Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আল্লাহর যিকির বান্দাকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে

মাওলানা মুহাম্মাদ আবু জাফর | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯ এএম

মরুভূমিতে এক মেষপালকের নিকট এসে এক নিঃসঙ্গ-পথিক আবেদন করলেন, ‘আমি ক্ষুধার্ত, খাবার বলতে আমার কাছে কিছু নেই; আমি কি তোমার একটি মেষ থেকে কিছু দুগ্ধ দোহন করে নিতে পারি’? মেষপালক বলল, ‘আমি-তো এই মেষের মালিক নই; সুতরাং মালিকের অনুমতি ছাড়া কাউকে দুধ দোহন করতে দিতে পারি না। মালিক নিশ্চয়ই জানতে পারবে এবং সে এটা পছন্দ করবে না’। আসলে পথিকের মনে ছিল অন্য খেয়াল।

তিনি বললেন, ‘তুমি বরং আমার কাছে একটি মেষ বিক্রয় করে দাও। মালিক যখন জানতে চাইবে, তুমি বলবে যে, একটি নেকড়ে বাঘ এসে মেষটিকে ধরে নিয়ে গেছে। নেকড়েরাতো পশুপালগুলোতে প্রায় সময়ই হানা দেয়। আমিও আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারব, আর তুমিও টাকা পাবে, আমাদের দু’জনেরই লাভ হবে’।

মেষপালক অত্যন্ত জোরালোভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর ব্যাপারে কী হবে’? অসাধারণ! এই কথা শুনে পথিক-ব্যক্তিটি আনন্দিত হয়ে বলল, ‘যতদিন পর্যন্ত উম্মাহর মধ্যে তোমার মতো মানুষ থাকবে, নেকড়েরা কখনও কোনো মেষকে আক্রমণ করবে না’।

মেষপালকের এটা আদৌ জানা ছিল-না যে, সে যার সঙ্গে কথা বলছে, তিনি আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রা., যিনি মানুষের হৃৎস্পন্দন অনুভব করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকতেন। আসলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ হলো একজন মুমিনের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং একজন মুমিনের নিকট থেকে এই রকম মন্তব্যই স্বাভাবিক; কারণ সে-জানে, আল্লাহকে স্মরণ করার কী মূল্য!

আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সর্বত্রই নেকড়েরা কেমন অবাধে মেষগুলোকে হত্যা করে চলেছে। কারো অজানা নয়, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই দুর্নীতি আজ একটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু কেন? কারণ হলো, আল্লাহকে স্মরণ রাখার মধ্যেই যে পাপ ও দুর্নীতির প্রতিরোধ নিহিত, এই সহজ কথাটি আমরা অধিকাংশ মানুষ আজ বিস্মৃত হয়েছি।

আমাদের ইহজীবনের এই সফর সম্পর্কে কোরআন বলছে, এটা একটা ক্রমাগত পরিশ্রমের সফর, যার শেষে আমরা আমাদের মহান ¯্রষ্টার সাক্ষাতলাভে ধন্য হব। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানুষ, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছ; অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে’। (সূরা ইনফিতার : ৬)।

যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে, সে-তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে গন্তব্যের প্রতি। এই সফর খুবই শ্রমসাধ্য এবং এখানে চিত্তবিক্ষেপের সম্ভাবনাও বড় বেশি। শয়তান এবং আমাদের প্রবৃত্তি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে আমাদেরকে বিপথগামী করতে। কিন্তু যারা সতর্ক ও জ্ঞানী, তাদের দৃষ্টি কখনোই গন্তব্য ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না; এবং এরাই তারা, যাদের অন্তরে সর্বদা আল্লাহর কথা জাগরুক।

‘নিঃসন্দেহে, আসমানসমূহ ও যমীনের এই নিখুঁত সৃষ্টি এবং দিবারাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য পর্যাপ্ত নিদর্শন রয়েছে। (আর এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় সর্বদা আল্লাহপাককে স্মরণ করে’। (সূরা আল ইমরান : ১৯০-১৯১)।

আল্লাহর স্মরণ অথবা ‘যিকির’ মুসলমানদের জন্য শক্তির একটি উৎস। ‘হাদীসে কুদ্সী’-তে আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি আমার বান্দার সঙ্গে ততক্ষণ থাকি যতক্ষণ সে আমাকে স্মরণ করে’। (সহীহ বুখারী হাদীস : ৬৮৫৬)। এটা এইজন্য যে, অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগি এবং যিকির-এর মধ্যে একটা পার্থক্য বিদ্যমান। অতিমাত্রায় আনুষ্ঠানিক ইবাদতের তেমন আবশ্যকতা নেই; এক্ষেত্রে কারো ইবাদত মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না-ওঠে সে-বিষয়ে বরং সতর্কই করা হয়েছে।

কিন্তু যিকির যেন বেশি-বেশি করা হয়, এই বিষয়টির প্রতি এমনভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে, যাতে আমাদের অন্তর ও জিহবা সততই আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থাকে। আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ও উদাসীন হয়ে না-পড়ি। আর এই কাজে আমরা ক্লান্ত হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতবাসীদের মনে কোনো-কারণেই কোনো দুঃখ থাকবে না; দুঃখ শুধু একটা কারণেই হবে, তাহলো পার্থিব জীবনের যে-মুহূর্তগুলো তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহপাকের স্মরণ থেকে উদাসীন ছিল।’ (তবারানী-২০/৯৪)

 

 

 



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৫ এএম says : 0
    আল্লাহর পবিত্র নামের যে বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে তা অন্য কিছুতে নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৫ এএম says : 0
    আল্লাহর যিকির এমন এক শক্তি, যা দুর্বলকে সবল করে এবং সকল বিপদে দৃঢ়পদ রাখে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৫ এএম says : 0
    কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • দর্শন ই ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৬ এএম says : 0
    কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশিবেশি করতে বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে
    Total Reply(0) Reply
  • বাতি ঘর ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাপকাজ
আরও পড়ুন