Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্লট আছে শিল্প নেই

খুঁড়িয়ে চলছে দক্ষিণ-পশ্চিমের বিসিক

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

প্লট আছে শিল্প নেই। শিল্প আছে চালু নেই। স্থাপনা আছে, কলকারখানা নেই। এই অবস্থায় চলছে যশোর ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ বিসিক শিল্পনগরী। শুধুমাত্র যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দিনে দিনে বিসিকের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। একটু নজর দিলে বিসিকের অন্ধকার ঘুচবে, দেখবে আলোর মুখ। একথা জানিয়েছেন বিসিকেরই দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিল্প উদ্যোক্তারা।
তাদের কথা, বিশাল বিশাল দামি সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প কলকারখানা না করে ভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করার ঘটনাও আছে। অথচ অনেক উদ্যোক্তা প্লট বরাদ্দ পাচ্ছেন না। ঝিনাইদহ বিসিকের এক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আগের চেয়ে কিছুটা গতিশীল হয়েছে ঝিনাইদহ বিসিক। কিন্তু প্রভাবশালীরা প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেনি, যার জন্য বহু প্লট খালি পড়ে আছে। অনেকটা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
যশোর বিসিকের ডিজিএম লুৎফর রহমান জানান, বিসিককে গতিশীল করা দরকার। যদিও বর্তমান সরকার বিসিককে গতিশীল করার জন্য বেশকিছুদিন হলো একটা পরিকল্পনা হাতে নেয়। সে মোতাবেক কাজ শুরু হবে। এবার জেলার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও বিসিক শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে।
যশোরের শার্শা উজেলায় ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি টিম যশোর আসার কথা রয়েছে। যশোরে অটোমোবাইল কারখানার জন্য আলাদা একটা এলাকা নির্ধারণ করা হবে। নতুন বিসিক গড়ে তোলার পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধান ও গতিশীল করার কার্যক্রম চালানো হবে। শিল্প প্লট পড়ে থাকার ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে প্লট দেখিয়ে মোটা টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেকেই ভিন্ন ব্যবসা করছে বিসিকের বাইরে। সূত্র জানায়, সরকারি বরাদ্দের অভাবে বিসিক এলাকার রাস্তা, বিদ্যুৎ, ড্রেনসহ যাবতীয় কাজকর্ম বলা যায় বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স¤প্রসারণে দেশের অন্যান্য জেলার মতো যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ বিভিন্ন জেলায় বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। যুগ যুগ ধরে নামকাওয়াস্তে বিসিক শিল্পনগরী হলেও বাস্তবে উল্লেখযোগ্য শিল্প গড়ে ওঠেনি। বিশাল বিশাল এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে বিসিক স্থাপিত হয় যে উদ্দেশ্যে তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু শুরুর সময় উদ্দেশ্য খুবই প্রশংসনীয় হয়। প্রথমদিকে বিসিক এলাকা ছিল জমজমাট। দিনে দিনে বিসিক হয়ে পড়েছে অন্ধকার। বিসিকের দিকে একটু নজর দিলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রমরমা অবস্থায় ফিরে আসতো। ফিরে পেত প্রাণ। এতে যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দেখতো আলোর মুখ। বিসিকের বাইরে অনেক ক্ষুদ্র শিল্প লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অথচ বিসিক এলাকায় কেন হচ্ছে না তার কারণ খুঁজে দেখা জরুরি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়ার হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প বিসিক এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে। এই অঞ্চলের মধ্যে কুষ্টিয়া বিসিক বিআরবি কেবলস এর জন্য রমরমা রয়েছে। সেখানে বিআরবির একারই ১৩টি লাভজনক শিল্প ইউনিট রয়েছে।
সরেজমিনে যশোর বিসিক এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুরে বিসিককে ঘিরে এক সময় জমজমাট অবস্থা ছিল। এখন তা আর নেই। এখন চলছে খুঁড়িয়ে। অথচ একসময় যশোর বিসিকের একটি শিল্প ইউনিট থেকে ময়দার কল তৈরি হতো, যা বিদেশে রফতানি হত। সরকারি আনুকল্য, সহায়তা, পরিবেশ, ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতা, উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বিনিয়োগকারী ও শিল্প উদ্যোক্তারা এগিযে আসছে না। যশোরে উল্লেখযোগ্য ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত কাচামাল থাকা সত্বেও। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবস্থাও নাজুক। অবশ্য একসময় ২৯টি টেক্সটাইল মিল ছিল যশোরে। যার প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে।
বিসিক সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে ৫০ দশমিক ৬ একর জমিতে বিসিক প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৬৩ সালে ১২টি ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও একপর্যায়ে ১২২টি ইউনিটে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সনি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনো বল পেন, এমইউসি ফুড, রেসকো বিস্কুট ও ইউনির্ভাসাল ফ্লাওয়ার মিলসহ খুব কমসংখ্যক শিল্প টিকে আছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিকের অনেক শ্রমিক এখন ফেরিওয়ালা ও রিকশাচালক। অথচ একসময় হাজার হাজার শ্রমিক স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ