Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কৃষিকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে

জালাল উদ্দিন ওমর | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

যুগের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের লাইফ স্টাইল যতই উন্নত এবং আধুনিক হোক না কেন, কৃষির প্রয়োজনীয়তা অপরিবর্তনীয়। কৃষির ওপর মানুষের নির্ভরতা ছিল, আছে এবং থাকবে। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রথমত এবং প্রধানত যার প্রয়োজন তা হচ্ছে খাদ্য। সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রতিটি মানুষকেই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে খাবার গ্রহণ করতে হয়। আর কৃষিই এই খাদ্যের উৎস। সুতরাং মানুষের জীবন প্রত্যক্ষভাবেই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মানব জাতির অস্তিত্বের স্বার্থেই তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থেই কৃষির প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি উন্নয়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কৃষি কাজের আওতায় আনতে হবে এবং প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষ করতে হবে। কৃষি মানে কেবল ধান, গম কিংবা ভুট্টার চাষ নয়। খাদ্যজাত প্রতিটি খাদ্যপণ্যই কৃষির অন্তর্ভুক্ত। আলু, পিয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ, লবণ এবং যাবতীয় মসলা দ্রব্যের সবই কৃষি পণ্য। নানা রকম তরকারি, ডাল, শাক-সবজি, ফলমুল, আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস সবই কৃষি পণ্য। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবই কৃষি পণ্য। সুতরাং সকল ধরনের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে এবং চাহিদার সাথে উৎপাদনের ব্যালেন্স করতে হবে। কিন্তু সকল জমির উর্বরতা এবং উৎপাদন গুণাগুণ এক নয়, অর্থাৎ সব জমি সব ফসলের জন্য উপযুক্ত নয়। এক এক জমি এক এক ফসলের জন্য উপযুক্ত। তাই যে জমি যে ফসলের জন্য উপযুক্ত সেই জমিতে সেই ফসলের চাষ করতে হবে। যে জমিতে ধান ভালো হয় সেই জমিতে ধান, যে জমিতে গম ভালো হয় সেই জমিতে গম আর যে জমিতে তরকারি ভালো হয়, সেই জমিতে তরকারির চাষ করতে হবে। যে জমিতে আম ভালো হয়, সেই জমিতে আমের চাষ করতে হবে। যেই জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়, সেই জমিতে লবণ উৎপাদন করতে হবে। যেখানে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু লালন পালনের সুযোগ রয়েছে, সেই এলাকায় এসব গবাদি পশু লালন পালন করতে হবে। যে জমিতে হাঁস মুরগি লালন পালনের সুযোগ রয়েছে, সেই জমিতে হাঁস মুরগির লালন পালন করতে হবে। আর পুকুর, জলাশয়, হাওর লেক সহ যেসব জায়গায় মাছ চাষের সুযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করতে হবে। পাহাড়ি ভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। আর বসত ভিটায় বাড়ির আশে পাশে যেসব খালি জায়গা রয়েছে সেসব জায়গায় বিভিন্ন জাতের ফলমুল, তরকারি, শাক-সবজির চাষ করতে হবে।

কৃষি সেক্টরের তদারকি, উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদানের জন্য দেশে কৃষি মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় রয়েছে। কৃষিখাতের উন্নয়নের স্বার্থে এসব সেক্টরের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষির উন্নয়নে এসব খাতে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ দিতে হবে, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে। একই সাথে কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষককে ভালো এবং উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করতে হবে, কারণ ভালো এবং উন্নত বীজ ছাড়া কখনো ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। একই সাথে কৃষিজাত পণ্য এবং গৃহপালিত প্রাণীকে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এবং উৎকৃষ্টমানের ঔষধ এবং কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে। একজন কৃষক প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যেন সব ধরনের সহযোগিতা পায়, সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় কৃষি সেন্টার চালু করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এর শাখা থাকতে হবে, যাতে করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষকরা এই সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক সবধরনের সহযোগিতা পায়। এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ এবং বিপণনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য সহজে বিক্রি করতে পারে এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আমরা কৃষক বলি। আর একজন কৃষকই হচ্ছে সত্যিকারের উন্নয়নের কারিগর। তাদের কঠোর পরিশ্রমে ফসল ফলে। তাদের উৎপাদিত ফসলেই সবার মুখে আহার জোটে। শহরের অভিজাত এলাকার অট্টালিকায় আরাম আয়াশে বসবাসকারী মানুষেরা যে খাবার খেয়ে উদরপূর্তি করে এবং রসনা বিলাস করে তা কিন্তু কৃষক-শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমেই অর্জিত। সুতরাং কৃষকদের সম্মান জানাতে হবে এবং তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষক যেন কৃষিকাজের জন্য সহজে ঋণ পায়, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে কৃষি তহবিল নামে বিশেষ ফান্ড গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এদেশে বড় বড় শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ পায়। এসব বড় বড় ঋণ গ্রহিতাদের অনেকেই আবার সেই ঋণ ঠিক মতো পরিশোধ করেন না, ফলে তা মন্দ ঋণে পরিণত হয়। মন্দ ঋণ ব্যাংকিং খাতকে স্থবির করে এবং অর্থনীতিকে গতিহীন করে। বর্তমানে দেশে মন্দ ঋণের পরিমাণ এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি। অথচ একজন কৃষক এক লাখ টাকা ঋণও পায় না। অথচ কৃষক দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।

কৃষকেরাই যে কেবল কৃষিকাজ করবে, তা কিন্তু নয়। যে কোন ব্যক্তি কৃষিকাজ করতে পারে। পুরুষ মহিলা সবাই কৃষি কাজ করতে পারে। ছাত্র, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সবাই কৃষিকাজ করতে পারে। একজন ব্যক্তি যে পেশায়ই নিয়োজিত থাকুক না কেন, তার হাতে কিছু না কিছু সময় থাকে। সেই সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে। বসত ভিটার খালি জায়গাটুকুতে সবজি চাষ ও বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে। বিল্ডিংয়ের ছাদে বাগান করা যেতে পারে। এতে সময়ও ভালো কাটবে এবং কিছু ফসলও উৎপন্ন হবে। গ্রামে গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করে বৃহৎ আকারের গরু, মহিষ, ছাগল, মুরগি এবং মৎস্য খামার গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে দুধ, ডিম এবং মাছ, মাংসের উৎপাদন বাড়বে। এভাবে সবার প্রচেষ্টায় দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। সুতরাং আসুন, আমরা সবাই কৃষি কাজে নিজেদের সাধ্যমত নিয়োজিত করি, কৃষির প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিই এবং এর মাধ্যমে আমাদের সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
লেখক: প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন