Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সক্রিয় ১০টি জাল এনআইডি চক্র

শতাধিক এনআইডি’র তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। এ ধরনের ১০টি চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। এ চক্রের সদস্যরা গত দুই বছরে ৬৫-৭০টি ভুয়া বা দ্বৈত এনআইডি কার্ড তৈরি করেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্যই ভুয়া বা দ্বৈত এনআইডি তৈরি করা হয়। ব্যাংক ঋণ পাস হলে সেই ঋণের ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিতো চক্রের সদস্যরা। শতাধিক ভুয়া বা জাল এনআইডি কার্ড তৈরির তথ্য পেয়েছে একটি তদন্তকারী সংস্থা। এ চক্রের সাথে জড়িত একাধিক ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনে কর্মরত কর্মকর্তার সন্ধ্যানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জাল এনআইডি’তে ঋণ নিয়েছেন এমন কয়েকজনকে শনাক্ত এবং নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঋণপ্রাপ্তিতে সহযোগিতাকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের তালিকা করা হয়েছে। সিআইবি প্রতিবেদন পেলে উঠে আসবে কোন ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা, কীভাবে ঋণ প্রদান করেছেন।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ব্যাংক ঋণ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) প্রতিবেদন লাগে। জাল এনআইডি’র বিপরীতে ঋণ নেয়া এবং ঋণের জন্য আবেদন করেছেন এমন ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি প্রতিবেদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গত শনিবার ১২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোড এলাকার ডি বøক থেকে নির্বাচন কমিশনের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা হলো নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর (৩২) ও আনোয়ারুল ইসলাম (২৬), দুই দালাল সুমন পারভেজ ও মজিদ। এছাড়া আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে স্ত্রীর নামে আরেকটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রের মূল হোতা সুমন পারভেজ ও মজিদ। তারা গ্রাহক খুঁজে এনে নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মী সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুলের কাছে নিয়ে যেতো। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, তাদের তৈরি করে দেয়া জাল এনআইডি দিয়ে মিল্টন নামে এক ব্যক্তি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের শাখা থেকে তিন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ইয়াছির নামে এক ব্যক্তি সিটি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা থেকে দশ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। আব্দুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি এনআরবি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজেই ভুয়া এনআইডি দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৯ লাখ ২৫ হাজার ও সিটি ব্যাংকের নিকেতন শাখা থেকে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। সব মিলিয়ে জালিয়াতি করে নেয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা।

ডিবি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্রের মূল হোতা সুমন ও মজিদ জালিয়াতি করে ঢাকায় গাড়ি বাড়িও কিনেছে। সুমনের উত্তরায় নিজের ফ্ল্যাট রয়েছে। মজিদের মিরপুরসহ রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। গত দুই বছর ধরে তারা মূলত জাল এনআইডি তৈরির কাজই করতো।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি জাল এনআইডিসহ রাজধানীর দারুসসালাম থেকে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মহিউদ্দিন জানান, একটি জাল এনআইডি ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি একটি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকার ঋণ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তাকেও জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন উপায়ে জাল এনআইডির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলনের কাজ করে জালিয়াত চক্র। প্রথমে তারা ঋণ পেতে আগ্রহীদের সঙ্গে তাদের চাকরি ও ব্যবসা সংক্রান্ত পরিচিতি এবং সমাজের প্রতিষ্ঠিত ক্লাইন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি করে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করে ব্যাংকেরই কিছু সেলস এক্সিকিউটিভ। এরপর মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল এনআইডি তৈরি করে। পরে ব্যাংকেরই অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ঋণ পাস করিয়ে নেয়। সিআইবি রিপোর্ট যাদের খারাপ, তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ব্যাংকেরই কিছু সেলস এক্সিকিউটিভ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাল এনআইডি

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ