বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
৭/৮ বার বাড়ি ভাঙছে। জমিজমা সব ভাঙনে গেছে। এখন এই ভিটাই আছে। সরকার এই জায়গায় বাঁধ কইর্যা না দিলে এই ভিটাতেই জীবন শ্যাষ কইর্যা দিমু আর যামুনা কোথাও। কান্নায় ভেজা চোখ আর কন্ঠে ক্ষোভ নিয়ে এভাবেই শেষ ফরিয়াদটুকু জানাচ্ছিলেন দুই পৌড় ইয়াছিন প্রামাণিক ও রহম আলী। আর মাত্র ফুটখানেক ভেঙে গেলেই প্রমত্ত যমুনায় হারিয়ে যাবে তাদের শেষ সম্বলটুকু। তারা বসেছেন অনশনে দাবি শুধু মাত্র বাঁধ করে দেয়ার যাতে তারা বাঁচাতে পারে শেষ সম্বল ভিটাটুকু মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়।
প্রমত্তা যমুনা নদী অসময়ে ভাঙণের তান্ডবে মেতে উঠেছে। গত ১ সপ্তাহে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর প্রায় ২ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যমুনায় পানির প্রবল স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে, ৮ বার ১০ বার যমুনা ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে যমুনা তীরবর্তী অসংখ্য জনমানুষ। অন্যদিকে, ভাঙনের তান্ডবলীলায় চোখের সামনে একের পর এক ঘরবাড়ি, জমিজমাসহ বিভিন্ন স্থাপনা যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরেও ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ার যমুনা তীরবর্তী এলাকাবাসী অনশনে নেমেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি এলাকার মৃত এনায়েত উল্লাহ মুন্সীর ছেলে বৃদ্ধ ইয়াছিন প্রামাণিক, মৃত রিয়াজ উদ্দিন সরকারের ছেলে শফিউল্লাহ মুন্সী , নকির উদ্দিন ফকিরের ছেলে তয়জাল ফকির, মৃত শমসের আলীর ছেলে শামসুল মোল্লা, জমুর আলীর ছেলে নুরু ফকির, রহম আলী মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, ‘ব্রাক্ষণগ্রাম থেকে হাটপ্রাচীল পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা যমুনার ভাঙন মুক্ত না করায় চোখের সামনে একের পর এক তাদের জমিজমা ঘরবাড়ি সব যমুনা গিলে খাচ্ছে। ৭ বার ৮ বার ৯ বার বা তার চেয়েও বেশী বার যমুনার ভাঙনে তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। শেষ সম্বল তাদের ভিটাটুকু আর যমুনাকে দিতে চায় না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেবেন তবুও ভিটা দেবেন না। আর এ জন্য তারা গত ২ দিন ধরে অনশনে নেমেছেন। সেই সাথে অবিলম্বে তারা ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত এক যুগ ধরে জালালপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙন চলছে। যমুনার কড়াল গ্রাসে একের পর এক বিলীন হয়েছে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় ১১ হাজার ঘরবাড়ি। যমুনা তীরবর্তী হাট বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কমপক্ষে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাঁহ মাঠ, তাঁত কারখানাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন, গত ১ সপ্তাহে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের ২ শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনের কারণে নদীর অদূরে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল ও বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং ইন্সটিটিউট ও দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দ্রুত ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি উঠেছে।’
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অনশনকারীদের সঙ্গে আমরা সমব্যথী। তবে সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী রক্ষায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।