Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্রেক্সিট চুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে জনসনের পরিকল্পনা আটকে যেতে পারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫৫ পিএম | আপডেট : ১০:০৬ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে ব্রেক্সিট চুক্তি খেলাপ করে উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত বিতর্কিত আইন প্রণয়ন করতে বদ্ধপরিকর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউস অব লর্ডসে এই আইনের অনুমোদন আটকে যেতে পারে বলে জনসনকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লর্ড হাওয়ার্ড জানান, প্রস্তাবিত যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার বিলটি হাউস অব লর্ডসে পাস হলে তিনি ‘খুব আশ্চর্য’ হবেন। স্যার জন মেজর এবং টেরিজা মে’র পরে তিনি হচ্ছেন ব্রেক্সিট সমর্থনকারী তৃতীয় টোরি নেতা, যিনি যুক্তরাজ্যেকে ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে প্রত্যাহারে করা চুক্তির মূল উপাদানগুলো অগ্রাহ্য করতে এই আইনটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করায় প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা করেছেন। জনসন নিজেই আগে এই চুক্তির সমর্থন করেছিলেন এবং গত বছরের জানুয়ারিতে চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেন। তবে তিনি নিজেই এখন আবার এটি বাতিলের চেষ্টা করছেন। এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে জানিয়েছে ইইউ। এ বিষয়ে হাওয়ার্ড বলেন, ‘আইনের শাসনকে ধরে রাখার জন্য আমাদের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এটি এমন একটি খ্যাতি যা অত্যন্ত মূল্যবান এবং এটি রক্ষা করা উচিত।’

ব্রিটিশ সরকার এই আইনটি নিয়ে সিনিয়র টোরি নেতাদের তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনী পদক্ষেপের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। লর্ড হাওয়ার্ড হুঁশিয়ারি দিয়েচেন যে, জনসন যদি তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান তবে সংসদে তীব্র লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমার অনেক রক্ষণশীল সহকর্মী এর বিরোধিতা করার জন্য আমার সাথে যোগ দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাউস অফ লর্ডসে কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সুতরাং, যদি এটি যদি সেখানে পাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

হাউস অফ কমন্সে প্রধানমন্ত্রী জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টির বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তবে সেখানে টরি সাংসরেও বিদ্রোহের সম্ভাবনা রয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির অসন্তুষ্ট সাংসদরা এই আইনটির একটি সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন যেটি সংসদের সমর্থন ছাড়াই সরকারকে ব্রেক্সিট চুক্তি অগ্রাহ্য করতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে। সাবেক সহকারী টরি মন্ত্রী ড্যামিয়ান গ্রিন এবং অলিভার হিল্ডের সমর্থন নিয়ে এই সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন স্যার বব নীল। তিনি টাইমস রেডিওকে জানিয়েছেন, অন্তত ৩০ জন টরি সাংসদ সরকারের প্রস্তাবিত আইনটির বিরুদ্ধে ভোট দিতে যাচ্ছেন।

এদিকে, ইইউ চলতি বছরের শেষে কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু করছে। সেইসঙ্গে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে চলতি বছরের মধ্যে সেই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফলের আশা ক্ষীণ। প্রায় চার বছর ধরে দফায় দফায় আলোচনা ও অনেক নাটকীয় ঘটনার পর ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বরিস জনসনের সরকারই সব শর্ত মেনে সেই চুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের শেষে দুই পক্ষের মধ্যে যতটা সম্ভব বাধাহীন বাণিজ্য চালিয়ে যেতে আলোচনা চলছে। ব্রিটেনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের ফলে এতদিনের পরিশ্রম সম্পূর্ণ বিফল হয়ে যাবে, বিভিন্ন মহলে এমন ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে আগামী বছর ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুল্ক, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মানুষ ও পণ্যের যাতায়াতে নানা বাধা সৃষ্টি হবে।

বরিস জনসনের সরকারের এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিঘ্ন ঘটিয়ে ব্রাসেলসের অবস্থান বদলানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। অনেকের মতে, করোনা মহামারির ফলে চলমান সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতেই তিনি এমন বেপরোয়া আচরণ করছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি অর্থনৈতিক সংকটের দায় চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের উপর চাপাতে পারবেন। তবে এমন পদক্ষেপের ফলে ঝুঁকির মাত্রা এখনই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয় বলে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিচ্ছেন। সূত্র: স্কাই নিউজ, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ