Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘টেকসই ভবিষ্যতের’ প্রতি নজর দিন

ভূ-গর্ভস্থ নয় ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৩২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগের সময় ‘টেকসই ভবিষ্যৎ’ নিশ্চিত করার আহŸান জানিয়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, পৃথিবী এবং আমাদের রক্ষার জন্য বিনিয়োগের সময় আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা এবং গবেষণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বৃহত্তর গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং জাতীয় পর্যায়ে আইন-কানুন জোরদার করা এবং নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য রক্ষার মূল পদক্ষেপ।

তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, জেনেটিক রিসোর্স এবং ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের প্রকৃত মালিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সুফল বাটোয়ারায় প্রবেশাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিসের (সনদ) লক্ষ্য অর্জন আমাদের বিলুপ্তি এবং টিকে থাকার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আমাদের অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে) নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ভার্চুয়াল জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ’-এর ব্যাপারে ‘সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বে বাস করি যেখানে পৃথিবী গ্রহের প্রতিটি প্রজাতি আমাদের বাস্তুসংস্থানে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে থাকে।’

যদিও তিনি বলেন, ডবিøউডবিøউএফ এবং লন্ডন জিওলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বন্য প্রাণীর সংখ্যা গড়ে ৬৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ মিঠা পানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিঠা পানির জীববৈচিত্র্য বিশ্বে সবচেয়ে দ্রæত হারে হ্রাস পাচ্ছে, বৈশ্বিক জলাভ‚মির ৮৫ শতাংশ এরই মধ্যে শিল্প বিপ্লবের পরে হারিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে মিঠা পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও মাছের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলছি এবং ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মতো ‘জুনটিক’ (প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত) রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বর্তমান ক্রিয়াকলাপ অব্যাহত রাখা হলে আমরা শুধু অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণই হচ্ছি না, মূলত আমরা মানবজাতিরও চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে তার সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকেই বন্য প্রাণী সংরক্ষণের আদেশ কার্যকর করেন’, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জৈববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য আইন-প্রণয়নকারী অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ‘আমাদের সংসদ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট ২০১৭ পাস করেছে,’ বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের মোট স্থলভাগের ৫ শতাংশেরও বেশি এবং সামুদ্রিক জলভাগের প্রায় ৫ শতাংশ অঞ্চলকে ‘সংরক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছে।

ভ‚গর্ভস্থ নয় ভ‚উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিতের নির্দেশ
জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নতুন জলাধার সৃষ্টি এবং বিদ্যমান জলাধারগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলাধার বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে পানির জন্য একসময় হাহাকার ছিল সেই হাহাকারটা যেন বন্ধ হয়। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষকে সুপেয় পানি দিতে হবে। ভ‚গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভ‚উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ভ‚উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সেচের পানি বা ব্যবহারের পানি যেন ভ‚গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভ‚উপরিস্থ পানির উৎস থেকে আসে সেদিকে যাতে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিই।

গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে এ তাগিদ দেন তিনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত পানি ভবন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বিমানবন্দরের ভেতরে বঙ্গবন্ধু কর্নার, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় পর্যটন ভবন এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে যত খাল, বিল, হাওর, পুকুর, নদী যা আছে সবগুলোর যাতে নাব্য থাকে, সেগুলো খনন করা, সেখানে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো এসব করতে হবে। তাতে দুটি কাজ হবে। একটা হচ্ছে- আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে, মৎস্য উৎপাদন বাড়বে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে। তাতে মানুষের চহিদাটাও আমরা পূরণ করতে পারব।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। পানি ভবন মিলনায়তন প্রান্তে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ