Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রতিবাদে মুখর প্রেসক্লাব এলাকা

ধর্ষণ-নিপীড়ন, লংমার্চে হামলায় বিভিন্ন দলের প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ধর্ষণের প্রতিবাদের মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানান কর্মসূচি পালন করে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে নোয়াখালীমুখি লংমার্চের ওপর ফেনিতে ছাত্রলীগের হামলারও প্রতিবাদ করে কয়েকটি বাম দল।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকটি সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলছেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী-শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা বাড়ছে। একই কারণে বাড়ছে হত্যা-গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা আরো বলছেন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড দিয়ে দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর করা। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করা যেতে পারে।
দেশে নারী-শিশুর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাৎকার ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজনৈতিক দল গণফোরামের একাংশের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা এই কর্মস‚চি পালন করেন।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, দেশে এক নৈরাজ্যের অপশাসন চলছে। ধর্ষণের হাজারো রূপ দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন হচ্ছে। দুর্নীতি কত প্রকার ও কি কি, তা বাংলাদেশে সব দেখা যাচ্ছে। এই অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর জন্য গণজাগরণের বিকল্প নেই। বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ‘ঘুণে ধরা’ মন্তব্য করে গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ধর্ষণ-খুন-গুমের মাধ্যমে এই রাষ্ট্র ঘুণে ধরেছে। এর গোড়ায় যেতে হবে।
মানববন্ধনে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার, মহিউদ্দিন আহমেদ, লতিফুল বারী হামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন থেকে গণফোরামের এই অংশের নেতারা ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি আর্থিক দন্ডের বিধান যুক্ত করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করা, ভিকটিমের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ধর্ষণসহ সব মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ম‚ল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সদস্যরা। দেশে শিশু হত্যা, নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে উল্লেখ করে খেলাঘরের সদস্যরা বলেন, এসব অপরাধ দমনে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও দ্রুত রায় কার্যকর করার পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ যদি আতঙ্কের হয়, তবে তাদের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হবে। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন হয়। কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা বলেন, যেখানেই শিশুর ওপর অত্যাচার, শিশুর অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়, সেখানেই খেলাঘর প্রতিবাদ জানায়। সারা দেশে শিশু হত্যা বাড়ছে, শিশুর প্রতি পাশবিক নির্যাতন বাড়ছে। এসব ঘটনায় খেলাঘর উৎকণ্ঠিত। মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুজ্জামান শহীদ সভাপতিত্ব করেন।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, গণদল, বাংলাদেশ ন্যাপসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এক বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, হামলা করে জনতার কণ্ঠরোধ করা যাবে না। জোটের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ ক্কাফী বলেন, সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে বাক স্বাধীনতা হরণ করে এখন ধর্ষকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও প্রচারাভিযান করে ফেনী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লংমার্চে সন্ত্রাসী হামলা ন্যাক্কারজনক। মানুষের সভা-সমাবেশের অধিকার হরণ করে, হামলা-মামলা করে শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে তারই যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে হামলাকারীরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলা একটি কালো নজির। তারা ফেনী শহরের শান্তি কোম্পানি মোড় এলাকায় হামলা চালায়। এটি সরকারের এক কান্ডজ্ঞানহীন উন্মত্ততা।
বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল গণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা করে বলেন, এমন ঘটনা ধর্ষকদের আরো উৎসাহী করে তুলবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল-কাদরী জয় বলেন, ফেনীতে সমাবেশ শেষে নোয়াখালীর উদ্দেশে বাসে ওঠার সময় লাঠিসোটা ও ইট নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজাগরণ তৈরির লক্ষ্যে নোয়াখালীর পথে লংমার্চে হামলার ঘটনায় আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ-নিপীড়ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ