Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙনে ওদের চরম দুর্দিন

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নদ-নদীর পানি কমে কুড়িগ্রামে ৫ম দফা বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও দুর্ভোগ রয়েছে বন্যায় কবলিত নিম্নাঞ্চল ও চরের মানুষজনের।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানির কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনে গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙা, যাত্রাপুর ও মোগলবাসায় ৩৪৩টি বসতভিটা ধরলা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় জেলার ৪৩১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় জেলার ১৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। কর্মহীন লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে তাদের ঘরে চলছে চরম খাদ্যসঙ্কট। নদী ভাঙনে গৃহহীন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা খাদ্য সহায়তার আশায় ভিড় করছে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে। তাদেরকে নিয়ে জনপ্রতিনিধিরাও ভীষণ চিন্তিত।
পঞ্চম দফা বন্যায় জেলায় ৬০ হাজার মানুষ পানির সাথে যুদ্ধকরে বেঁচে আছে। নিম্নাঞ্চলের ডুবে থাকা বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষগুলোর এখনও দুর্ভোগ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহে তার ইউনিয়নের ধরলা নদীর করাল গ্রাসে জগমহনের চর এলাকার ১০৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে ইউনিয়নের নন্দদুলালের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়। বন্যায় দুই হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ দফতর থেকে এক মেট্রিকটন চাল পেয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে তিনি জানান। নদী ভাঙনে গৃহহীন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পাবার আশায় তার বাড়িতে ভির করছে। তাদেরকে নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী জানান, গত এক সপ্তাহে তার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদেরর করাল গ্রাসে পোরারচর, ভগবতীপুর, শিবেরপাচি, খাসেরচর, বলদিপাড়া, পার্বতীপুর এলাকার ৯০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে একটি চাহিদাপত্র দিয়েছেন। তবে বরাদ্দ পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরজামাল বাবলু জানান, গত এক সপ্তাহে তার ইউনিয়নের ধরলার করাল গ্রাসে মালভাঙা, পল্লীগ্রাম, চরকৃষ্ণপুর এলাকার ১৪৪টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন পরিবারগুলোকে কোথায় আশ্রয় দিবেন এ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এবারে বন্যায় জেলায় ৪৩১টি পুকুরের প্রায় ১০০ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন মাছ বের হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা। অবকাঠামো ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ টাকা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, নদীর পানি কমা-বাড়া করলেও বড় ধরণের বন্যার কোন আশংকা নেই। নদী ভাঙন রোধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এবারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৮৫ মে.টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গোখাদ্য বাবদ ৪ লাখটাকা ও শিশু খাদ্য বাবদ ১লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ