Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দাদার দেয়া আগুনে দগ্ধ নাতনি

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পূর্ব হাজরাপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে বসত ঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরের বিরুদ্ধে। গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় শিশু মিম আক্তারের শরীরের পিঠের পুরো অংশ পুড়ে যায়। প্রথমে শিশুটিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু মিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পূর্ব হাজরাপুর গ্রামে রাজ্জাক শেখের ছেলে আসলাম শেখ ৬ বছর পূর্বে মালয়েশিয়ায় যায়। এরপর থেকে রাজ্জাক শেখের সাথে পুত্রবধূ সম্পা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিরোধ চলে আসছিল। সম্পার শ্বশুর তাকে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য অনেকবার বলে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
গত শনিবার বিকেলে রাজ্জাক শেখের মেয়ে রুনা আক্তার বাড়িতে মিস্ত্রি নিয়ে আসে ভাইয়ের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের ঘর তুলে দেয়ার জন্য। এ সময় রাজ্জাক শেখ পুনরায় তার মেয়ে ও পুত্রবধূকে বাড়িতে ঘর তুলতে বাঁধা প্রদান করে। এ নিয়ে বিকেল থেকে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ করে সম্পা ঘরে আগুন দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে।
এসময় ঘরের মালামালের সাথে শিশু মিম আক্তার আগুনে পুড়ে যায়। সকালে শিশুকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু মিমের আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় গত রোববার রাতে স্থানীয়ভাবে শালিস বসে। শালিসে স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শালিসে সিদ্ধান্ত হয় এখন কোন মামলা করা হবে না এবং শিশুর চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন (টাকাসহ) সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে অভিযুক্ত শিশুর দাদা রাজ্জাজ শেখ। গতকাল সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু মিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পুত্রবধূ সম্পা আক্তার বলেন, অনেকদিন ধরে শ্বশুর আমাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। বাড়ি থেকে না গেলে আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। শনিবার বিকেলে ননদ রুনা মিস্ত্রি নিয়ে আসে বাড়িতে ঘর তোলার জন্য। এ নিয়ে শ্ব¦শুর আমাকে ও ননদকে গালিগালাজ করে। রাত ৩টার দিকে আমার ঘরের দরজা সামনে থেকে বন্ধ করে দিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমার মেয়েটার পিঠ আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশু মিম আক্তারের সাথে কথা হয়। শিশুটি জানায়, আমি ঘুমিয়েছিলাম। ঘরে আগুন লাগায় আমার শরীর অনেক পুড়ে গেছে। আমার দাদা আগুন দিয়েছে।
রাস্তা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা বলেন, পারিবার দ্বন্দ্ব চলে আসছিল শ্বশুর ও পুত্রবধূর মধ্যে। এ ঘটনায় শ্বশুর, শাশুড়ি ও পুত্রবধূকে নিয়ে শতাধিকবার বসে শালিস করেছি। শ্বশুরকে বহুবার বলেছি। এক পর্যায়ে আমি এসে ঘর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করি। তবে ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাটি খুব দুঃখজনক।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আগুনের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। যার ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে সেই লোক বিদেশে থাকে। বিদেশ থেকে ফোনে জানিয়েছে এটা পারিবারিক বিষয়। এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, যে শিশুটি আগুনে পুড়ে গেছে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। গতকাল সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আগুনে-দগ্ধ-নাতনি

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ