Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মালেক সিন্ডিকেটের শেল্টার দাতাদের তালিকা হচ্ছে

রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য অবৈধ অর্থে বিলাসী জীবন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মালেক অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার পাশাপাশি গড়ে তোলেন বিশাল সিন্ডিকেট। কতিপয় গাড়ি চালক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বাস্থ্যে মালেকের নেটওয়ার্কের কাছে সকলেই এক প্রকার জিম্মি ছিলেন। মালেক সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সেল্টার দাতাদের তালিকা তৈরি করতে মাঠে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক বিলাসী জীবনযাপন করতেন। তার অঢেল সম্পদের মধ্যে ফ্ল্যাট, বাড়ি, ডেইরি ফার্মের পর এবার জানা গেল, মহাখালীতে হোটেল ব্যবসাতেও যুক্ত ছিলেন তিনি। স¤প্রতি অবশ্য হোটেলটি বিক্রি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় করা পৃথক দুই মামলায় মালেককে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তুরাগ থানা পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রিমান্ডে ড্রাইভার মালেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত একাধিক বহুতল বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শতকোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে মালেকের। ড্রাইভার হয়ে কীভাবে এই সম্পদের পাহাড় গড়লেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। তবে মালেকের সোজাসাপটা জবাব-এক জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তার সবই পৈতৃক! বিপুল এই সম্পদ পৈতৃক বলে দাবি করলেও মালেকের বাবা আবদুল বারী ছিলেন সচিবালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, মালেকের নামে-বেনামে আরও কোথায় কী সম্পদ রয়েছে, সে তথ্য বের করতে বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিও মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক মালেককে এলাকার বাসিন্দারা বাদল নামে চিনতেন। এলাকায় প্রভাব নিয়ে চলতেন তিনি। তার সন্তানরা দামি গাড়িতে চলাফেরা করতেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন গাড়িচালক তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে এমন বিলাসী জীবনযাপন করছেন- এটা নিয়ে এলাকাবাসীর মনেও অনেক প্রশ্ন ছিল।

সূত্র জানায়, মালেক তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাদের আদি নিবাস কুমিল্লায়। তবে তার বাবা আবদুল বারী একসময় হাতিরপুল এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি বড়ও হয়েছেন সেখানে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিজের আধিপত্য ধরে রাখেন মালেক। নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে যুক্ত হয়ে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পথে অর্জন করেন তিনি।

মহাখালীতে হোটেল ব্যবসা
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালী আমতলীতে ‘কাপাসিয়া হোটেল’ নামে পরিচিত, হোটেলটি দীর্ঘদিন থেকে পরিচালনা করে আসছিলেন আবদুল মালেক। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ভবনের মালিক সেলিম রেজাও একজন গাড়িচালক। তবে সেলিম রেজার পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এটা তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া বাড়ি। তাদের দাবি, ২০০৮ সালে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে মালেক এই হোটেলের জায়গা কিনে নেন সেলিম রেজার কাছ থেকে।

সরেজমিনে হোটেল এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপাসিয়া হোটেলের দেখাশোনা করতেন মালেকের মেয়ের স্বামী রতন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্যান্টিনও চালাতেন এই রতনই। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই হোটেল বিক্রি করার উদ্যোগ নেন আবদুল মালেক। ৩০ লাখ টাকা দিয়ে এই হোটেল বিক্রির বিষয়ে কথা হয় সেলিম রেজার সঙ্গেও। তবে আবদুল মালেক গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় হোটেলটি আর বিক্রি করতে পারেননি।

হোটেলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বুলবুল জানান, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে হোটেলটি চলছে। আমি আবদুল মালেকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলাম। তার বড় মেয়ের জামাই রতন দেখাশোনা করেন। আগে দৈনিক এক হাজার ৫০০ টাকা দিতাম। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এক হাজার ২০০ টাকা দিতাম। অর্থাৎ মাসে ৩৬ হাজার দিতাম। বুলবুল আরো জানান, আমরা শুনেছি, ৮ থেকে ১০ দিন আগে এটি বিক্রির কথা হয়েছিল, দরদামও ঠিক হয়েছিল। ৩০ লাখ টাকা দিয়ে হোটেলটি এই বিল্ডিংয়ের মালিক সেলিম রেজার কিনে নেয়ার কথা শুনেছিলাম। সেটা তো আর হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্য অধিদফতর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ