Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে অতিবৃষ্টি : উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

লঘুচাপ-মৌসুমী বায়ুর দ্বিমুখী প্রভাবে বর্ষণ অব্যাহত সর্বোচ্চ কুমিল্লায় ১০৪ মি.মি.

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উজানের ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ভারতের বিহার, আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৬০ মিলিমিটার, শীলংয়ে ১৩৪ মি.মি., দার্জিলিংয়ে ১২৬ মি.মি., গ্যাংটকে ৫৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ স্থানে অব্যাহত রয়েছে কমবেশি বৃষ্টিপাত। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কুমিল্লায় ১০৪ মি.মি.। মৌসুমী বায়ু ও লঘুচাপের সক্রিয় প্রভাবে আশি^নে অতিবৃষ্টির আবহ তৈরি হয়েছে।

এরফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, ঘাগটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে এবং সুরমা-কুশিয়ারাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি আবার বাড়ছে। দেশ এ বছরে দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে। বানের পানি না নামতেই আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি গতকাল আরও পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভারতের ছত্রিশগড় ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় এবং বাংলাদেশের উপকূল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ অঞ্চলজুড়ে জলীয়বাষ্প ও মেঘমালা রয়েছে প্রচুর।

গতকাল পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন ভারতের অঞ্চলসমূহে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরফলে এই অঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪০টিতে হ্রাস পায়। ৩টি স্থানে পানির সমতল অপরিবর্তিত থাকে। ২টি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিংড়ায় গুড় নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার এবং লরেলগড়ে জাদুকাটা নদীর পানি ২৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবার নদ-নদীর ৩৭টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৬০টি পয়েন্টে হ্রাস পায় এবং ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে।

বন্যা পূর্বাভাসে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু ফের সক্রিয় হয়েছে। প্রধান নদ-নদীর উজানে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গতকাল থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে এবং ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশে উজানের অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরাঞ্চলে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মধ্যাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় ধরলা, তিস্তা ও আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ মাসে গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদী বিপদসীমা অতিক্রম কিংবা বন্যার আশঙ্কা নেই।

সর্বশেষ আবহাওয়া-
লঘুচাপ ও মৌসুমী বায়ুর দ্বিমুখী প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত কুমিল্লায় ১০৪ মি.মি.। এ সময় ঢাকায় মাত্র ৩ মি.মি., চট্টগ্রামে ৪৭, সিলেটে ৮৮, রাজশাহীতে ২৭, রংপুরে ৬০, খুলনায় ৮, বরিশালে ৩৭, ময়মনসিংহে ১৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্ষণের ফলে দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩২ ও সর্বনিম্ন ২৭.৪ ডিগ্রি সে.।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবির্তত থাকতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাত হ্রাস পেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হামিদ মিয়া জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে ভারতের ছত্রিশগড় ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সমুদ্রে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের (২২ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন জানান, এ সময়ে খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভবনা রয়েছে। এ সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. কমতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ