Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

না‌মের মিল থাকায় গ্রেপ্তার বৃদ্ধ হা‌বিবুর রহমান‌কে মু‌ক্তি দি‌য়ে‌ছেন পটুয়াখালীর আদালত

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ৮:০০ পিএম

শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় ৮0 বছর বয়সী এক নিরাপরাধ বৃদ্ধ আট দিন জেল খাটার পরে আজ বিকেল পাঁচটায় পটুয়াখালী আদালত থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
পটুয়াখালীর প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আবুল বাসার মিয়ার আদালতে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় হাজির করা হলে তিনি বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের মুখ থেকে তাকে পুলিশ কেন ,কিভাবে গ্রেপ্তার করেছেন তার বক্তব্য শোনেন। এসময় কোর্টের মূল আসামী হাবিবুর রহমান আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ছিল। তিনি বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের মুখ থেকে বক্তব্য শুনে তাকে সসম্মানে কোর্টে অন্য কোন মামলায় আটক আদেশ না থাকলে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি মূল আসামী হাবিবুর রহমানকে জেলখানায় প্রেরণের নির্দেশ দেন।পরবর্তীতে বিকেল পাঁচটায় বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে আদালত থেকে মুক্ত হয়ে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান বিনা অপরাধে তিনি যে এক সপ্তাহ জেলা খাটলেন তার প্রকৃত বিচার চান বলে সাংবাদিকদের কাছে জানান।
এদিকে একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা হয়ে একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে কারাভোগ করানোর ফলে নির্দোষ ব্যক্তির মানবাধিকার লংঘন হওয়ায় গলাচিপা থানার এএসআই আল আমিনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা তিন দিনের মধ্যে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত রাতে নামের মিলে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণের দায়ে গলাচিপা থানার এএসআই আলআমীনকে ক্লোজ করে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
এ দিকে জেলা পু‌লি‌শের পক্ষ থে‌কে প্রকৃত ঘটনা উদঘাট‌নের জন্য তিন সদস্য বি‌শিষ্ট এক‌টি তদন্ত টিম গঠন করা হ‌য়ে‌ছে। তদন্ত টী‌মে পটুয়াখালীর অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার হেড‌কোয়াটার শেখ বেল্লাল হো‌সেন‌, বাউফল সা‌র্কেল মোঃ ফারুক হো‌সেন এবং পু‌লি‌শের ডিআইওয়ান ।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা পৌর শহরের মুজিব নগর রোডের নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে ও গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক মো. হাবিবুর রহমান ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সে সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নম্বর ২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু, তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়।

পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু, তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ নেননি মর্মে ওই বছরের ১৬ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পটুয়াখালীর বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদন্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দন্ডের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গ্রেফতারী পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়। কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পিতার নাম নূর মোহাম্মাদ পন্ডিত।

এদিকে প্রকৃত ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। তিনি ব্যবসার ধরন পাল্টে এখন মুদি-মনোহরির ব্যবসা করছেন।

এ বিষয়ে কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় ‘হাবিবুর কোনোদিন ব্যবসা করেননি, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। তার দুই ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং তারা বাবা,মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী গলাচিপায় বসবাস করে। পুলিশকে বিষয়টি বলা হয়েছিল কিন্তু, তারা শোনেনি।’

এ দিকে নিরাপরাধ বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে জেলে পাঠানোর পর তার সন্তানরা ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে এসে কোর্টের কাগজ পত্র উঠানোর পর দেখেন শুধূ মাত্র নামের মিল থাকার কারনে অন্য লোকের পরিবর্তে তাদের বাবাকে কারাগারে পাঠিয়েছে গলাচিপা পুলিশ।পরবর্তিতে তারা কাগজপত্র নিয়ে গলাচিপা থানায় গেলে প্রকৃত বিষয়টি উন্মোচিত হয়।


এ বিষয়ে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন, আদালত থেকে একটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়নায় ব্যাক্তির নাম ও বাবার নাম একই থাকায় গ্রেফতার করি। তবে পরিবারের লোকজন নথি উঠানোর পরে সেখানে দেখা গিয়েছে নাহার গার্মেন্টসের নাম রয়েছে ,নাহার গার্মেন্টেসের ঠিকানায় খোজ নিয়ে গতকাল মূল হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তিনি তার সাথে ব্রাক ব্যাংকের লেনদেন ও মামলার কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে, নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরল ইসলাম বলেন, ‘আসামির নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেপ্তার করে।প্রকৃত বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আসল ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে গতকাল। ইতোমধ্যে আমরা সংশোধন করে আদালতে চিঠি পাঠিয়েছি ।



 

Show all comments
  • মোঃ দুলাল মিয়া ১২ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    সাত দিনে সাতলক্ষ টাকা দেয়া হউক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ