Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ঢলে যমুনা, ও ধরলাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে চারটি নদীর পানি চারটি স্টেশনে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৪৬ মিলিমিটার, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৪ মিলিমিটার, গুড়ের পানি সিংড়া পয়েন্টে ৫২ মিলিমিটার এবং জাদুকাটা নদীর পানি লরেরগড় পয়েন্টে ১৪৫ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রাম, নিলফামারি, লালমনিরহাট, গাইবান্দা ও সিরাজগঞ্জ এইসব জেলার নিম্নাঞ্চল ৫ম দফা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের দুর্ভোগ চরমে। তলিয়ে গেছে আমন ও সবজি ক্ষেত, ভেসে গেছে অনেক মৎস খামার। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙনে গত দুদিনে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদরাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে গতকাল পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনগুলোর মধ্যে ৬৬টি স্টেশনে পানি বাড়ছে, ৩২টির কমছে এবং ৩টির অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে। পাশাপাশি উত্তর-প‚র্বাঞ্চলের উজান মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, অবিরাম ভারী বর্ষনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নদ- নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর বিভিন্ন চরের আমন ক্ষেতসহ নানাবিধ সবজির ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ জানান, এ পর্যন্ত নিম্নাঞ্চল ৫ হাজার ৫’শ হেক্টর আমন ক্ষেত ও ৫৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, অব্যাহত ভারি বর্ষনে রংপুরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে মারাত্মক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তিন দিনের টানা বর্ষনে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সব্জি ক্ষেত, মাছের খামার ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট চাষীরা। অব্যাহত ভারী বর্ষনে রংপুর মহানগরীর অলি গলিসহ বিভিন্ন সড়কে ও পাড়া-মহল্লায় মারাত্মক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নগরীর শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেলে পানি বাড়ার সাথে সাথে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা। এতে করে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
৩ দিনের টানা বর্ষন এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, ধরলা, দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়াও নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া, পীরগাছা ও পীরগঞ্জের অনেক নিচু এলাকায় মাছের ঘের, খাল-বিল, পুকুর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত পানিবদ্ধতার কারনে অনেক মাছের খামার ভেসে গেছে।
লালমনিরহাট থেকে মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষন আর ভারতের ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলাসহ ছোট-বড় সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পঞ্চম দফায় বন্যার কবলে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। গতকাল লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে ধরলা নদীর পানি সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার বিপদসীমার ৩৫-সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ কারণে মোগলহাট ইউনিয়নের বুমকা, ফলিমারী চরের আবাদি জমিসহ বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলিমারী এলাকার একমাত্র মসজিদটি রক্ষায় প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী। পানি বাড়ার কারণে লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকয় নদীভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলার সদর উপজেলার মোগলহাট, গোকুন্ডা, তিস্তা, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোবরধন, নন্ডিমারী, আরাজি ছালাপাক, বারঘরিয়া, চৌরাহা, কালীগঞ্জের কাকিনা, বৈরাতি এলাকার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনে এক হাজার বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু আদিতমারী উপজেলায় কয়েক দিনে তিস্তার ভাঙনে মহিষখোঁচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবার নতুন তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে সলিড স্পার-২ বাঁধে যাওয়ার একমাত্র পাকা রাস্তাটি।
সুনামগঞ্জ থেকে মোঃ হাসান চৌধুরী জানান, গত ৪/৫ দিন যাবত অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতের ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে পানি উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের আবাসিক এলাকা, থানা প্রাঙ্গণ, হাসপাতাল প্রাঙ্গন, সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বিশ্বম্ভরপুর বাজার, খাদ্য গোদাম প্রাঙ্গণ, প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ সহ বিভিন্ন হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওরের ঢেউয়ে উপজেলা সদর কৃষ্ণনগর পূজা মন্দিরে সামনের মাটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে এবং মন্দিরে পানি উঠেছে। মন্দিরটি এখন হুমকি মুখে। বন্যার পানিতে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার ব্রীজ এলাকা প্লাবিত হয়ে এবং বিশ্বম্ভরপুর থেকে সুনামগঞ্জ সড়কে চালবন থেকে আব্দুল জহুর সেতু পর্যন্ত পানি উঠে জন ও যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বন্যার পানিতে উপজেলার ফতেপুর, পলাশ, বাদাঘাট (দঃ) ও সলুকাবাদ ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলের রোপা আমন ফসলসহ মৌসুমী সবজির ব্যাপাক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাশ বলেন, বন্যায় উপজেলা বিভিন্ন এলাকা এ পর্যন্ত ৩ শত হেক্টর জমির রোপা আমন প্লাবিত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবন্দি

১৭ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ