Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হার্ডলাইনে খালেদা জিয়া

পদ বণ্টনে উত্তরাধিকার নয় কর্মের মূল্যায়ন করা হয়েছে

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১১ পিএম, ১১ আগস্ট, ২০১৬

আফজাল বারী : বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। পদ বঞ্চিত হয়ে কেউ অসন্তষ্ট, পদ পেয়েও অনেকে নাখোশ। প্রাপ্ত পদ; এমনকি দল ছাড়তেও নাকি শিষ্যদের চাপ আছে-এমনও গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। সেটা অতিরঞ্জিত করে প্রচার-প্রকাশ করছে কিছু মিডিয়া। এদিকে কারো কারো আত্মউপলব্ধি এমনও যে, নেত্রী উদার না হলে অনেকেই বিএনপিতে অপাঙতেয় হতেন। ‘শীর্ষ নেতা যতো ক্ষমা করেছেন, নেতারা ততো ভুল করতে পারেন নি’।
আলাপকালে একাধিক নেতা জানান, সকল শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখার জন্য কমিটির আকার বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী দিনে দলকে এগিয়ে নেবে এই নেতৃত্ব। আত্মউপলব্ধি থেকে এক নেতা জানান, নতুন কমিটি থেকে তার বাদ পড়ার কথা কিন্তু তারপরও তাকে ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। চেয়ারপার্সনের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় নেতাদের অতীতে ভুলের ক্ষমা করলেও এবার কঠোর খালেদা জিয়া। নজর রাখছেন, বর্তমান কৃতকর্মের হিসেব-নিকেশ হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারী নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য।
বিএনপি’র নতুন কমিটি গঠনের জন্য নেতাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছেন এমন এক নেতা ইনকিলাবকে জানান, গত আট বছরে আন্দোলন সংগ্রামে কোন্ নেতার ভূমিকা কী ছিলো সে তথ্য নিজেই জানতেন শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এছাড়াও কিছু নেতার তথ্য সংগ্রহ করতে অন্য পেশার কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতা। তারা সংশ্লিষ্ট নেতাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাতে অতীতের কর্মসূচি সফল করা, ভ-ুল করা, সরকারের কাছে তথ্য পাচার করা, পুলিশের কাছে আত্মগোপনে থাকা দলীয় নেতাদের হদিস দেওয়া, কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজের ফোন বন্ধ রেখে বিদেশী নম্বর ব্যবহার করা, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দল থেকে মাইনাস করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করণে উপাদান হিসেবে কাজ করেছেন, ক্ষমতাসীনদের হুকুম তামিল করার শর্তে কারামুক্ত হওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের তথ্য প্রমাণ শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। একইদিন প্রায় অর্ধশত মামলার জামিন পেয়ে বিদেশে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতার সাথে বৈঠক করার ঘটনাও গোপন রাখতে পারেননি সংশ্লিষ্ট নেতা। এসব ঘটনাবলী অবহিত হওয়ার পরও উদার মনে অভিযুক্ত নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তাতে আপত্তি জানাননি দলটির আগামীর কা-ারি তারেক রহমানও। কয়েকজনের বেলায় সিনিয়র নেতাদের ঘোর আপত্তি থাকলেও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই তা এড়িয়ে গেছেন দলীয় প্রধান।
নিজ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে থরে থরে অভিযোগ থাকায় যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠন করতে দলীয় প্রধানকে হিমসিম খেতে হয়েছে।
প্রায় ৫ মাস পর গত শনিবার দু’টি পদ ফাঁকা রেখে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব, ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন ১৬১ জন কর্মকর্তা, বাকিরা সদস্য। সদস্যদের মধ্যে ১১৩ জন নতুন মুখ, দুইজনকে বিশেষ সম্পাদক করা হয়েছে।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে নতুন কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করেছেন। মাগুরার কাজী কামালও পদত্যাগ করেছেন। দলের সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রাপ্তপদ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন হাইকমা-ের কাছে। কিংকর্তব্য বিমুঢ় অবস্থার কথা প্রকাশ করেছেন ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-নোমান, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক কয়েকজন এমপি ও নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাতে সামিল হয়েছেন কিছু নারী নেত্রীও। তারা নেত্রীর কাছে আবদারের কথা না জানিয়ে গণমাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো কাজ করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণার পর সংক্ষুব্ধরা ‘সিন ক্রিয়েট’ করেছে। দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে। ভাঙচুরসহ নেতাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে। চেয়ারপার্সনের কার্যালয়েও বিক্ষোভ মিছিলসহ বেশ কিছু অঘটন ঘটিয়েছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের কাছে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কঠোর মনোভাব দেখান নি শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিযোগকারীর উদ্দেশ্যে চেয়ারপার্সন বলেছেন, তারা তো আমার দলের নেতা-কর্মী, দলের জন্য তাদের ত্যাগ রয়েছে।  সাময়িক ক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এতো কঠোর হওয়া যাবে না। যে কারণে কিছু নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের জন্য চিঠি প্রস্তুত করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তবে এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কমিটি নিয়ে নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানাতে দলীয় মহাসচিবসহ কয়েকজনকে নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই স্থায়ী কমিটির সভা ডাকতে পারেন তাতে আলোচনা করে দল বৈরী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
ইতোপূর্বে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, কমিটি ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক হয়েছে। সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়টি আপাতত নেই।  
কমিটি বৈরী নেতাদের প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে কে কোন ভূমিকা রেখেছে তা নেত্রী জানেন। তিনি নিজের হাতে কমিটি করেছেন সুতরাং এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণ নেই। দল, দলের আদর্শ ও দলীয় নেত্রীকে মানলে তার কমিটির বিপরীতে যাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে কারো কোন কথা থাকলে সরাসরি নেত্রীর কাছেই বলা ভালো। তিনি বলেন, অনেক নেতা আছে যারা কমিটি তো দূরের কথা বিএনপির নামও মুখে নেবার এখতিয়ার রাখেন না, তাদেরও তো গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। তারপরও যে গোস্বা করে কেনো তা আমার হিসেবে মিলে না। সামনে কর্মসূচি আছে চোখে পড়ার মতো ভূমিকা রাখলে নেত্রী অবশ্যই তাদের মনে রাখবেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কমিটি দিয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন। তার দেওয়া পদকে না মানা মানে তাকে অমান্য করা। যিনি পদ দেবার মতো ক্ষমতা রাখেন তিনি নিতেও পারেন। তবে কারো জন্য যদি দলের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হয় সে ক্ষেত্রে নেত্রী কঠোর হবেন এ তথ্য আমাদের কাছে আছে।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের অনেক নেতা এখন বিশ্ব পরিচিত। দুইযুগ আগে তাকে নিজের গ্রামের মানুষও চিনতো না। একবেলা পেটপুরে খেতেও পারতো না। খালেদা জিয়া তাদের রাজনীতিতে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদে না বসালে তারা হয়তো অন্ধকার জগতের মানুষ বনে যেতো। এখন তারা খালেদা জিয়াকেই মাইনাস করার জন্য প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলায়। তবে মনে করার কোন কারণ নাই যে নেত্রী এসব জানেন না। সময় কথা বলে দিবে।



 

Show all comments
  • zahed ১২ আগস্ট, ২০১৬, ৭:২৬ এএম says : 0
    ‌নেত্রী যা কর‌ছেন ঠিক কর‌ছেন
    Total Reply(0) Reply
  • fishking ১২ আগস্ট, ২০১৬, ৫:২৪ পিএম says : 0
    স্থায়ী কমিটিতে সিলেট কে এবং কতজন আছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হার্ডলাইনে খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ