Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ ৯ দিন পর আরো ২ জনের মৃত্যু : নিহতের সংখ্যা ৩৩

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১২ পিএম | আপডেট : ৫:২৭ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় একদিনে আরো ২জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জন হলো।

৪ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণের পর ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১জনের মৃত্যু ঘটেছিল। তখন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিল ৫ জন।
তাদের মধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে মারা যান অগ্নিদগ্ধ আব্দুল আজিজ (৪০)। আজিজের দেহের ৪৭ শতাংশ পুড়েছিল।
দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আব্দুর রহমানের ছেলে ফরিদ (৫৫) মারা যান। ফরিদের (৫৫) দেহের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। দুজনের শ্বাসনালীও পুড়ে যাওয়ায় অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।
ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দগ্ধদের মধ্যে ৩৩ জন মারা গেছেন। তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বিস্ফোরণের সময় আজিজ মসজিদের সামনেই তার লন্ডির দোকানে কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণে দোকানের গ্লাস ভেঙে আগুনের হলকা এসে ঢোকে তার দোকানে। ফরিদ ত্রিশাল থেকে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে নামাজ পড়তে ওই মসজিদে গিয়েছিলেন।
১০ সেপ্টেম্বর সকালে আবদুস সাত্তার (৪০) মারা যান। তার ৭০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। বিকালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শেখ ফরিদ (২১)। এছাড়া নজরুল ইসলাম (৫০) নামের একজনের মৃত্যু ঘটে। তার শরীর ৯৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থেকে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আবদুল হান্নান (৫০) নামে মারা যান। তার ৮৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
এর আগে মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ইমরান (৩০), আবুল বাশার (৫১), মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫), শামীম হাসান (৪৫), স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ নাদিম (৪৫), তল্লার বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ষ্টাফ নূর উদ্দিনের বড় ছেলে নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্র সাব্বির (২১) ও মেজো ছেলে তোলারাম ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র জোবায়ের (১৮), জুলহাস উদ্দিন (৩০), পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক নেসারি (৪৮), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন (১৬), মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস বেপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পোশাক শ্রমিক জুলহাস ফরাজীর ছেলে জুবায়ের ফরাজী (৭), পটুয়াখালীর গলাচিপার আবদুল খালেক হাওলাদারের ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. রাশেদ (৩০), পশ্চিম তল্লার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের জামাল আবেদিন (৪০), পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রিফাত (১৮), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন (১২), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুকপলাশী গ্রামের মেহের আলীর ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. নয়ন (২৭), ফতুল্লার ওয়ার্কশপের শ্রমিক কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শ্রমিক মো. রাসেল (৩৪), বাহার উদ্দিন (৫৫), নিজাম ওরফে মিজান (৪০)।
আইসিইউতে চিকিৎসাধীন যারা : পটুয়াখালীর চুন্নু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ কেনান (২৪), ফতুল্লার নিউখানপুর ব্যাংক কলোনির আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিফাত (১৮), নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসিরহাট গ্রামের আবদুল আহাদের ছেলে আমজাদ (৩৭)।
আহতরা সবাই বিভিন্ন জেলর হলেও তারা শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। এদের প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ।
নিহত ও আহতরা সবাই তল্লা চামারবাড়ি বাইতুস সালাত জামে মসজিদের আশেপাশের বাসিন্দা। আহত ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো তল্লা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘরে ঘরে বইছে শোকের মাতম আর কান্নার রোল। কে কাকে সান্তনা দেবেন সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। স্বাধীনতার পর একসঙ্গে এতো মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম দেখলো তল্লাবাসী। লাশের ভারে রীতিমত স্তব্দ তল্লা যার প্রভাব পুরো নারায়ণগঞ্জে।
৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৪০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মামুন নামের একজন ছাড়া পান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদে বিস্ফোরণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ