Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাহিজা ইন ভদ্র আউট

ডাক অধিদফতরের ডিজি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাটের দায়ে অভিযুক্ত ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সুধাংশু শেখর ভদ্রকে (এসএস ভদ্র) অবেশে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (হিসাব ও সংস্থাপন) বাহিজা আক্তারকে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তিনি হিসাব ও সংস্থাপন পদের দায়িত্ব পালনসহ মহাপরিচালক হিসেবে দৈনন্দিন আর্থিক ও প্রশাসনিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সুধাংশু শেখর ভদ্রকে ১২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে উপ-সচিব এস.এম.তারিকের স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মহাপরিচালকের পদ থেকে এসএস ভদ্রকে অপসারণের সুপারিশ করে। প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, করোনা পজেটিভ গোপন করে গণভবনে প্রবেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছাকাছি চলে যাওয়াসহ বহু অভিযোগে অভিযুক্ত এসএস ভদ্র।

বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, কেনাকাটার নামে অপ্রয়োজনীয়ভাবে সরকারি অর্থ অপচয়, একের পর এক ভবন নির্মাণের নামে কমিশন হাতিয়ে নেয়া, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মঘাতী সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর, কুরিয়ার সার্ভিসকে পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দান, ঐতিহ্যবাহী ডাক বিভাগে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে ভদ্রের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে প্রথম দৈনিক ইনকিলাব ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর ভিত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ভদ্রের দুর্নীতি এবং প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পায়। অন্যদিকে ইনকিলাবের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসএস ভদ্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তাকে এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

অনুসন্ধান চলাকালেই গত ১৪ আগস্ট কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট গোপন করে গণভবনে গমণ করেন ভদ্র। এ বিষয়েও দৈনিক ইনকিলাব ১৭ আগস্ট সবার আগে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে ঘটনাটি ভাইরাল হয়। টেলিভিশনসহ প্রায় সব সংবাদ মাধ্যম এসএস ভদ্রের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ পরিপেক্ষিতেই ভদ্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাকে অপসারণের পক্ষে সুপারিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
এদিকে ডাক বিভাগে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী এসএস ভদ্রের আপাত: বিদায়ের খবরে স্বস্তি নেমে আসে ডাক অধিদফতরে। সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচরীদের মাঝে নেমে আসে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। তবে ভদ্রের পাহাড়সম দুর্নীতির সহযোগী এবং বিভিন্ন প্রকল্পে পরিচালক, উপ-পরিচালক, কেনাকাটার কারিগরি কমিটি, মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা।

তিন সপ্তাহ ধরে ভদ্র অফিস করছিলেন না। এতে ডাক অধিদফতরে নেমে আসে এক প্রকার অচলাবস্থা। ভদ্রের দুর্নীতির সহযোগী, অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রচার করতে থাকেন-আরও ৩ বছরের চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভদ্র পূর্ণ ক্ষমতা এবং মর্যাদা নিয়ে ডাক অধিদফতরে ফিরে আসবেন। কিন্তু গতকালের প্রজ্ঞাপনে সেই আশার গুড়ে বালি পড়ে। এছাড়া ভদ্রের দুর্নীতির সহযোগীদের মাঝে নেমে আসে আতঙ্কও। একে একে তাদের দুর্নীতিও প্রকাশ পেতে পারে এ ভয়ে আছেন তারা।



 

Show all comments
  • নয়ন ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহেই ভালো জানেন ইনি আবার কি করেন
    Total Reply(0) Reply
  • শাহীনুর ইসলাম ভদ্র ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৫২ এএম says : 0
    সাহেবের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alamin ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৫২ এএম says : 0
    সবই বুজলাম কিন্তু আমাদের টাকা যে চুরি করলো সে টাকা কি ফেরত দিবেনা
    Total Reply(0) Reply
  • তফসির আলম ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১০:১০ এএম says : 0
    ভদ্রের কঠিন বিচার না হলে পরবর্তীতে যারা ওই আসনে বসবে তারাও একই কাজ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • কাওছার আহমেদ ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১০:১১ এএম says : 0
    অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ কড়াই দৈনিক ইনকিলাবকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি
    Total Reply(0) Reply
  • habib ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১০:২৩ এএম says : 0
    without justice free him and he is a offender....what else ?
    Total Reply(0) Reply
  • HM Alamgir ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৭:০৩ পিএম says : 0
    শুধু ছুটিতে পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, না আরো কিছু হবে? আত্মসাৎ করা অর্থ ও অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদের কি হবে;। একই সাথে তাঁর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তার ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ