Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অকাল বন্যায় দুর্ভোগ

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মা-মেঘনা হয়ে মোহনাব্যাপী পানি বৃদ্ধি নদীভাঙন : ৯টি নদ-নদী ১০ পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উৎসে ভারতের উজান অববাহিকায় গত তিন দিন যাবত বৃষ্টিপাত প্রায় থেমে গেছে। তবে এর আগে টানা এক সপ্তাহেরও বেশিদিন ধরে হয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ। এর ফলে উজান থেকে ভাটির দিকে এখনও নামছে ঢল-বান। তাছাড়া উজানে গঙ্গায় ফারাক্কাসহ অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারেজের গেইট খুলে দিয়েছে ভারত। হু হু করে আসছে ঢলের পানি। এতে করে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মা-মেঘনাসহ নদ-নদীসমূহে পানি বাড়ছেই। গতকাল ৯টি নদ-নদী ১০টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির সাথে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
প্রমত্তা নদ-নদী প্রতিদিনই ভাঙছে এবং ভাসিয়ে দিচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, ভাটি হয়ে পদ্মা ও মেঘনার মোহনাব্যাপী। মধ্য আশি^নে এসেই অকাল বন্যায় অনেক এলাকায় বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এ বছর কোথাও পাঁচ, কোথাও তিন-চার দফায় বন্যা ও নদীভাঙন চলছে। এতে অসংখ্য মানুষের বসতঘর ডুবে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কিংবা ভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক বাড়িঘর, স্থাপনা, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ। তাছাড়া ফল-ফসল, গবাদি পশু-পাখি, শিক্ষার্থীদের বই-খাতাসহ শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত। বিভিন্ন স্থানে বানভাসি মানুষের খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উভয় নদে পানি স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫০টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। ২টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। ৯টি নদ-নদী ১০টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত মঙ্গলবার নদ-নদীর ৪৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫০টিতে হ্রাস পায়। সোমবার ৫১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪২ পয়েন্টে হ্রাস পায়।
নদ-নদী প্রবাহের গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, নেপাল ও ভারতের বিহারে অতি বর্ষণ, উজানে গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের গেইট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে রাজশাহীতে বিপদসীমার ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ১৩৫ সেন্টিমিটার নিচে, তালবাড়িয়ায় ১২৭ সেন্টিমিটার নিচে, পদ্মা ভাটি ভাগ্যকুলে ৪৬ সেন্টিমিটার ও মাওয়ায় ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনায় পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদ কাজীপুরে মাত্র এক সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ১৩ সেন্টিমিটার ও বাহাদুরাবাদে ১৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপরে, বদরগঞ্জে যমুনেশ^রী নদী বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার এবং গাইবান্ধায় ঘাগট নদী বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চক রহিমপুরে করতোয়া নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপরে, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি আরও বেড়ে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপরে এবং মহাদেবপুরে আত্রাই নদী বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নওগাঁয় ছোট যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থানে থাকা নদ-নদীসমূহের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ এবং চিলমারী পয়েন্টে মাত্র ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার মাত্র ৮ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ্বরী নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যায় দুর্ভোগ

১ অক্টোবর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ