Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মার্কিন নির্বাচনী বিতর্ক : ট্রাম্প যে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী, এটা বললেই পারেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৯ পিএম

‘আপনি কি আজ রাতে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ও মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে বলবেন যে তোমরা থামো?’ এমন একটি প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড বললেন, ‘সিউর! আমি বলতে রাজি আছি। তবে আমি বলবো আমি যা-ই দেখেছি, সবই ছিল বামপন্থীদের কাজ। ডানপন্থীদের নয়।’ এরপর আরও কিছুক্ষণ এটাসেটা নিয়ে কথা বলে তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। আমি শান্তি চাই।’ উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যে প্রশ্নটি করেছিলেন, সেখানে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। উত্তরের পর ওয়ালেস বললেন, ‘তাহলে করুন, স্যার।’ তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সাথে সাথে বললেন, ‘বলে ফেলুন।’ -সিএনএন, ফক্স

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়ালেসকে বললেন, ‘আপনি তাদের কী ডাকতে চান? আমায় একটা নাম দিন, একটা নাম দিন।’ ওয়ালেস উত্তর দিলেন, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী। বিভিন্ন বিক্ষোভে প্রায়ই সশস্ত্র সহিংসতায় জড়ানো ও নিজেদের ‘পশ্চিমা চাউনিস্ট’ হিসেবে দাবি করা উগ্র ডানপন্থিদের দলের দিকে ইঙ্গিত করে বাইডেন যোগ করলেন, ‘দ্য প্রাউড বয়েজ।’ ট্রাম্প নিন্দা জানানোর পরিবর্তে উল্টো বললেন, ‘প্রাউড বয়েজ, ধৈর্য্য ধরো ও পাশে থাকো।’ আমেরিকায় আগেও এটা তখন ঘটেছিল, যখন ভার্জিনিয়ার চার্লট্টেসভিলে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদিরা পদযাত্রা করেছিল, তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, উভয় পক্ষেই চমৎকার কিছু মানুষ রয়েছে। আবার, যখন ট্রাম্প কু ক্লাক্স ক্লানের ‘গ্র্যান্ড উইজার্ড’ ড্যাভিড ডিউককে না চেনার ও নিজের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় তার সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে না জানার ভান করেছিলেন। প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে এটা স্বীকার করলেন না যে, তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরোধীতা করেন।

গত মাসে হোয়াইট হাউজে শীর্ষ পদ ছেড়ে যাওয়া কেলিয়ানি কনওয়ে ফক্স নিউজের ‘ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস’ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমেরিকা অশান্ত থাকলে ট্রাম্পের লাভ হয়। তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, ভাংচুর ও সহিংসতা যত বাড়ে, জননিরাপত্তা, আইন ও শৃঙ্খলার জন্য কে বেশি ভালো তা ততো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ট্রাম্প, কনওয়ে ও ট্রাম্পবিশ্বের বাকিরা সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য বামপন্থীদের দোষারোপের পাশাপাশি, আপাতদৃষ্টিতে সহিংস আমেরিকার ভাবমূর্তিও উপভোগ করে। রিপাবলিকান কনভেনশনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্যাট্রিসিয়া ও মার্ক ম্যাকক্লসকিকে কনভেনশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়েছিল রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি। সেইন্ট লুইজের এই দম্পতির বিরুদ্ধে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে পদযাত্রা করা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীদের প্রতি বন্দুক তাক করার অভিযোগ রয়েছে। উইসকনসিনের কেনোশায় দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ১৭ বছর বয়সী কাইল রিটেনহাউজের সমর্থনে কথা বলেছেন ট্রাম্প নিজে। তার পক্ষে ট্রাম্প বলেন, আত্মরক্ষার খাতিরে হত্যা করে থাকতে পারে ওই কিশোর। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার এক বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, কালো হুড পরা ব্যক্তিরা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লেকার্ড নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরের দৃশ্যেই দেখা যায়, বাইডেন আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিসকোপাল গির্জার কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থনাকারীদের প্রতি হাটুগেড়ে বসে আছেন বাইডেন। আর এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এক ভয়েস-ওভারে সতর্ক করে বলেন, জো বাইডেনের আমেরিকায় আপনারা নিরাপদ থাকবেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে নিজেদের লোগোর একটি ফটোশপ সংস্করণ প্রকাশ করেছে প্রাউড বয়েজ। তাতে দেখা যায়, তাদের লোগোর পাশে লেখা রয়েছে ‘ধৈর্য্য ধরো’ ও ‘পাশে থাকো’। দলটির নেতা এনরিক টারিও অবশ্য ‘পার্লার’ নামের অন্য একটি প্ল্যাটফর্মে অস্বীকার করেছেন যে, দলটি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ সমর্থন করে। যদিও তিনি এটা বলেছেন যে, তিনি তার প্রেসিডেন্টের আজ রাতের (বিতর্ক) পারফরমেন্সে অত্যন্ত গর্বিত।

বিতর্কের পর ট্রাম্প শিবিরের টুইটার একাউন্টের এক পোস্ট অনুসারে, তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমালোচনা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘অবশ্যই’ বলেছেন বলে লেখা হয়েছে। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি প্রকাশ্যে বর্ণবিদ্বেষের সমালোচনা করেছেন। টেক্সাসের এল পাসো শহরের ওয়ালমার্টে বীভৎস গোলাগুলির পর তিনি বলেছিলেন, আমাদের জাতিকে অবশ্যই এক আওয়াজে বর্ণবিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমালোচনা করতে হবে। ধর্মীয় উপদেষ্টাসহ ট্রাম্পের সবচেয়ে জোরালো সমর্থকদের দাবি, গণমাধ্যম ট্রাম্পকে বর্ণবিদ্বেষী হিসেবে তুলে ধরতে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। পেনসিলভানিয়ার সাবেক সিনেটর রিক স্যান্টোরাম ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে সিএনএনকে বলেন, ওয়ালেস প্রেসিডেন্টকে এমন কিছু করতে বলেছিলেন যা তিনি জানতেন যে, প্রেসিডেন্টের পছন্দ না। তার সমর্থনকারীদের ব্যাপারে খারাপ কিছু বলানোই ছিল উদ্দেশ্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ