Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমলনগরে মেঘনার ভাঙনে বিলীন দু’টি বাজারের ৩২টি দোকানঘর

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪৩ এএম

কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজার থেকে এক সময় মেঘনার দুরত্ব ছিলো প্রায় ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে ওই বাজার থেকে মেঘনার দুরত্ব মাত্র দুই’শ ফুট। তীব্র স্রোতে এবং ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হচ্ছে চার যুগেরও পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি। বাজারটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতাব্বরহাট খাল মিলিত হয়েছে মেঘনার নদীর সাথে। বর্তমানে বাজারটি নদীর তীরবর্তি হওয়া জোয়ারের তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে গেছে প্রায় ১২টি দোকানঘর। চার যুগেরও আগে প্রতিষ্ঠিত বাজারটিতে প্রায় দুই’শটি দোকানঘর রয়েছে। তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ২টি, মাকসুদ মেম্বারের ১টি, দুলালের ১টি, ইউছুপের ১টি, মোহসীন হাওলাদারের ১টি, ইব্রাহিমের ১টি, সেলিম হাওলাদারে ১টি, ও মো. সিরাজের ১টি দোকানঘরসহ প্রায় ১২টি দোকান জোয়ারের স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরী কোন পদক্ষেপ না নিলে যে কোন মুহূর্ত্বে বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ মাতাব্বরহাট বাজার। এর দুই সপ্তাহ আগে আকস্মিক ভাঙনে চরফলকনের বাঘারহাট বাজারের মাহবুব বাঘার ১টি, সাহাব উদ্দিন বাঘার ২টি, ডা.ওয়ালী উল্লাহ’র ১টি, মো. হিরণের ১টি ও মফিজুল ইসলাম বাঘার ১০টি দোকানঘরসহ প্রায় ২০টি দোকানঘর মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। চরফলকন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে বাঘারহাট বাজারে অস্থায়ীভাবে স্কুল পরিচালনা করলেও এক বছরের মাথায় ওই স্কুলটিও আবার মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্ত্বে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো ওই বাজারটি। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সময় মত পদক্ষেপ নিতো তাহলে হয়ত এ দু’টি বাজার রক্ষা পেত। তাদের উদাসীনতাকে দায়ি করছেন ওই সব ভাঙন কবলীত এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে চরকালকিনি ও চরফলকন ইউনিয়ন দু’টিতে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের মেঘনার এ অব্যাহত ভাঙনে চরকালকিনি ইউনিয়নের চরকাঁকড়া, চরসামছুদ্দিন ও তালতলি, সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চরজগবন্ধু, মাতব্বরনগর এবং চরফলকন ইউনিয়নের চরকটোরিয়া, চরকৃষ্ণপুর, মাতব্বরচর ও পাতারচর এবং পাটারীরহাট ইউনিয়নের উরিরচর, পশ্চিম চরফলকন ও ডিএস ফলকনসহ ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গত ৪৯ বছরের ভাঙনে মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার প্রায় ২০ হাজার একর ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাঁচটি কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ, বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার।
ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মূখে রয়েছে চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে, সাহেবেরহাট ইউনিয়নের নতুন কাদিরপুন্ডিতেরহাট বাজার, চরকালিকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ বাজার, চরজগবন্ধু এটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও সরকারি বেসরকারি অনেক স্থাপনা। ভাঙনের তান্ডবলীলা চলতে থাকায় লুধুয়া ফলকন এলাকায় আপদকালীন কাজের অংশ হিসেবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন চলমান বরাদ্দ দিয়ে জিওব্যাগে ডাম্পিং ও জিও টিউবে ডাম্পিং করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এ সব লোক দেখানো আপদকালীন প্রকল্পের নামে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে বলে স্থানীয় মেঘনা পাড়ের মানুষ ক্ষোভ করে জানান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনার এ ভাঙনরোধে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যেমন সফল হয়নি; তেমনি সরকারিভাবে নেয়া উদ্যোগও দেখছে না সফলতার মুখ। ২০০৯ সালে প্রথমবার মহাজোট সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মাহবুবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ‘মেঘনার ভাঙন থেকে রামগতি ও কমলনগরকে রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির আওতায় ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রথম পর্যায়ের ওই অর্থ দিয়ে কমলনগর উপজেলার মাতব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার ও রামগতি উপজেলায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কমলনগর উপজেলার অপর ১২ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত থেকে যায়।
চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবদুস সহিদ সুমন জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দু’টি দ্বিতল ভবনসহ বিদ্যালয়টি মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পাঠদান চালিয়ে নিতে লুধুয়া বাঘারহাট বাজারের সরকারি টলঘরে শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ওই অস্থায়ী বিদ্যালয়টি মেঘনায় ঘিলে খেয়েছে। বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়টি।
মাতাব্বরহাট বাজারের দোকানঘর মালিক মো. ইসমাইল হোসেন মাষ্টার, মাতাব্বরহাট থেকে মেঘনার দুরত্ব ছিলো প্রায় ১০কিলোমিটার। কখনো ভাবিনী মাতাব্বরহাট বাজার মেঘনায় ভাঙনের শিকার হবে। সরকারের উর্ধ্বতন মহলের উদাসীনতায় এ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এখন ভিটেমাটি হারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকার যদি সময় মত পদক্ষেপ নিতো তাহলে ওই সব ভাঙন কবলীত মানুষ তাদের ভিটেমাটি হারাতে হতো না।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজার মেঘনায় ভাঙছে এ বিষয়ে তিনি জানেন না। লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিবেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙ্গন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ