Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও করোনা

| প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

ভয়াবহ মহামারী সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। কারণ এটি অত্যন্ত চোঁয়াছে ভাইরাস যা এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়েছেন তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস ক্যান্সার সৃষ্টি করে এমনটা এখনও জানা জায়নি, তবে এমন কিছু ভাইরাস আছে যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সৃস্টি করে থাকে। এসব ভাইরাস স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সার কোষে পরিবর্তন করতে সক্ষম। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন।


হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ এবং টাইপ-১৮ ওরোফ্যারিনজিয়াল (গলা) ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মুখের ক্যান্সার প্রধানত টনসিল, জিহ্বা এবং ওরোফ্যারিংসে হয়ে থাকে। মুখের স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস একটি বড় ঝুঁকি। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে শুধুমাত্র মুখের ক্যান্সার নয় বরং সারভাইক্যাল ক্যান্সারও হতে পারে। সারভাইক্যাল ক্যান্সার আরম্ভ হয় মহিলাদের সার্ভিক্স এর কোষের মধ্যে অর্থাৎ ইউটেরাস এর নীচের অংশ যা সংযুক্ত হয় স্ত্রী যৌনাঙ্গের সাথে। প্রাথমিক অবস্থায় সারভাইক্যাল ক্যান্সার ধরা পড়লে ক্যান্সার ভাল করা সম্ভব। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ এবং টাইপ-১৮ শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে সারভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এছাড়া হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস দ্বারা পায়ুপথ, পুরুষ এবং স্ত্রী যৌনাঙ্গ এবং ওরোফ্যারিংস এর ক্যান্সার হতে পারে।

তবে আশার কথা হলো হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে গার্ডাসিল এবং সার্ভারিক্স নামক টিকা প্রদান করা যায়। সার্ভারিক্স টিকা দেওয়া হয় হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ এবং টাইপ-১৮ এর সংক্রমনের বিরুদ্ধে যা শতকরা ৭০ ভাগ সারভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তবে টিকা নিতে হবে যে কোনো মানুষের যৌন জীবন শুরু করার পূর্বে। প্রায় ৪০ ধরণের হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস যৌন মিলনের সময় সংক্রমিত হতে পারে। যৌন মিলনের সময় সংক্রমিত ভাইরাস মুখে জেনিটাল ওয়ার্টস বা গোটা সৃষ্টি করে থাকে। তাই হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে বিকৃত যৌনাচার থেকে দূরে থাকুন। পশ্চিমা সংস্কৃতির ওরাল সেক্স পরিহার করুণ। মুখে কোনো গোটা বা অস্বাভাবিক পিন্ড দেখা গেলে দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। এপস্টেনবার ভাইরাসের কারণে বারকিটস্ লিম্ফোমা হতে পারে। বারকিটস্ লিম্ফোমা এক ধরণের নন হজকিনস্ লিম্ফোমা যেখানে ক্যান্সার শুরু হয় ইমমিউন বি’সেল থেকে। বারকিটস্ লিম্ফোমা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। এপস্টেনবার ভাইরাসের কারণে এপিথেলিয়াল ম্যালিগন্যান্সি অর্থাৎ ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। আপনার শরীরে এইচ.আই.ভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে আপনার ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এইচ.আই.ভি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলে। যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত দূর্বল থাকে তাই হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ দ্রুত বংশ বিস্তার করে। এই হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। এই ক্যান্সারের মাধ্যমে এইডস্ রোগী সনাক্ত করা যায়।

ভাইরাস কখনই খালি চোখে দেখা যায় না। তবে আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছু নিয়মকানুন পালন করলে অবশ্যই কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে যেমনি আমরা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখি। শুধু করোনা ভাইরাস নয় বরং সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলে হেপাটাইটিস ভাইরাস সহ বিভিন্ন ধরণের আরও কিছু জীবানু থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। ধর্মের নিয়ম মেনে সুস্থ যৌনাচারও আমাদের অনেক রোগ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্যান্সার

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন