকি অংশে তিনি উর্দু ভাষায় মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আকুতি জানান। আরবিতে মোনাজাত চলাকালে তিনি সূরা বাকারার শেষাংশের দোয়ার আয়াতের একাংশ (ফান্সুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন অর্থাৎ কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো) একাধিকবার উচ্চারণ করেন। উর্দুতে মোনাজাতকালে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের দরবারে দুনিয়া থেকে শিরক ও বিদআতের খতম কামনা করেন। দ্বীনের হিজরত ও মেহনতকে কবুল করার আকুতি জানান। বনি আদমের হেদায়েত, উম্মতে মুহাম্মদির জান-মাল হেফাজত, সকল বেমারি থেকে আরোগ্য, সিরাতুল মুস্তাকিম ও ইবাদতে ইখলাস নসিব কামনা করেন। ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি, দ্বীনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক কামনা এবং তাবলীগের মেহনত ও ইজতেমাকে কবুল করার আকুতি জানিয়ে আখেরী মোনাজাত শেষ করেন। উপমহাদেশের শীর্ষ বুজর্গ মাওলানা সা’দ সাহেবের মোনাজাত চলাকালে সুবিশাল ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র করে গতকাল ইজতেমা ময়দান ও চারপাশ এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ইজতেমা অভিমুখে মুসল্লীরা আসতে শুরু করেন। ফলে টঙ্গী যেন সকল পথের মোহনায় পরিণত হয়। আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার রাত ৩টা থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে গাজীপুর ভোগড়া চৌরাস্তা, টঙ্গী-আশুলিয়া রোডের বাইমাইল ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ-নরসিংদী রোডের মিরের বাজার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
আবেগঘন আখেরী মোনাজাতে লাখো কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রহীম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। আমীর-ফকির, ধনী-গরীব, নেতা-কর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশা-গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মুঠোফোন, রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশেরও লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে হাত তুলেছেন পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে।
মোনাজাতে আরো যা বলা হয় ঃ মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লিভিত্তিক তাবলীগের প্রধান মারকাজের শুরার অন্যতম সদস্য হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ। বাদ ফজর থেকেই তিনি বয়ান করেন। তার বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জুবায়ের। মোনাজাতে তিনি বলেন, হে আল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, মোনাফেকি দূর করে দাও। হে আল্লাহ, তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্লাহ, আমাদের সকল নেক হাজাত পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহীম আমাদের ওপর রহম করো। আমাদেরকে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমাদের ওপর দয়া করো যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের ওপর রহম করেছ। হে আল্লাহ, আমাদের পরিপূর্ণ ঈমান দাও। তোমার আজাব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাত নসিব করো। জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য হারাম করে দাও।
কায়মনোবক্যে আকুতি জানিয়ে মোনাজতে আরো বলা হয়, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেইতো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের উপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সকল বালা-মসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। সারা দুনিয়ায় শান্তি দাও। নবীওয়ালা জিন্দেগী আমাদের নসীব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছে তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছে সকলকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সকলকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো।
ইজতেমা মাঠের অদূরে ‘টাইম বোমা’, রিমোট কন্ট্রোল উদ্ধার ঃ টঙ্গীর ইজতেমাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে স্থানীয় কুনিয়া পাচর বালুর মাঠ নামক একটি স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি রিমোটসহ পাঁচটি টাইম বোমা পুলিশ উদ্ধার করেছে। আখেরী মোনাজাতের পর বেলা পৌনে ১২টায় বোমাগুলো ইজতেমায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রেখে সংবাদ ব্রিফিং করেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ। এসময় তিনি জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার ভোরে কুনিয়াপাচর বালুর মাঠে তল্লাশী চালিয়ে ওই পাঁচটি বোমা ও রিমোট উদ্ধার করা হয়। বোমাগুলো দূর নিয়ন্ত্রিত বলে তাদের ধারণা। প্লাস্টিকের জিআই পাইপে লাল, কাল, সবুজ ও হলুদ রঙের স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ও তার পেঁচানো পাঁচটি বোমায় ঘড়ি বসানো রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় নাশকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য একটি গোষ্ঠী বোমা বহন করছিল। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার কারণে দুর্বৃত্তরা সেগুলো ইজতেমা ময়দানের দূরবর্তী এলাকায় ফেলে পালিয়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
ইজতেমায় তাবলীগের বই বিক্রিতে পুলিশের বাধা ঃ ইজতেমা ময়দান এলাকায় ‘তাবলীগ বিরোধীদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বই বিক্রিতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বইটির লেখক শায়খুল হাদীস মুফতী সুলতান আহমাদ। তিনি জানান, মাদ্রাসার ছাত্ররা ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন প্রবেশ পথে বইটি বিক্রিকালে কিছু পুলিশ সদস্য বইসহ ছাত্রদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পুলিশ ইজতেমা এলাকায় কোন স্টলেও বইটি বিক্রি করতে দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার এব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। এব্যাপারে তাবলীগ জামাত কর্তৃপক্ষেরও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাবলীগ জামাতের স্থানীয় একজন মুরব্বী জানান, তাবলীগ জামাতকে কেউ কোন চ্যালেঞ্জ করেনি। তাবলীগ জামাতও কাউকে চ্যালেঞ্জ করেনি। এধরণের বই প্রকাশ করে কেউ অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সবাইকে এব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হওয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
দুই পর্বে ইজতেমা ময়দানে ১৬ মুসল্লির মৃত্যু ঃ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শেষ দিনে আরো তিন মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন। তারা হলেন- কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে নূরুল আলম (৭০), রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজ খিত্তায় অসুস্থ হয়ে মারা যান। একই রাতে মারা যান আবদুল মাবুদ জোয়ার্দার (৫২)। তিনি চুয়াডাঙা সদরের বাদুরতলা এলাকার একরামুল হক জোয়ার্দারের ছেলে। নিজ খিত্তায় অসুস্থ হয়ে মারা যান জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার চর আদরা গ্রামের জাবেদ মোল্লার ছেলে আব্দুল কাদের (৬০) ও আবু তাহের (৪০) তার বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জে।
ইজতেমা ময়দানে তাদের নামাজে জানাযা শেষে নিজ নিজ এলাকায় লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লাশের জিম্মাদার মো. আদম আলী। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মালয়েশিয়ান নাগরিক শাহীদনি ইব্রাহিমসহ মোট ৬ মুসল্লি ইন্তেকাল করেন। প্রথম পর্বে এক বিদেশিসহ মারা যান আরো ৯ মুসল্লি। ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে মোট মারা যান ২ বিদেশি মুসল্লিসহ ১৬ জন মুসল্লি।
মুসল্লিদের বাড়ি ফেরায় চরম দুর্ভোগ ঃ মোনাজাত শেষে লাখো মুসল্লি তাদের নিজস্ব গন্তব্যে যেতে যানবাহন সংঙ্কটে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। মোনাজাত শেষে লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে স্রোতের মতো এক সাথে ফিরতে শুরু করলে এক পর্যায়ে ময়দানের চতুর দিকে ৬/৭ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র জনজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার সকল রাস্তায় এক পর্যায়ে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরার কাফেলায় পরিণত হয়। এ সময় রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এক পর্যায়ে সকল রাস্তাই মুসল্লিদের বাড়ি ফেরার রাস্তায় পরিণত হয়।
মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ঃ দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতেও অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লিও ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়।
টিভি চ্যানেল ও মোবাইলের মাধ্যমে মোনাজাত ঃ আখেরী মোনাজাতের সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও মোবাইল, ওয়ারলেস সেটের মাধ্যমে লাখ লাখ নারী-পুরুষ, ও শিশু টিভির সামনে বসে মোনাজাতে অংশ নেন।
এবারও ১০ কি.মি. এলাকা জুড়ে মানব বলয় ঃ দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনব্যাপী ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জীপ, কার এবং নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে এবং পায়ে হেঁটেই ইজতেমা ময়দানে পৌঁছেন। সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্লিদের কাফেলা। এতে তুরাগের তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানব বলয় সৃষ্টি হয়। মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল থেকেই কনকনে শীত ও কুয়াশা ঠেলে মুসল্লীরা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চারপাশের প্রায় ৬/৭বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে গোটা এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।
নজিরবিহীন নিরাপত্তায় মুসল্লীদের সন্তুষ্টি ঃ এবারের বিশ্ব ইজতেমায় নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১২ হাজারের অধিক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছিল সাদা পোষাকী গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, নৌ-পথে স্পীড বোটে সতর্ক টহল ও নজরদারী। আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্লিসহ সকলের চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে স্থাপিত র‌্যাবের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার রাধানগর গ্রামের মুসল্লি হাজী আবুল হোসেন জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় পুলিশের পক্ষ থেকে যে নজিরবিহীন নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এতে তিনি সন্তুষ্ট। পুলিশ আমাদের শুধু নিরাপত্তাই দেয়নি আমাদের সেবায়ও সার্বক্ষণিক সতর্ক নজরদারী রেখেছে। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপত্তা, যাতায়াত ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বর্তমান সরকার যতটা সম্ভব সার্বিক ব্যবস্থাপনা করেছে। টঙ্গী-গাজীপুরের মানুষও বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছেন। তিনি এবারের বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ইজতেমা সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জানান, বিশ্ব ইজতেমাকে সফল করতে দুই পর্বের ইজতেমাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘন্টা ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক সেবাকার্যে নিয়োজিত করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ ইজতেমা ময়দানের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
এবারের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত ৮ জানুয়ারী শুরু হয়ে ১০ জানুয়ারী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর পর মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে গত ১৫ জানুয়ারী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। গতকাল ১৭ জানুয়ারী রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটল। দুই পর্বে এবারের ইাজতেমায় দেশের মোট ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমায় বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা একইভাবে দুই পর্বে অংশ নেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত : সারা দুনিয়ায় শান্তি দাও আমাদের ওপর রহম করো
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ