Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাগার্ণো-কারাবাখ ইস্যুতে রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রকে নিন্দা তুরস্কের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৫ পিএম

বৃহস্পতিবার নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে তুরস্ক বলেছে যে, শান্তি পদক্ষেপে তিন বড় শক্তির ভূমিকা রাখার কোন প্রয়োজন নেই।

দক্ষিণ ককেশাসে পাহাড়ী ছিটমহল নিয়ে কয়েক দশকের পুরানো বিরোধের মধ্যস্থতার জন্য ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত সুরক্ষা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা ইউরোপের (ওএসসিই) মিনস্ক গ্রুপের সদস্য হচ্ছে ফ্রান্স, রাশিয়া এবং আমেরিকা। ১৯৯০-এর দশকের পরে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে এবারকার সংঘর্ষই সবচেয়ে ভয়াবহ। এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ হলেও সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই আর্মেনিয়ান আদিবাসী। এই সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে শান্তির আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সংঘর্ষ বন্ধের জন্য দুই পক্ষের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তারা মিনস্ক প্রক্রিয়া মেনে সাবেক দুই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের প্রতি ‘অবিলম্বে সততা, বিশ্বাস ও পূর্বশর্ত ছাড়াই স্থগিত আলোচনা পুনরায় শুরু করতে’ আহ্বান জানান।

তবে তিন দেশের বিবৃতির ঠিক আগে তুরস্কের সংসদে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছিলেন যে, তিনি তাদের জড়িত থাকার বিরোধিতা করছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমেরিকা, রাশিয়া এবং ফ্রান্স প্রায় ৩০ বছর ধরে এই সমস্যাটিকে অবহেলা করে এসেছে। ফলে যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের জড়িত হওয়া মেনে নেয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়ান দখলদাররা নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে আসলেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জন করা সম্ভব।’

এরদোগানের এই মন্তব্য সম্ভবত তার ন্যাটো মিত্রদের সাথে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই দ্বন্দ্বটি আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারে। কারণ, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তুরস্ক। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে লাভরভের মন্ত্রণালয়।

বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাস বহনকারী পাইপলাইনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হওয়ায় দক্ষিণ ককেশাসের স্থিতিশীলতা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত শতাধিক বেসামরিক নাগরিক এবং আর্মেনিয়ার বেশ কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। আজারবাইজানের সামরিক খাতে কতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বাকুর পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। আর্মেনিয়া বলেছে, নাগর্নো-কারাবাখের মার্টুনি শহরে আজারি শেলিংয়ের সময় ফ্রান্সের লে মোনডে পত্রিকায় কাজ করা দু’জন ফরাসী নাগরিক আহত হয়েছিলেন। আর্মেনিয়ার একটি সরকারী সূত্র জানিয়েছে যে তারা মারাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার রাতে একটি টেলিফোন সংলাপে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছেন। কয়েক ঘন্টা পরে বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তাদের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ম্যাখোঁর

কার্যালয় বলেছে যে, তিনি এবং পুতিন ‘নাগর্নো-কারাবাখে তুরস্কের দ্বারা সিরিয়ান ভাড়াটে সেনা পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’ যদিও, ক্রেমলিনের বিবৃতিতে এই বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তবে রাশিয়ান বার্তা সংস্থা টিএএসএস ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে বলেছে যে, সিরিয়া ও লিবিয়া থেকে নাগর্নো-কারাবাখে যোদ্ধাদের স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তুরস্ক বলেছে যে, আজারবাইজানকে সমর্থন করার জন্য ‘যা প্রয়োজন তা তারা করবে’। তবে ভাড়াটে সেনা প্রেরণের কথা অস্বীকার করেছে তারা।

ফ্রান্সে আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৬ লাখ লোক বসবাস করে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ‘তুরস্কের যুদ্ধস্বরূপ’ কথাবার্তার নিন্দা করে বলেছে, ‘নাগোর্নো-কারাবাখ পুনর্দখলে নেয়ার ব্যাপারে আজারবাইজানের যতোটুকু সঙ্কোচ ছিল, আঙ্কারার সমর্থনের কথা ঘোষণা করার পর সেটাও দূর হয়ে গেছে যা ফ্রান্সের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ এর জবাবে তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগ্লু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন যে, ‘আজারবাইজানে আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বকে তারা সমর্থন করছে।’ এদিকে জার্মানির একটি সরকারী সূত্র বলেছে যে, চলমান শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতারা এই বিরোধ নিয়ে আলোচনা করবেন। সূত্র: ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ