Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক মাসেও হয়নি কোনো বন্দুকযুদ্ধ

ওসি প্রদীপহীন টেকনাফ ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ফিরছে পালিয়ে যাওয়া মানুষ

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

টেকনাফ থানার এক সময়ের দাপুটে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন কারাগারে রয়েছেন। মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডের পর ওই মামলার অন্যতম প্রধান আসামিও তিনি। গত ১৫ দিন ধরে টানা রিমান্ডে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বিপর্যস্থ ও বিমর্ষ সেই দাপুটে ওসি প্রদীপ। টেকনাফে ওসি প্রদীপের দুই বছর সময়ে মাদক নির্মূলের নামে কথিত বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে ক্রসফায়ারে ২০৪ জন মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত মানুষ। ওসি প্রদীপ গ্রেফতারের পর গত এক মাস সময়ে একটিও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি।

ওসি প্রদীপের সময়ে টেকনাফ থানায় যে কাউকে যখন তখন প্রদীপ বাহিনী ধরে নিয়ে থানার টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালাত। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করতো। তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দাবি পূরণ করতে না পারলে তাদেরকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতো। আর ভুক্তভোগী পরিবারের মানুষগুলো থানার আশেপাশে আহাজারি করত। গোটা টেকনাফ থানা ছিল যেন একটি কারাগার। আর টেকনাফের মানুষ ছিল ওই কারাগারে বন্দি।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে টেকনাফ শামলাপুর পুলিশ চেক পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই মামলায় ওসি প্রদীপ ও তার বিশ্বস্ত সহযোগী ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দ দুলাল এখন প্রধান আসামি হয় কারাগারে বন্দি। অবশ্য এই মামলায় আরও চার পুলিশ সদস্য সহ মোট ১৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে টেকনাফের মানুষ যেন ওসি প্রদীপ এর ‹টেকনাফ থানা কারাগার› থেকে মুক্তি পেয়েছেন। টেকনাফের মানুষ এখন ফ্রী।

পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের আগে ওসি প্রদীপসহ টেকনাফ থানা পুলিশের এত অপকর্ম নিয়ে কথা বলতে সাহস পায়নি কেউই। প্রদীপ ও লিয়াকত আলীসহ এ মামলার অন্য আসামিরা গ্রেফতার হওয়ার পরে টেকনাফের মানুষ সাহসী হয়ে উঠেছে। তারা ওসি প্রদীপ এর অপকর্মগুলো নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ওসি প্রদীপ এর বিরুদ্ধে টেকনাফ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন থানায় অর্ধডজন হত্যা মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী মানুষ। নির্যাতিত মানুষের পক্ষ থেকে ওসি প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসি দাবি করে টেকনাফে এবং কক্সবাজার শহরে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফের ভুক্তভোগী লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে টেকনাফ থানা এখন নির্জীব। টেকনাফ থানার পুলিশ এখন নিষ্ক্রিয়। দালাল বাটপাররা যেখানে ২৪ ঘণ্টা গিজ গিজ করত সেখানে ওসি প্রদীপ গ্রেফতারের পর তারা পালিয়েছে থানা ছেড়। প্রদীপ সিন্ডিকেটের অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় বদলির তদবিরে থাকলেও অনেকে এখনো ভেতরে ভেতরে ওসি প্রদীপ এর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন বলে জানা গেছ।
অভিজ্ঞজনদের মতে ওসি প্রদীপ এর অপকর্ম এবং মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ড পুলিশের ভাবমর্যাদা কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই ঘটনার পর গোটা কক্সবাজার জেলায় অন্যান্য থানাতেও পুলিশের গাছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে মাদক পাচার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।

এছাড়া ওসি প্রদীপ এর দুই বছরের সময়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিল শত শত মানুষ। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে টেকনাফের ফিরে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছেন এবং আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেকোনো সময় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সূত্রে।

উল্লেখ্য মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার আসামিদের ওই মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।ইতোমধ্যে সিনহা হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি লিয়াকত আলী অন্যতম প্রধান আসামি নন্দ দুলাল এপিবিএন তিন সদস্য ও পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষী জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। একই ভাবে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে অন্যতম প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ টানা ১৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও মুখ খোলেনি বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্দুকযুদ্ধ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ