Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে বন্যার অবনতি

অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি নদীভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চতুর্থ দফা বন্যায় এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আবাদি ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে চলছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে শত শত পরিবার এখন নিঃস্ব। ধরলার তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ধরলার ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের মালভাঙায় ১৬ ভেন্টের সøুইসগেট ভেঙে এলাকাবাসী হুমকির মুখে। এরই মধ্যে পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রাম শহরে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শহরবাসী।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। টানা চতুর্থ দফা বন্যায় গত দু’দিনে জেলার প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর আবাদি ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সেই সাথে চলছে তীব্র ভাঙন। গতকাল ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমরসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অবস্থা আরো ৩ থেকে ৪ দিন বিরাজ করবে বলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে।
বন্যার ফলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা, যাত্রাপুরের নুরানী মাদরাসা পাড়া ও হলোখানা ইউনিয়নের সারডোবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙছে উলিপুরের বজরা, থেতরাই এবং নাগেশ্বরীর কালিগঞ্জ ও কচাকাটায়। তীব্র স্রোতে রৌমারীর কর্তীমারী, খেদাইমারী ও চর রাজিবপুরের কোদালকাটি এবং মোহনগঞ্জে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়কও।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রামের মানুষ চতুর্থ দফা বন্যার কবলে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে তীব্র স্রোতের কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি অনুক‚লে আসলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত দু’দিনে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ২ হাজার ১০৪ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে আমন ১৮৪০, মাসকালাই ১২৭, শাকসবজি ১২৭ ও বাদাম ১০ হেক্টর।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চলগুলো। ক্ষতির মুখে পড়েছেন তীরবর্তী কৃষকরা।
গতকাল ধরলা নদীর পানি লালমনিরহাটে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে। তবে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ও ধরলার পাশাপাশি জেলার সব নদ-নদীর পানিও বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের পাহাড়ি ঢল ও গত ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়েছে। তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে আছে আবাদি ক্ষেত। বন্যার ধকল না কাটতে ফের বন্যায় পড়ে তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী কৃষকরা দিশেহারা।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেলা ১০টায় বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত সবগুলো জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। ভারত ও দেশের এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি প্রবাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার চর রাজপুর, চর গোকুন্ডা, চর কালমাটি, চর ফলিমারী, ইশোরকোল, পূর্ব ইচলী, রুদ্রেশ্বর, চর ভোটমারী, চর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুনা, গড্ডিমারী, সানিয়াযান, কুলাঘাট, খুনিয়াগাছ, মোগলহাট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, বন্যার ধকল কেটে উঠতে না উঠতেই সুন্দরগঞ্জে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে তিস্তার ভাঙন। বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, লখিয়ারপাড়া শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ